যাত্রা: ঘরে ফেরা। বালিশ হাতে চললেন কিবু ভিকুনা। ফাইল চিত্র
রবিবার রাত ১০.০০: বাসযাত্রার বারো ঘণ্টা পূর্ণ হল। বারাণসী পৌঁছতে এখনও আধ ঘণ্টা লাগবে। হাইওয়ের ধারে আমাদের বাস দাঁড়াল। বাসের কর্মীরা চা বানিয়ে খাওয়ালেন। আমাদের সঙ্গে বিস্কুট ছিল। সকলে মিলে তা ভাগ করে খেলাম। শরীরের আড়ষ্টতা ভাঙতে বাস থেকে একটু পায়চারি করলাম। অর্ধেক পথও আমরা পেরোইনি। দিল্লি এখনও বহুদূর। আধ ঘণ্টা বিশ্রামের পরে অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে আবার আমাদের যাত্রা শুরু হল।
রাত ১১.০০: বাসচালক জানালেন, বারাণসী পৌঁছে গিয়েছি। কিন্তু বাইরে এত অন্ধকার যে, কিছুই প্রায় দেখা যাচ্ছে না। ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহাসিক শহর বারাণসী দেখার আমার বহু দিনের ইচ্ছে ছিল। যখন শুনেছিলাম, রবিবারের রাতটা আমাদের এখানে কাটাতে হবে, দারুণ আনন্দ হয়েছিল। ইউরোপে আমার অনেক পরিচিতই ভারত ভ্রমণে এসে বারাণসীতে কয়েক দিন কাটিয়ে গিয়েছেন। ওঁদের মুখে প্রাচীন এই শহরের অনেক গল্প শুনেছি। তা ছাড়া ইন্টারনেটেও বারাণসীর গঙ্গা, শহরের মধ্যে সরু গলি পথের ছবি দেখেছি। তাই ভেবেছিলাম, সোমবার খুব ভোরে উঠে পায়ে হেঁটে শহরটা একবার ঘুরে দেখার চেষ্টা করব। আর কখনও বারাণসীতে আসার সুযোগ হবে কি না কে জানে।
কলকাতা থেকে বাস ছাড়ার আগেই জানতে পেরেছিলাম, বারাণসী শহরটা সিল করে দেওয়া হয়েছে। বাইরের কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। যে হোটেলে আমাদের থাকার কথা ছিল, তার বুকিংও বাতিল হয়ে গিয়েছে। বাসের কর্মীরা জানালেন, হয় সারারাত হাইওয়েতে বাসের মধ্যে কাটাতে হবে, না হলে এগিয়ে যেতে হবে দিল্লির পথে। আমাদের সঙ্গে মহিলা ও শিশু রয়েছে। তাই আর ঝুঁকি নিইনি। সবাই মিলে আলোচনা করে ঠিক করলাম, যাত্রা থামাব না।
আরও পড়ুন: কঠিন পিচে যেন টেস্ট হচ্ছে, মত সৌরভের
সোমবার, ভোর ৩.০০: হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল। দেখলাম, বাস দাঁড়িয়ে আছে। চা বানাচ্ছেন বাসের কর্মীরা। ওঁদের কাছেই শুনলাম, ঘণ্টাখানেক আগেই আমরা ইলাহাবাদ পেরিয়ে এসেছি। এখানেও বাস আধ ঘণ্টা দাঁড়াবে। আবার নীচে নেমে একটু পায়চারি করলাম। চা পান করতে করতে বাস চালকের সঙ্গে গল্প করছিলাম। ওঁদের মুখেই শুনলাম, আগ্রা হয়ে আমাদের দিল্লি পৌঁছতে দুপুর হয়ে যাবে।
আগ্রা নামটা শুনেই ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। আগ্রা মানেই তো তাজমহল। কলকাতা লিগ শেষ হওয়ার পরে আমি যখন স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পোলান্ড গিয়েছিলাম, তখন আমার সহকারী টোমাস থুস আগ্রা গিয়েছিল। ওর মুখে তাজমহলের অপরূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা শুনেছিলাম। তা ছাড়া ছবি তো দেখেইছি। ঠিক করলাম, ঘুমোলে চলবে না। যেতে না পারি, বাস থেকেই তাজ-দর্শন করব।
দুপুর ১২.৩০: জানালার দিকে তাকিয়ে বসে আছি। কিন্তু তাজমহলের দেখা নেই। হঠাৎ দেখলাম রাস্তার ধারে সাইনবোর্ডে লেখা, ‘দিল্লিতে স্বাগত। দিল্লি পুলিশ, দিল কি পুলিশ।’ তার মানে তো দিল্লিতে পৌঁছে গিয়েছি। হায়...এ বারও তাজ মহল দেখা হল না। কিন্তু এ কোনও দিল্লি! অন্যান্য জায়গার মতো ভারতের রাজধানীর রাস্তাও ফাঁকা। সর্বত্র পুলিশ। কত বার যে আমাদের বাস থামিয়ে কাগজ-পত্র পরীক্ষা করা হল, মনে করতে পারছি না। কোথা থেকে আসছি, কোথায় যাব, আমাদের বিমান কখন ছাড়বে সব নথিভুক্ত করলেন পুলিশকর্মীরা। দিল্লিতে এর আগে যত বার এসেছি, দেখেছি শহরটা গমগম করছে। লকডাউনের জেরে পুরো ছবিটাই বদলে গিয়েছে। পুরো শহরটাই যেন আতঙ্কে ঘুমিয়ে রয়েছে।
দুপুর ২.০০: অবশেষে আমাদের দিল্লি যাত্রা শেষ হল। ক্লান্ত শরীরে বিমানবন্দরের কাছেই একটি হোটেলে পৌঁছলাম। থার্মাল চেকের পরে সোজা রুমে চলে গেলাম। রাত তিনটেয় আমাদের আমস্টারডাম যাওয়ার বিমান ছাড়বে।রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ আমাদের হোটেল ছেড়ে বিমানবন্দর যাওয়ার কথা। মাঝের এই সময়টায় একটু ঘুমিয়ে না নিলে বাস যাত্রার ধকলটা কাটবে না। এখনও যে অর্ধেক পথও পেরোইনি।
(সাক্ষাৎকার-ভিত্তিক অনুলিখন)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy