দুরন্ত: শঙ্করের অসাধারণ গোলরক্ষায় হার বাঁচাল সবুজ-মেরুন। নিজস্ব চিত্র
খেলা শুরুর আগে গ্যালারিতে উড়ছিল জাতীয় পতাকার রঙয়ের ‘স্মোক বম্ব’। স্বাধীনতা দিবসের আগের বিকেল, মোহনবাগান সমর্থকরা হয়তো এটা করছিলেন কলকাতা লিগের হারের ধাক্কা কাটিয়ে মুক্তির আনন্দ পাওয়ার আশায়।
কিন্তু ম্যাচের পরে দেখা গেল সেই উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়েছে। বদলে গিয়েছে গ্যালারির চেহারা। সব রোষ পড়েছে রেফারি প্রতীক মণ্ডলের উপরে। সদস্য ব্লক থেকেই কদর্য ভাষায় গালাগালি করছিলেন একশ্রেণির সদস্য। তাঁদের ক্ষোভের কারণ, ৬২ মিনিটে মোহনবাগান স্টপার কিমকিমাকে লালকার্ড দেখানোর জন্যই কিবু ভিকুনার দল ডুবেছে। অন্ধ সমর্থকদের আবেগের সঙ্গে অবশ্য একমত হননি মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ। কিবু ভিকুনা বলে গেলেন, ‘‘রেফারি লালকার্ড দেখিয়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কাস্টমসের ফিলিপ আজা বল নিয়ে একা গোলের দিকে দৌড়চ্ছিল। কিমা অন্যায় ভাবে আটকাতে গিয়েছিল।’’
রেফারির উপরে দোষ চাপিয়ে সেলভা চামোরোদের আড়াল করে লাভ নেই। সত্যিটা হল, কাস্টমসের দেবায়ন সাহা লালকার্ড দেখে বেরিয়ে যাওয়ার পরে যখন দু’দলের খেলোয়াড় সংখ্যা ১০ বনাম ১০, তখনই তো ম্যাচটা ১-১ হয়ে গেল। কাস্টমসের এজে ইফিয়ানি অনায়াসে গোল করে গেলেন জটলার মধ্যে থেকে। অথচ ফ্রান্সিসকো জেভিয়ার গঞ্জালেস প্রথমার্ধের কুড়ি মিনিটে গোলার মতো শটে যখন জাল ছিঁড়ে দিয়েছিলেন, তখন মনে হয়েছিল লিগের দ্বিতীয় ম্যাচে হয়তো অন্য মোহনবাগানকে দেখা যাবে। কিন্তু ১-০ এগিয়ে যাওয়ার পরেই পড়তে শুরু করল কিবুর দলের লেখচিত্র। আর ‘খেপ’ এর মাঠে রাজা, গতবার ময়দানের সফলতম স্ট্রাইকার ফিলিপ আজা নামার পরে সবুজ-মেরুন ডিফেন্স তো রীতিমতো কাঁপতে শুরু করল। দমদমের ছেলে, গোলকিপার শঙ্কর রায় অন্তত তিনটি নিশ্চিত গোল আটকালেন। ম্যাচের সেরা হলেন তিনিই। নির্বাচনটা একেবারেই সঠিক, পাল তোলা নৌকা এ দিন ভাসিয়ে রাখল শঙ্করের হাতই। নিশ্চিত হারের হাত থেকে কিবুরা বাঁচলেও কলকাতা লিগে পরপর দু’ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট নষ্ট করে বেশ চাপে তারা। জর্জ টেলিগ্রাফ, ভবানীপুর, পিয়ারলেসের মতো ছোট ক্লাবগুলি যে ভাবে ম্যাচের পর ম্যাচ জিতছে, তা বজায় থাকলে মোহনবাগানের লিগ খেতাব ধরে রাখা কঠিন। কিবু অবশ্য এ দিন বলে দিয়েছেন, ‘‘এখনও আমাদের লিগের নটি ম্যাচ বাকি। ২৭ পয়েন্ট পাওয়ার সুযোগ আছে।’’
মোহনবাগান কর্তারা এ বার স্প্যানিশ কোচের বেছে দেওয়া চার বিদেশিকে নিয়েছেন দলে। যাঁদের জীবনপঞ্জীতে বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবের নাম দেখে মনে হয়েছিল, এ বার যে দলকে সামনে পাবে তাকেই ছারখার করে দেবে কিবু বাহিনী। কিন্তু ঘটছে উল্টোটা। সেলভা চামোরো, ফ্রান মোরান্তাদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছেন প্রতিপক্ষরা। বৃষ্টির ভারী মাঠে স্প্যানিশ ফুটবলারদের হাল সত্যিই খারাপ। পিয়ারলেসের হয়ে লিগের প্রথম ম্যাচে মোহনবাগানকে একাই হারিয়ে দিয়েছিলেন আনসুমানা ক্রোমা। এ দিন তাঁকে দেখা গেল সদ্য বিবাহিত ভারতীয় স্ত্রী-কে নিয়ে খেলা দেখতে এসেছেন। কাস্টমসের ফিলিপ আজা, স্ট্যানলি ইফিয়ানিদের সঙ্গে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন ক্রোমা। তৃপ্ত মুখে। ইফিয়ানি ছাড়াও এ দিন নজর কাড়লেন দুই সুমিত। দাশ এবং ঘোষ। দুই বঙ্গসন্তান গোল পেতেই পারতেন।
মোহনবাগানের এ বারের দলের ভারতীয় ফুটবলার নির্বাচনও দেখা যাচ্ছে সঠিক হয়নি। আশুতোষ মেহতা, ভি পি সুহের, শিল্টন ডি’সিলভাদের নিয়ে এক-আধটা ম্যাচ জিতলেও খেতাব জেতা কঠিন। মাঝমাঠে কোনও ব্লকার নেই। ভাল পাসার নেই। দু’টো উইং অচল। মাঝেমধ্যেই এক লাইনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে রক্ষণ। সব চেয়ে বড় কথা, বেশিরভাগ ফুটবলারই ফিট নন। প্রাক-মরসুম প্রস্তুতিতে কিবু তা হলে করলেনটা কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy