গত কয়েকটি শীতকালীন অলিম্পিক্সে ভারতের পতাকা ধরেছিলেন একজনই ক্রীড়াবিদ। তিনি শিবা কেশবন। ফাইল ছবি
গালওয়ানে জখম সেনাকে শীতকালীন অলিম্পিক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মশালবাহক করায় সেই অনুষ্ঠান বয়কট করেছে ভারত। সমাপ্তি অনুষ্ঠান বয়কটের কথাও আগাম জানিয়ে রেখেছে তারা। শীতকালীন অলিম্পিক্স শুরু হওয়ার আগেই দু’দেশের সম্পর্ক নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনীতি। সীমান্তে দু’দেশ কিছু দিন আগে পর্যন্তও সম্মুখ সমরে থাকার পর এখন কূটনৈতিক লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে।
যে শীতকালীন অলিম্পিক্স অনুষ্ঠান বয়কট করে রাজনীতিতে ফায়দা তুলতে চাইছে ভারত সরকার, সেই প্রতিযোগিতাতেই দেশের হাল শুনলে রীতিমতো আঁতকে উঠতে হয়। বছরের পর বছর ধরে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলেও ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের সাফল্যের ভাঁড়ার একেবারে শূন্য। অলিম্পিক্সে সাফল্যের হার ক্রমশ বাড়লেও শীতকালীন অলিম্পিক্স ভারতীয় ক্রীড়ামহলের কাছে বরাবরই বঞ্চিত।
টোকিও অলিম্পিক্সে আজ পর্যন্ত প্রতিযোগিতার ইতিহাসে সব থেকে ভাল পারফর্ম করেছে ভারত। এমনকী সে দেশে হওয়া প্যারালিম্পিক্সেও ভারতের পদকের তালিকা নেহাত কম নয়। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে শীতকালীন অলিম্পিক্সকে কেউ কোনও দিন গুরুত্ব দিতে চাননি। ফলে ভারতের পদকপ্রাপ্তি এখনও হয়নি। বিভিন্ন সময়ে বাজেটে ক্রীড়াক্ষেত্রের বরাদ্দ বাড়লেও শীতকালীন অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদরা সে ভাবে তার কোনও সুবিধা পান না। কারণ তাদের জাতীয় সংস্থাকেই এখনও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। অথচ শীতকালীন অলিম্পিক্সের বেশির ভাগ খেলাতেই ক্রীড়াসরঞ্জামের খরচ বাকি যে কোনও খেলার থেকে তুলনায় অনেকটাই বেশি।
প্রথম শীতকালীন অলিম্পিক্স হয়েছিল ১৯২৪ সালে, ফ্রান্সের শাঁমনিতে। তবে শীতকালীন অলিম্পিক্সে প্রথম বার ভারতের খেলতে লেগে গিয়েছিল আরও ৪০ বছর। অস্ট্রিয়ার ইন্সব্রুকে ১৯৬৪ সালে প্রথম বার শীতকালীন অলিম্পিক্সে অংশ নেয় ভারত। একমাত্র প্রতিযোগী হিসেবে জেরেমি বুজাকোস্কিকে পাঠানো হয়েছিল। তিনি পুরুষদের আলপাইন স্কি-তে ডাউনহিল বিভাগে অংশগ্রহণ করেছিলেন। রেস শেষ করতে পারেননি এবং প্রতিযোগিতায় কোন র্যাঙ্কিং পাননি। এর পরে আরও ২৪ বছর লেগে যায় দ্বিতীয় বার শীতকালীন অলিম্পিক্সে নামতে। তার পর থেকে প্রতিটি শীতকালীন অলিম্পিক্সেই ভারতের কোনও না কোনও প্রতিযোগী লড়াই করেছেন। কিন্তু একটিও পদক আজ পর্যন্ত কেউ জিততে পারেননি।
কেন শীতকালীন অলিম্পিক্সে বারবার ব্যর্থ হয় ভারত। একাধিক কারণ রয়েছে। সব থেকে বড় কারণ অর্থ এবং সঠিক পরিকাঠামোর অভাব। যে কোনও দেশকে ক্রীড়াক্ষেত্রে শক্তিশালী হয়ে উঠতে গেলে সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন। সম্প্রতি টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ভাল পারফর্ম করার পর ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের জন্য বাজেট বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি অনুশীলন এবং পরিকাঠামো তৈরিতে জোর দেওয়া হয়েছে। তার সুফলও পাওয়া গিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনেক ধরনের খেলাতেই ভারতের পারফরম্যান্স আগের থেকে বেশ ভাল হয়েছে, যার প্রধান কারণ ক্রীড়াবিদদের সাহায্যে সরকারের এগিয়ে আসা।
কিন্তু শীতকালীন খেলাধুলোর সঙ্গে জড়িত ক্রীড়াবিদরা কোনও দিনই সেই সাহায্য পাননি। কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে আলাদা করে তাদের জন্য কোনও বরাদ্দ থাকে না। ভারতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সঠিক পরিবেশ থাকলেও পরিকাঠামোর অভাব থাকায় ইচ্ছে না থাকলেও বিদেশ পাড়ি দিতে হয় ক্রীড়াবিদদের। ভাবলেও অবাক লাগে, এখনও পর্যন্ত শীতকালীন খেলাগুলির একটি জাতীয় সংস্থাও সরকারের স্বীকৃত নয়। ফলে তাদের অর্থ পাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। এই কারণে শীতকালীন অলিম্পিক্সে ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের দেখাই যায় না।
গত কয়েকটি শীতকালীন অলিম্পিক্সে ভারতের পতাকা ধরেছিলেন একজনই ক্রীড়াবিদ। তিনি শিবা কেশবন। মোট ছ’টি অলিম্পিক্সে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। শেষ বার ২০১৮-তে পিয়ংচ্যাং অলিম্পিক্সে লড়েছেন। শীতকালীন অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে কম বাধার মুখে পড়তে হয়নি শিবাকে। অনুশীলনের জন্য অর্থ জোগাড় করাই ছিল প্রধান বাধা। সাধারণ মানুষের থেকে অর্থ জোগাড়, অর্থাৎ ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমেই তিনি অনুশীলন করেছেন এবং অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করেছেন। এমনকি বেশ কিছু ক্রীড়াসরঞ্জামও অন্যের থেকে ধার করে অলিম্পিক্সে লড়তে গিয়েছেন।
শিবার কাহিনী পড়লেই বোঝা যায় শীতকালীন অলিম্পিক্সে ভারতের ক্রীড়াবিদদের অবস্থা কতটা করুণ। শিবা নিজে বহু বার সরকারকে এগিয়ে এসে সাহায্য করার কথা বলেছেন। বিভিন্ন শীতকালীন ক্রীড়াসংস্থাগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেছেন, যাতে তারা অর্থ পায়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার ফিরেও তাকায়নি। ফলে শীতকালীন ক্রীড়াবিদরা যেখানে থাকার সেখানেই রয়ে গিয়েছেন।
যে প্রতিযোগিতাকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রধান হাতিয়ার করে তুলেছে ভারত, সেই খেলাধুলোর সঙ্গে জড়িত ক্রীড়াবিদরা রয়েছেন সব থেকে কষ্টে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy