উল্লাস: জেসুসের গোলের পরে উৎসব ব্রাজিলের। এএফপি
আবার ব্যর্থ লিয়োনেল মেসি। রাশিয়া বিশ্বকাপের পরে কোপা আমেরিকা থেকেও শূন্য হাতে ফিরতে হল আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে। শুধু তাই নয়, ২০০৫ সালের পরে কোনও বড় টুর্নামেন্টে ব্রাজিলকে হারাতে পারল না আর্জেন্টিনা। বেলো হরাইজন্তেতে বুধবার গ্যাব্রিয়েল জেসুস (১৯ মিনিট) ও ফির্মিনোর গোলে (৭৭ মিনিট) ব্রাজিল জিতল ২-০। ফাইনালে তাদের খেলতে হবে পেরু বনাম চিলি ম্যাচের বিজয়ীর সঙ্গে।
মেসি কিন্তু ম্যাচের পরে হারের সব দায় চাপালেন ইকুয়েডরের রেফারি রদি জ়াম্বানোর উপর। রেফারির বিরুদ্ধে এতটা ক্ষিপ্ত বার্সা তারকাকে সাধারণত দেখা যায় না। একেবারে সরাসরি রেফারির বিরুদ্ধে তিনি ব্রাজিলকে টেনে খেলানোর অভিযোগ আনলেন। তাঁর এতটা ক্রোধের আরও কারণ আর্জেন্টিনা একটা নিশ্চিত পেনাল্টি না পাওয়ায়। ক্রুদ্ধ বার্সা অধিনায়কের মন্তব্য, ‘‘কোনও ভাবেই ব্রাজিল আমাদের থেকে ভাল খেলেনি। তেমন কিছু হলে সবার আগে আমিই সে কথা বলতাম। মানছি, প্রথম গোলটা খুব তাড়াতাড়িই ওরা করে ফেলেছিল। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, এত খারাপ রেফারি আমি ফুটবল জীবনে কখনও দেখিনি। ওর এই ধরনের বড় ম্যাচ খেলানোর কোনও যোগ্যতাই নেই।’’
হতে পারে এতটা বিস্ফোরক বিবৃতির জন্য দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল ফেডারেশন তাঁকে শাস্তিও দিতে পারে। কিন্তু মেসি সে সবের পরোয়া না করে আরও বলেছেন, ‘‘ম্যাচে দ্বিতীয় গোল তো আমাদেরই করার কথা। অন্তত দু’বার পরিষ্কার পেনাল্টি আমাদের দেওয়া হয়নি। একবার নিকোলাস ওটামেন্ডিকে পেনাল্টি বক্সের মধ্যে বিশ্রী ভাবে ফাউল করা হল। একই ঘটনা ঘটল পরে সের্খিয়ো আগুয়েরোর ক্ষেত্রেও।’’
এখানেই থামেননি মেসি। আরও বলেছেন, ‘‘লোকটা পরিষ্কার ব্রাজিলের হয়ে খেলেছে। যতবার কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সংশয়ে পড়েছে, ততবার চোখ বন্ধ করে ব্রাজিলের পক্ষে রায় দিয়েছে। বিশ্বাস করুন, আমি জীবনে এ রকম দেখিনি।’’
এটা কি হেরে যাওয়ার অজুহাত নয়? এমন প্রশ্নে মেসি স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘অজুহাতের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এটাই সত্যি। এই কোপায় দেখছি রেফারিরা যখন ইচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে বাঁশি বাজাচ্ছে। আর আজকের রেফারি তো সবাইকে ছাপিয়ে গেল। হ্যান্ডবল, পেনাল্টি—সব ক্ষেত্রে লোকটা ব্রাজিলকে সুবিধে করে দিয়েছে। এমনকি কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশয়ে পড়লে ভিডিয়ো প্রযুক্তিরও সাহায্য নেয়নি।’’
কোপার সেমিফাইনালে হারের পরে মেসি জাতীয় দল থেকে এ বার পাকাপাকি সরে যাবেন এমন একটা জল্পনা নতুন করে সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক স্বয়ং সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন। শুধু তাই নয়, বুধবার হারলেও দলের খেলায় তিনি এতটাই খুশি যে বলে ফেলেন, ‘‘এ বারের কোপায় আজ ব্রাজিলের বিরুদ্ধেই আমরা সেরা ম্যাচটা খেললাম। প্রত্যেকটা পজিশনে আমাদের ছেলেরা অসাধারণ লড়াই করেছে। দলের মধ্যে এতটা মরিয়া ভাব আমি খুব কম দেখেছি। সমালোচনা নয়, সত্যিই ওদের এই ম্যাচটার জন্য অনেক সম্মান প্রাপ্য। আমার তো মনে হচ্ছে, এখনকার আর্জেন্টিনা দলের মধ্যে আগামী দিনে অসাধারণ হয়ে ওঠার সব মশলাই আছে।’’ অবসরের সম্ভাবনা নিয়ে মেসির প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ বারের দলটা খুবই ভাল লেগেছে আমার। চেষ্টা করব এই দলটাকে যতদিন সম্ভব সাহায্য করে যাওয়ার। আর যত দিন ছন্দে বা সুস্থ থাকব তত দিন দেশের জার্সিতে খেলে যাব।’’ ফুটবল বিশ্লেষকেরা বলছেন, ব্রাজিলের মাঝমাঠ আর রক্ষণের ফুটবলারেরা যে ভাবে কার্যত বল ছাড়াই মেসিকে আক্রমণ করেছেন তা বেনজির। অবশ্য শুধু মেসি নয়, আর্জেন্টিনার অন্যদের ক্ষেত্রেও বারবার একই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু রেফারি অদ্ভুত ভাবে সব ক্ষেত্রেই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। এবং গল্প এখানেই শেষ হচ্ছে না। আর্জেন্টিনার চরম দুর্ভাগ্য, মেসি ও সের্খিয়ো আগুয়েরোর দু’টি শট এ দিন অবিশ্বাস্য ভাবে পোস্টে প্রতিহত হয়ে ফিরে আসে। ব্রাজিলের অধিনায়ক দানি আলভেসও স্বীকার করেছেন, এই ম্যাচটা জিততে তাঁদের প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, ‘‘প্রতিপক্ষ হিসেবে এতটা শক্তিশালী আর্জেন্টিনাকে কখনও দেখিনি। ম্যাচটা জিততে আমাদের এতটা বেগ পেতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy