বিজয়ী: দিল্লিতে রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে ফেডারেশন কাপ ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় পদকজয়ী কোচবিহারের প্রতিযোগীরা। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
শুরুটা ছিল নিছকই আত্মরক্ষার কৌশল জানার পাঠ। কিন্তু টানা কয়েক বছর হোমে অনুশীলন করার পরে সেটাই হয়ে দাঁড়ায় ভালবাসা। বাড়ি ফিরে পারিবারিক অনটন থাকলেও বন্ধ হয়নি সেই অনুশীলন। ক্যারাটের প্রতি সেই ভালাবাসার দাম পেল ওরা। ওদের প্রতিটি দিনের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের স্বীকৃতি।
দিল্লিতে আয়োজিত জাতীয় স্তরের ফেডারেশন কাপ ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় কোচবিহারের ছেলেমেয়েরা বড় সাফল্য পেয়েছে। সমাজকল্যাণ দফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন শহিদ বন্দনা হোমের দুই প্রাক্তনী সেই সফলতার শরিক। তাতে খুশি সকলেই। সরকারি হোমের প্রাক্তনী ওই দুই পদকজয়ীদের মধ্যে পূজা বিশ্বাস এবার শ্রীরামকৃষ্ণ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে। অন্যজন সুস্মিতা বিশ্বাস ওই স্কুলেরই নবম শ্রেণির ছাত্রী। দু’জনের পরিবারেই অভাব অনটন নিত্যসঙ্গী। সেজন্যই দু’জনকেই শৈশবের কয়েকটা বছর হোমে কাটাতে হয়। এক বছর আগে দু’জনেই বাড়িতে ফেরেন। সব বাধাকে মনের জোরে হারিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে ওরা। সঙ্গে ক্যারাটেও।
কোচবিহার ক্যারাটে ডু অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক রাকেশ সরকার বলেন, “আর্থিক সমস্যার কারণে দিল্লিতে জাতীয় স্তরের এই ক্যারাটে প্রতিযোগিতাতেও ওদের অংশ নেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। শুভানুধ্যায়ীরা সবাই পাশে দাঁড়ান। তাই সমস্যা হয়নি। ওদের সাফল্যে আমরা সকলেই খুব খুশি।”
দিল্লির তালকোটরা স্টেডিয়ামে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় পদক জিতে আপ্লুত দু’জনেই। সুস্মিতার কথায়, “প্রায় পাঁচ বছর হোমে ছিলাম। সেখান থেকে শুরু হয় ক্যারাটে চর্চা। তার থেকে যে দিল্লির মঞ্চ থেকে পুরস্কার আসবে, সেটা কখনও ভাবিনি। একটা স্বপ্ন মনে হচ্ছে।” পূজার কথায়, “ফাইটিং বিভাগে নেমেছিলাম। ব্রোঞ্জ জিতেছি। ভাল লাগছে। এভাবে জীবনের সমস্ত বাধা সরিয়ে এগিয়ে জিততে চাই।” পদক জয়ের পর, তাদের দিন-প্রতিদিনের লড়াইয়ের পথ একটু সহজ হবে বলে দু’জনই আশা করছে।
ক্যারাটে ডু অ্যাসোসিয়েশন সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২৬-২৭ মে ওই প্রতিযোগিতার আসর বসেছিল দিল্লিতে। তাতে কোচবিহারের ৩২ জন ছেলেমেয়ে রাজ্য দলের হয়ে অংশ নেয়। সবমিলিয়ে জেলার প্রতিযোগীদের ঝুলিতে পদক এসেছে ৩১টি। তার মধ্যে ৩টি সোনা, ৬টি রুপো, ২২টি ব্রোঞ্জ। সোনা জিতেছে প্রীতম দে, ঋষিকা ঘোষ ও দেবারত্তি দত্ত। সংস্থার এক কর্তার কথায়, লড়াই করে উঠে আসা হোমের দুই প্রাক্তনী অন্য সবার সাফল্যের মধ্যেও স্বতন্ত্র হয়ে উঠেছে।
সরকারি উদ্যোগে পদকজয়ীদের সংবর্ধনা দেওয়ার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “দারুণ ব্যাপার। প্রত্যেকেই জেলা তথা রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করেছে। পদকজয়ীদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে।” কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহাও পদকজয়ীদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন,“পূজা আর সুস্মিতার এই সাফল্য হোমের অন্য আবাসিকদের উৎসাহ আরও বাড়বে।” প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই হোমে বর্তমানে অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের ৩৮ জন রয়েছে। তাদের মধ্যে আগ্রহীদের ক্যারাটে শেখান হয়। অন্য খেলাধুলোর চর্চাতেও তাদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy