ক্রিকেটার হলেও আর্কিটেক্ট হিসেবে এখনও কাজ করে চলেছেন। অবসর নেওয়ার পরে তামিল সিনেমার পরিচালক হতে চান। ভারতীয় দলের কোচ গৌতম গম্ভীর ও অধিনায়ক রোহিত শর্মার একটি সিদ্ধান্ত জীবন পাল্টে দিয়েছে রহস্য-স্পিনারের। কলকাতা নাইট রাইডার্স জার্সিতে তাঁর যাত্রা থেকে টেস্ট ক্রিকেটে ভবিষ্যৎ, সব কিছু নিয়েই আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন সি ভি বরুণ।
প্রশ্ন: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রাথমিক দলে আপনি ছিলেন না। ভারতীয় দলের কোচ ও অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত আপনার উপরে ভরসা রেখেছিলেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে আপনাকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কি জীবন পাল্টে দিল?
সি ভি বরুণ: গম্ভীর স্যর ও রোহিত ভাই আমার উপরে বিশ্বাস রেখেছিলেন। কয়েক জনের সঙ্গে সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, দু’জনেই আমাকে ভারতীয় দলে চেয়েছিলেন। বলতে পারেন, তাঁদের এই আস্থা আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে। ভারতীয় দলের হয়ে আইসিসি ট্রফি জেতার স্বপ্ন দেখতাম। সেটা পূরণ করতে পেরেছি। এই সাফল্য আমি অর্জন করতে পেরেছি ওঁরা আস্থা রেখেছিলেন বলে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এই সাফল্য ক্রিকেটার হিসেবে আমাকে অনেক উন্নত করেছে।
প্র: গত বছরের চ্যাম্পিয়ন কেকেআর। এই বছর নিলাম থেকে নতুন একটি দল গড়ে তোলা হয়েছে। আপনি কতটা আশাবাদী এই বছরের দল নিয়ে?
বরুণ: প্রচণ্ড আশাবাদী। দলের ভারসাম্য তৈরি হয় নিলামের টেবিল থেকেই। আমার মনে হয়, এ বারের নিলামে আমরা ভাল দল গড়েছি। আরও চার-পাঁচটি ম্যাচের পরে বোঝা যাবে দলের ভারসাম্য কেমন। এই দল নিয়ে ট্রফি জেতার আশা করাই যায়।
প্র: ইডেনের পিচ নিয়ে আপনার কী মত? গত ম্যাচে স্পিনাররা সাহায্য পেয়েছেন। এই ম্যাচেও শোনা যাচ্ছে পিচ মন্থরই থাকবে। আপনি পিচটা কী রকম দেখলেন?
বরুণ: পিচ কেমন হওয়া উচিত, এই বিষয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। গত ম্যাচের পিচেও অনায়াসে ২০০ রান উঠতে পারত। তবে ইডেনে আগে যেমন পিচ হত, শেষ ম্যাচের পিচ তেমন ছিল না। অনেকটাই মন্থর ছিল। স্পিনাররা কিছুটা সাহায্য পাচ্ছিল। কিন্তু পুরোপুরি ঘূর্ণি পিচ নয়। আমরা যে কোনও পিচেই খেলতে তৈরি।
প্র: কেকেআর ছাড়া আর কোনও দলকে দেখে কখনও মনে হয়েছিল যে তারাও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবিদার?
বরুণ: ২০২১-’২২ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ানসকে দেখে মনে হত ওদের হারানো সম্ভব নয়। খাতায়-কলমে অসাধারণ দল ছিল। একটি দলে যা যা থাকার দরকার, ওদের সব কিছু ছিল। আমার মনে হয়, সেটাই আইপিএলের সেরা দল ছিল।
প্র: আপনার ক্রিকেটজীবনের সেরা তিনটি উইকেট বেছে নিতে বলা হলে কোন তিনটি বেছে নেবেন?
বরুণ: গত বছর খুব ভাল মরসুম গিয়েছিল। আমদাবাদে প্রথম কোয়ালিফায়ারে হেনরিখ ক্লাসেনের উইকেটটি এক নম্বরে রাখব। তার পরেই থাকবে রোহিত শর্মার উইকেট। গত বছরই রোহিত ভাইকে আউট করেছিলাম। তিন নম্বরে রাখব বিরাট কোহলির উইকেট। দু-তিন বছর আগে বিরাট ভাইকে আউট করেছিলাম।
প্র: কোনও ব্যাটসম্যানকে দেখে মনে হয়েছে তাঁকে আউট করা সহজ নয়?
বরুণ: ক্রিস গেল।
প্র: কেন?
বরুণ: গেল প্রচণ্ড শক্তিশালী। ওর মতো ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে বল করা খুব কঠিন। ও এমনই এক জন ব্যাটসম্যান যে ভাল বলও মাঠেরবাইরে পাঠিয়ে দিতে পারে।
প্র: ম্যাচের আগে কী ভাবে নিজেকে তৈরি করেন?
বরুণ: আমাদের কাছে একটি অ্যাপ আছে। যেখানে প্রত্যেক ব্যাটসম্যান ও বোলারের ভিডিয়ো দেখতে পাওয়া যায়। সেই অ্যাপে বিভিন্ন ব্যাটসম্যানের শক্তি ও দুর্বলতাও আমরা নিয়মিত দেখি। তারা কোন শট ভাল খেলে, বোঝার চেষ্টা করি। নতুন কোনও শট খেলছে কি না, অ্যানিলিস্টের কাছে জেনে নিই। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হয় আমাদের।
প্র: মনে হয় না একটু দেরি করে ক্রিকেট শুরু করলেন?
বরুণ: একটু আফসোস তো হয়ই। তবে আমি ক্রিকেটজীবনের একদম গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি। এখনও ১০ বছর টানা খেলে যেতে পারব।
প্র: আপনি তো আর্কিটেক্ট। কখনও কি সেই কাজও করতে হয়?
বরুণ: হ্যাঁ। আমার নিজস্ব সংস্থা আছে। সেখানে কাছের বন্ধুদের নিয়ে কাজ করি। তারাই দেখাশোনা করে। আমি ডিজ়াইন তৈরি করে দিই। ওরা সাইট-এ গিয়ে সেই ডিজ়াইন অনুযায়ীকাজটি করে।
প্র: আপনি তো তামিল সিনেমার ভক্ত। অভিনয়ও করেছেন। কখনও মনে হয় ক্রিকেট ছাড়ার পরে তামিল সিনেমার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করবেন?
বরুণ: অভিনয় করার ইচ্ছে নেই। তবে আমি একটি তামিল সিনেমার পরিচালক হিসেবে কাজ করতে চাই।
প্র: লাল বলের ক্রিকেটে আপনাকে খেলতে দেখা যায় না। এখনও পর্যন্ত একটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। টেস্ট খেলার স্বপ্ন কি দেখেন না?
বরুণ: আমি টানা ১২-১৫ ওভার বল করে দিতে পারব। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে দিনে ৩০-৪০ ওভারও বল করতে হতে পারে। আমি যে ধরনের বোলার, তাতে দিনে ৪০ ওভার বল করা সম্ভব নয়। আমি কিছুটা পেসারদের মতো।
প্র: শাহরুখ খান দলের কর্ণধার। তাঁর উপস্থিতি কতটা উদ্বুদ্ধ করে?
বরুণ: শাহরুখের মতো কর্ণধারকে পেয়ে আমরা ভাগ্যবান। ওঁর ক্রিকেট জ্ঞান আমাকে বিস্মিত করে। দলের যে কোনও ক্রিকেটারকে কী ভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হয় এসআরকে জানেন। ওঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেই হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া যায়।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)