অনাবিল: বিশ্বকাপ জয়ের উৎসব কপিল ও মোহিন্দরের। ফাইল চিত্র
ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের ৩৭ বছর পূর্তি হল বৃহস্পতিবার। ১৯৮৩ সালের ২৫ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪৩ রানে হারিয়ে লর্ডসের ব্যালকনিতে প্রুডেনশিয়াল কাপ তুলেছিলেন অধিনায়ক কপিল দেব। ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন রূপকথা লেখা হয়ে যায় সেই মুহূর্তেই।
কিন্তু এই বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্যে লুকিয়ে আছে অনেক অজানা গল্প। যেমন কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্তকে নিয়ে একটি কাহিনি শোনালেন মদন লাল। ১৯৮৩-তেই মার্চে বিয়ে করেন শ্রীকান্ত। জুনে যে হেতু বিশ্বকাপ, তাই আলাদা করে মধুচন্দ্রিমার ব্যবস্থা করেননি ভারতীয় ওপেনার। ভেবেছিলেন ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ শেষ হলেই স্ত্রীকে নিয়ে উড়ে যাবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
শ্রীকান্তের মতো মদন লালও সদ্য বিয়ে করেছিলেন। শ্রীকান্ত এই প্রস্তাব নিয়ে মদন লালের কাছেও এসেছিলেন। কিন্তু মদন রাজি হননি। তিনি ভেবেছিলেন, যদি বিশ্বকাপ ভারত জেতে তা হলে ভারতে ফিরতেই হবে। শ্রীকান্ত এত কিছু ভাবেননি। মুম্বই থেকেই সরাসরি নিউ ইয়র্কের টিকিট কেটে ফেলেন। ইংল্যান্ডে কয়েক দিন থেকে চলে যাবেন মধুচন্দ্রিমায়। কিন্তু সেই মধুচন্দ্রিমায় আর যাওয়া হয়নি শ্রীকান্তের।
তিরাশি বিশ্বকাপে ১৭ উইকেট পাওয়া মদন লাল বলছিলেন, ‘‘আমরা বিশ্বকাপ জেতার পরেই কপিল পাজি শ্রীকান্তকে টিকিট বাতিল করার নির্দেশ দেয়। কারণ, ভারতে আমাদের জন্য অনেক কিছু অপেক্ষা করছে, সে সব ছেড়ে শ্রীকান্ত কী করে মধুচন্দ্রিমায় যাবে?’’ মদন যোগ করেন, ‘‘টিকিট বাতিল করতে রাজি হয়েছিল শ্রীকান্ত। কপিলকে বলেছিল, যে দশ হাজার টাকা নষ্ট হবে, তা যেন কপিল দিয়ে দেয়। সেই টাকা এখনও পায়নি শ্রীকান্ত।’’
ফাইনালে ভিভ রিচার্ডসের উইকেট পেয়েছিলেন মদনই। তাঁর বলেই মিড উইকেট থেকে পিছনের দিকে দৌড়ে কপিলের সেই অবিশ্বাস্য ক্যাচ! মদনের কথায়, ‘‘সেটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলাম। কখনও ভাবিইনি কপিল সেই ক্যাচ নিয়ে নেবে। এমনকি বিশ্বকাপ জয়ের কয়েক বছর পরে যখন ম্যাচের ভিডিয়ো দেখছি, তখনও বিশ্বাস করতে পারিনি কপিল এ রকম একটি ক্যাচ নিয়েছে।’’
প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক রজার বিনি আরও এক মজার তথ্য তুলে ধরলেন। বিশ্বকাপ জয়ের পরে যখন লর্ডসের ব্যালকনিতে বিজয়োৎসব চলছে, নীচে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকদের উদ্দেশে শ্যাম্পেন ছোড়া শুরু করেন প্রত্যেকে। কিন্তু সতীর্থদের গায়ে শ্যাম্পেন ঢেলে উৎসব করার আগেই তা শেষ হয়ে যায়। কী করবেন? রজার বিনি বলেন, ‘‘আমরা তখন প্রচুর দুধ খেতাম। প্রত্যেকের কাছেই দুধের বোতল থাকত। শ্যাম্পেন শেষ তো কী? একে অন্যের গায়ে দুধ ঢেলে বিজয়োৎসব চলেছিল লর্ডসের ড্রেসিংরুমে।’’
ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর আগে সেমিফাইনালে আয়োজক দেশ ইংল্যান্ডকে হারায় ভারত। সে ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২১৩ রান করে ইংল্যান্ড। ৫৪.৪ ওভারে ম্যাচ জিতিয়ে ফেরেন সন্দীপ পাটিলরা। ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথামকে আউট করেছিলেন কীর্তি আজ়াদ। তাঁর অফস্পিন নিচু হয়ে গিয়ে আছড়ে পড়ে বোথামের প্যাডে। উইকেটরক্ষক সৈয়দ কিরমানি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষে কীর্তি ও কিরমানি ড্রেসিংরুমে ফিরে দেখেন, তাঁদের পকেটে বেশ কয়েকটি পঞ্চাশ পাউন্ডের নোট। কিরমাণি বলছিলেন, ‘‘ইংল্যান্ড ইনিংস শেষে সমর্থকরা খুশি হয়ে আমাদের পকেটে বেশ কয়েকটি পঞ্চাশ পাউন্ডের নোট ঢুকিয়ে দিয়েছিল। ভিড়ের মধ্যে বুঝতে পারিনি। কিন্তু ড্রেসিংরুমে ফিরে ট্রাউজার বদলানোর সময় পকেটে দেখি ভর্তি টাকা। এখনও সেই পাউন্ড আমার ও কীর্তির কাছে আছে।’’
সে সময় টিম মিটিং কী রকম হত? কারা বক্তব্য রাখতেন দলের মধ্যে? প্রাক্তন অধিনায়ক দিলীপ বেঙ্গসরকর বলছিলেন, ‘‘ইংল্যান্ড যাওয়ার সময় কেউ ভাবেনি বিশ্বকাপ জিতে ফিরবে। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগের দিনও টিম মিটিংয়ে কপিল যখন বলেছিল, আমরা জিতব, অনেকেই হেসেছিল।’’ যোগ করেন, ‘‘সে সময় টিম মিটিংয়ে বেশি কথাও হত না। মনে আছে ফাইনালের আগে কপিল বলেছিল, ‘সানি, তুমি ক্রিজে পড়ে থাকবে, শ্রীকান্ত মারবে। আমি, সাঁধু ও বিনি আমাদের কাজ করে দেব।’ ব্যস বৈঠক শেষ। বেঙ্গসরকর যোগ করেন, ‘‘প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর থেকেই দলের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হয়, আমরা পারব। খালি হাতে ফিরব না।’’ গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ নিয়েই ফিরেছিল কপিলের দল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy