(বাঁদিকে) জনি বেয়ারস্টো, ডন ব্যাডম্যান (ডান দিকে) । ১৯৩২-৩৩ সালের বডিলাইন সিরিজ অ্যাশেজ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ
বডিলাইন সিরিজের ৯০ বছর এ বার। কুখ্যাত বলেই উদ্যাপনের কোনও ব্যাপার নেই। কিন্তু ১৯৩২-৩৩ সালের অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড অ্যাশেজ সিরিজের উন্মাদনা ফিরে এল আবার। উৎসবের প্রস্তুতি না থাকা সত্ত্বেও সেই অ্যাশেজের উত্তেজনা আরও এক বার তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে ক্রিকেটবিশ্ব। সে বারের যুদ্ধক্ষেত্র ছিল অস্ট্রেলিয়া, এ বার ইংল্যান্ড। তফাত শুধু এটুকুই। না হলে সে বারের মতো এ বারও দুই শিবিরের বাগ্যুদ্ধ ক্রিকেটারদের গণ্ডি ছাড়িয়ে সাংবাদিক, রাজনীতিকদের মধ্যে ছড়িয়ে গিয়েছে। তলানিতে এসে ঠেকেছে দু’দেশের কূটনীতিক সম্পর্কও।
৯০ বছর আগে ডন ব্র্যাডম্যানকে আটকাতে ইংরেজ অধিনায়ক ডগলাস জার্ডিন কাজে লাগিয়েছিলেন দুই জোরে বোলার হ্যারল্ড লারউড এবং বিল ভোসকে। মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন, উল্টো দিকের খর্বকায় লোকটাতে শুধু তাঁর শরীর লক্ষ্য করে বল করে যেতে হবে। জার্ডিনের এই ‘বডিলাইন’ বোলিং নিয়ে ঢিঢি পড়ে গিয়েছিল বিশ্ব জুড়ে। এ বার বিতর্কের সূত্রপাত ইংরেজ উইকেটরক্ষক জনি বেয়ারস্টোর রান আউট হওয়া নিয়ে। গত রবিবার লর্ডসে পঞ্চম দিনের খেলা ছিল। প্রথম সেশনে প্রথমে আউট হয়েছিলেন বেন ডাকেট। ইংরেজ ওপেনার ৮৩ রান করে আউট হয়েছিলেন। ব্যাট করতে নেমেছিলেন বেয়ারস্টো। তাঁর সঙ্গে স্টোকসের জুটির দিকেই তাকিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু ক্যামেরন গ্রিনের বাউন্সার থেকে মাথা বাঁচিয়ে নেওয়ার পর বেয়ারস্টো ভুলেই গিয়েছিলেন বল কোথায়। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। অসি উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারে সঙ্গে সঙ্গে বল ছুড়ে উইকেট ভেঙে দিয়েছিলেন। রান আউট হয়েছিলেন বেয়ারস্টো। এরপর থেকেই উত্তপ্ত দুই শিবির। ইংরেজ প্রধানমন্ত্রী পাশে দাঁড়িয়েছেন ইংল্যান্ড দলের। তাঁকে পাল্টা দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ। ফুটছে দু’দেশ। আগামী ৬ জুলাই থেকে হেডিংলেতে তৃতীয় টেস্টে খেলতে নামবে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। লর্ডসের উত্তাপ সেখানেও ছড়ায় কি না, সে দিকেই চোখ থাকবে ক্রিকেট দুনিয়ার।
বাগ্যুদ্ধে দুই অধিনায়ক
ম্যাচ শেষে ইংরেজ অধিনায়ক বেন স্টোকস বলেন, “আমি ওই ভাবে ম্যাচ জিততে রাজি নই। ওটা আউট ছিল, সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে আমি যদি অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়ক হতাম, তাহলে আম্পায়ারের উপর আরও বেশি চাপ দিয়ে জিজ্ঞেস করতাম যে, ওভার হয়েছে কি না। কিন্তু এটা ক্রিকেটের নীতির বিরুদ্ধে। আমি এটা করতাম না। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ওটা ম্যাচ জেতানো মুহূর্ত। কিন্তু আমি কি ওই ভাবে ম্যাচ জিততে রাজি? আমার উত্তর, না।” অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমার মনে হয় অ্যালেক্স ক্যারে কয়েক বল আগে থেকেই লক্ষ্য করে যে, বেয়ারস্টো বার বার ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। ওই বলে কোথাও খেলা থামেনি। অর্থাৎ ‘ডেড বল’ হয়নি। বল উইকেটরক্ষকের হাতে গিয়েছে এবং সে সেটা ছুড়ে উইকেট ভেঙেছে। আমার কাছে সেটা একেবারেই ক্রিকেটের নীতি মেনেই হয়েছে। স্বচ্ছ ভাবে খেলা হয়েছে। নিয়ম মেনে খেলা হয়েছে। কেউ কেউ হয়তো মানবেন না। শনিবারের ক্যাচটিও যেমন অনেকে মানতে চাননি। আমি সে ভাবেই দেখছি।”
খোঁচা ইংরেজ কোচ ম্যাকালামের
অস্ট্রেলিয়াকে খোঁচা মেরেছেন ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এখন তাঁদের সম্পর্ক খুব একটা ভাল জায়গায় নেই বলেই জানিয়েছেন ম্যাকালাম। লর্ডস টেস্ট লড়াইয়ের উত্তাপ আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। ম্যাকালাম বলেন, ‘‘এখন তো অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের সঙ্গে বসে খোশগল্পের কথা ভাবতেই পারছি না। কারণ, এই টেস্টে ক্রিকেটীয় স্পিরিট ভেঙেছে ওরা। অস্ট্রেলিয়া চাইলে সেটা না করলেও পারত। এর ফলে হয়তো ওরা ম্যাচ জিতেছে, কিন্তু ক্রিকেট দুনিয়ার চোখে ছোট হয়ে গিয়েছে।’’ সিরিজ়ে ফিরতে মরিয়া তিনি। লন্ডনে চলছে উইম্বলডন। টেনিসের আবহে ইংরেজ কোচের কাছে অ্যাশেজও এখন ঠিক যেন টেনিসের একটি ম্যাচ। তার মধ্যে প্রথম দুই সেটে হেরেছেন তাঁরা। পরের তিনটি সেট জিততে হবে। সেই লক্ষ্যেই স্টোকসদের এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি। ম্যাকালাম বলেন, ‘‘প্রথম দু’সেট হেরেছি। কিন্তু এখনও তিনটে সেট আছে আমাদের কাছে। পরের তিন টেস্ট জিততে পারলেই অ্যাশেজ জিতে যাব। আপাতত সে দিকেই লক্ষ্য আমাদের।’’
আইন কী বলছে
আইসিসি-র আইনের ২০.১.২ ধারা অনুযায়ী বেয়ারস্টো আউট ছিলেন, কারণ আম্পায়ার তখনও বল ‘ডেড’ ঘোষণা করেননি। যে আইন বলছে, ‘‘বোলার প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা আম্পায়ার যখন নিশ্চিত হবেন যে, ফিল্ডিং দল এবং দুই ব্যাটার ধরে নিয়েছে, খেলা থেমে গিয়েছে, তখনই বলকে ডেড ঘোষণা করা হবে।’’
সভ্যতার বেড়া ভাঙল লং রুম
লর্ডসের লং রুমকে ক্রিকেট ঐতিহ্যের শেষ কথা বলা হয়। এমসিসি-র হোমরাচোমরারা এখানে বসে খেলা দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেন। ক্রিকেটারদের সাজঘরে ফিরতে বা সাজঘর থেকে নামতে হলে লং রুমের ভিতর দিয়ে করতে হয়। মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের আক্ষরিক অর্থে সভ্যরা কোনও দিনই ব্র্যাডম্যান, বর্ডার, বয়কট, ব্রিয়ারলিদের এত কাছে পেয়েও আদেখলাপনা দেখাননি। এখনও স্টোকস, স্মিথদের পেয়ে দেখান না। কিন্তু এ বার যে বডিলাইন সিরিজের দ্বিতীয় সংস্করণ। বেয়ারস্টোর আউট মেনে নিতে পারেননি সভ্য ইংরেজরা। অভিযোগ, লং রুম দিয়ে অস্ট্রেলিয়া দল যখন ফিরছিল, তখন চিৎকার করে তাঁদের ‘চোর, প্রতারক’ ইত্যাদি সম্বোধনে ডাকতে থাকেন ইংরেজ সমর্থকেরা। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা প্রথমে তাতে বিশেষ পাত্তা দেননি। কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে উঠে লং রুমে ঢোকার পরেই বিপত্তি ঘটে। সেখানে এমসিসি-র যে সব সদস্য ছিলেন তাঁদের মধ্যে কয়েক জন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের উদ্দেশে আরও কিছু বলেন। ওয়ার্নার এবং খোয়াজা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। তাঁরা পাল্টা দেন। শুরু হয়ে যায় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। ঝামেলা থামাতে এগিয়ে আসতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। তাঁরা ওয়ার্নার, খোয়াজাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। ওই সমর্থকদের থেকে তাঁদের দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
তদন্ত দাবি অস্ট্রেলিয়ার
চুপ করে থাকেনি অস্ট্রেলিয়া। একটুও সময় নষ্ট না করে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড এই ঘটনার তদন্তের দাবি করে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একটি বিবৃতিতে জানায়, ‘‘লর্ডস টেস্টের পঞ্চম দিন লং রুমে দর্শকদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের যে বিবাদ হয়েছে তার নিন্দা করছি আমরা। মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের কাছে আবেদন করছি, ঘটনার তদন্ত করা হোক। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের হেনস্থা করা হয়েছে। ধাক্কা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’
সুর নরম ইংল্যান্ডের
এই ঘটনার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তখনই জানিয়েছিল এমসিসি। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছিল তারা। একটি বিবৃতিতে এমসিসি বলেছিল, ‘‘লং রুম লর্ডসের ঐতিহ্য। পঞ্চম দিন সকালের পর থেকে মাঠের উত্তাপ গ্যালারিতে ছড়িয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এমসিসি-র কয়েক জন সদস্য অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। তার জন্য আমরা অস্ট্রেলিয়া দলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
নির্বাসিত তিন ইংরেজ সমর্থক
পদক্ষেপ করল এমসিসি (মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব)। তাদের তিন সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত লর্ডসে ঢুকতে পারবেন না ওই তিন সমর্থক। এমসিসি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘লর্ডসের ঘটনায় তিন সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের বরখাস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, এখন লর্ডসে ঢুকতে পারবেন না ওই তিন সমর্থক। তদন্ত শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’’ মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের চিফ এগজিকিউটিভ গায় ল্যাভেন্ডার জানিয়েছেন, লর্ডসের মতো ঐতিহ্যশালী স্টেডিয়ামে কোনও ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।
পাশে নেই তিন প্রাক্তন অধিনায়ক
বেয়ারস্টোর আউট নিয়ে ইংল্যান্ড দলের পাশে নেই সে দেশের তিন প্রাক্তন অধিনায়ক। অ্যান্ড্রু স্ট্রস বলেছেন, ‘‘ক্যারি বল ধরার সঙ্গে সঙ্গে ছুড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে কোনও পূর্ব পরিকল্পনা নেই। বেয়ারস্টো ক্রিজ়ের বাইরে বেরিয়ে ভুল করেছে। অস্ট্রেলিয়া যা করেছে, তাতে কোনও ভুল নেই।’’ স্টোকসের বক্তব্য মানতে চাননি আর এক প্রাক্তন অধিনায়ক অইন মর্গ্যানও। তিনি বলেছেন, ‘‘ক্রিকেটীয় নীতি ভঙ্গ হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। বেয়ারস্টো আগের দুটো বল খেলেও একই কাজ করেছিল। ব্যাট করার সময় ও নিজের খেয়ালে থাকে।’’ আর এক প্রাক্তন ইংরেজ অধিনায়ক মাইক আথারটনও স্টোকসদের পাশে দাঁড়াননি। তিনি বলেছেন, ‘‘অভিযোগ করার মতো ইংল্যান্ডের কিছুই নেই। বেয়ারস্টোকে দেখে মনে হচ্ছিল ও ঝিমোচ্ছিল।’’
পাশে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক পাশে দাঁড়িয়েছেন স্টোকসের। তাঁর এক মুখপাত্র বলেছেন, স্টোকস যা বলছে, তার সঙ্গে একমত প্রধানমন্ত্রী।
পাল্টা অসি প্রধানমন্ত্রীর
সুনকের মন প্রকাশ্যে আসার পরেই অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ টুইট করেছেন। লিখেছেন, ‘‘আমাদের পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেট দলকে নিয়ে আমি গর্বিত। দুই দলই অ্যাশেজের প্রথম দুটো ম্যাচ জিতেছে। সেই পুরনো অসি— সব সময় জিতছে।’’ এর পরেই তিনি লেখেন, ‘‘প্যাট কামিন্সদের পাশে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। জিতে ওরা দেশে ফিরুক। আমরা স্বাগত জানানোর জন্য তৈরি।’’
I’m proud of our men’s and women’s cricket teams, who have both won their opening two #Ashes matches against England.
— Anthony Albanese (@AlboMP) July 3, 2023
Same old Aussies – always winning!
Australia is right behind @ahealy77, @patcummins30 and their teams and look forward to welcoming them home victorious
আইনকে বুড়ো আঙুল
ম্যাকালাম আইন মানার কথা বললেও বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি দরকারে আইনকে বুড়ো আঙুলও দেখাতে পারেন। ইংল্যান্ডের কোচ বলেন, ‘‘একেবারে আইন মেনে চললে বলতে হবে যে জনি আউট। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, জনি রান নিতে দৌড়য়নি। আবার আম্পায়াররাও ওভার শেষ জানিয়েছিলেন। এই রকম জিনিস হজম করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে যখন জেতা-হারার পার্থক্যটা খুব কম হয়। মনে হয় না, ওদের সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি আড্ডা মারতে পারব বলে।’’
ইংরেজ সাংবাদিকদের খোঁচা
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে সাংবাদিক বৈঠকে কঠিন প্রশ্নের মুখে ফেলার চেষ্টা করেছেন ইংরেজ সাংবাদিকেরা। অস্ট্রেলিয়া দলের দাবি, নিয়মের মধ্যে থেকেই বেয়ারস্টোকে আউট করেছেন তাঁরা। সাংবাদিক বৈঠকে কামিন্সকে এক ইংরেজ সাংবাদিক সেই নিয়মের দোহাই দিয়ে খোঁচা মারেন। প্রশ্ন করেন, ‘‘এর পর তা হলে কি আন্ডার আর্ম (হাত না ঘুরিয়ে বল ছোড়া) বল করবেন আপনারা? না কি মাঁকড়ীয় (বল করার সময় নন-স্ট্রাইকার ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গেলে বোলারের হাতে রান আউট) আউট করবেন?’’ অস্ট্রেলীয়দের দাবি, নিয়মের মধ্যে থেকেই বেয়ারস্টোকে আউট করেছেন তাঁরা। সাংবাদিক বৈঠকে কামিন্সকে এক ইংরেজ সাংবাদিক সেই নিয়মের দোহাই দিয়ে খোঁচা মারেন। প্রশ্ন করেন, ‘‘এর পর তা হলে কি আন্ডার আর্ম (হাত না ঘুরিয়ে বল ছোড়া) বল করবেন আপনারা? না কি মাঁকড়ীয় (বল করার সময় নন-স্ট্রাইকার ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গেলে বোলারের হাতে রান আউট) আউট করবেন?’’ আসলে নিয়মে থাকলেও ‘আন্ডার আর্ম’ বল করে অতীতে বিতর্কে জড়িয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৯৮১ সালে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার এক দিনের ম্যাচে এই বিতর্ক হয়। জেতার জন্য শেষ বলে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ৬ রান। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক গ্রেগ চ্যাপেলের নির্দেশে তাঁর ভাই ট্রেভর চ্যাপেল ‘আন্ডার আর্ম’ বল করেন। ফলে নিউ জ়িল্যান্ডের ব্যাটার ব্রায়ান ম্যাকেশনি সেই বলে বড় শট মারতে পারেননি। ম্যাচ জিতে যায় অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক চ্যাপেলের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। মাঁকড়ীয় আউটের সঙ্গেও যুক্ত ইংল্যান্ড। আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলার সময় ইংল্যান্ডের ব্যাটার জশ বাটলার ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় তাঁকে আউট করেন পঞ্জাব কিংসের স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। সেই ঘটনা নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। পরে অবশ্য মাঁকড়ীয় আউটকে ক্রিকেটের নিয়মে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও খেলার স্পিরিটের কথা মাথায় রেখে অনেক বোলার এ ভাবে আউট করতে চান না।
পাল্টা কামিন্সের
ইংরেজ সাংবাদিককে জবাব দিতে গিয়ে কামিন্স পাল্টা বলেন, ‘‘সেটা করতেও পারি। সবটাই নির্ভর করছে বাকি টেস্টগুলোতে উইকেট আরও কত পাটা হচ্ছে তার উপর।’’ ইংল্যান্ডের প্রথম দুই টেস্টের উইকেট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা। আগের থেকে উইকেট অনেক মন্থর। অসমান বাউন্স দেখা যাচ্ছে। অনেকে জানিয়েছেন, বাজ়বল (ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ডাকনাম বাজ়। তাঁর সময়ে ইংল্যান্ড যে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলছে সেটার এই নাম দেওয়া হয়েছে।) খেলার জন্যই উইকেটে বদল করা হয়েছে। সেই উইকেট নিয়েই এ বার পাল্টা খোঁচা দেন কামিন্স।
অসি সংবাদমাধ্যম বনাম স্টোকস
স্টোকসকে ছিঁচকাঁদুনে বলে দিল অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম। পাল্টা দিয়েছেন স্টোকসও। ইংরেজ অধিনায়কের মুখ বসানো একটি বাচ্চার ছবি দিয়েছে তারা। মুখে নিপ্ল। পাশে উল্টে পড়ে রয়েছে অ্যাশেজ ট্রফি। সঙ্গে একটি নতুন লাল বল। তলায় লেখা ‘ছিঁচকাঁদুনে’। বিষয়টি নজর এড়ায়নি স্টোকসের। পাল্টা ব্যঙ্গ করেন তিনি। লেখেন, “এটা আমি কী করে হতে পারি! আমি কবে থেকে নতুন বলে বল করছি?”
বদলে গেল গায়ক
বেয়ারস্টোকে আউট করার ‘পুরস্কার’ পেলেন অ্যালেক্স ক্যারে। অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক তৃতীয় টেস্টে ‘আন্ডার দ্য সাদার্ন ক্রস’ গাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। সাধারণত টেস্ট চলাকালীন প্রতি দিন খেলা শুরুর আগে এই গান গেয়ে থাকেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা। দলের ক্রিকেটারদের উত্তেজিত করে এই গান। রড মার্শের সময়ে এই গান শুরু হয়েছিল। সাধারণত দলের অধিনায়ক সেই গান গেয়ে থাকেন। তবে এ বার সেই সুযোগ পেয়েছেন ক্যারে। তিনিই এখন অস্ট্রেলিয়ার ‘লিড সিঙ্গার’। এই প্রসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বলেন, ‘‘আমাদের খেলা চলাকালীন দর্শক এই গান গায়। তার থেকে ভাল কিছু হয় না। কিন্তু নিজেদের মধ্যেও আমরা এই গান গেয়ে থাকি। লর্ডস টেস্ট জিততে ক্যারের অবদান কম নয়। তাই ওকেই সামনের টেস্টে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy