রবিবার ছিল ভারতে বসবাসকারী পাকিস্তানের নাগরিকদের বড় অংশের দেশে ফেরত যাওয়ার শেষ দিন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের মতে, অনেকেই আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে ফিরে গিয়েছেন। সরকারি হিসাবে, এখনও পর্যন্ত আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ৫৩৭ জন পাকিস্তানি নাগরিক দেশে ফিরেছেন, যাঁদের মধ্যে ৯ জন কূটনৈতিক কর্মী। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সরাসরি বিমান যোগাযোগ না থাকায় কত জন বিমান যোগে ফিরছেন, তা জানা যায়নি। অন্য দিকে এই ক’দিনে ১০০০ ভারতীয় পাকিস্তান থেকে ফিরেছেন বলে পাক সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
গত ক’দিন ধরেই ভারতে বসবাসকারী পাকিস্তানি হিন্দু শরণার্থীরা আতঙ্কে ভুগছিলেন। ভারত বলেছে, দীর্ঘমেয়াদি ভিসা যাঁদের আছে, তাঁদের যেতে হবে না। স্বল্পমেয়াদি ভিসাধারীদের পাকিস্তানে ফিরতে হবে। দিল্লির মজনু কা টিলা এলাকায় বহু হিন্দু শরণার্থীর বাস। সেখানকার হিন্দু শরণার্থী সম্প্রদায়ের সভাপতি সোনা দাস বলছেন, বেশ কিছু পরিবার বছরের পর বছর দিল্লিতে বসবাস করছে। আবার অনেকেই আছেন, যাঁরা মাত্র এক বা দুই মাস আগে ভারতে এসেছেন। আর একটি শরণার্থী শিবিরের প্রধান দয়াল দাসও বলেন, ‘‘গত দুই মাসেই পাকিস্তান থেকে ১০ থেকে ১২টি নতুন পরিবার এখানে এসেছে।’’
মজনু কা টিলায় একটি ছোট চায়ের দোকান চালান কানহাইয়া। তিনি বলেন, ‘‘যদি আমাদের দিল্লি ছেড়ে যেতে বলা হয়, তা হলে কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না এবং বেঁচে থাকারও কোনও উপায় থাকবে না।’’ আর এক বাসিন্দা কৃষ্ণ লাল বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী, সন্তান এবং ভাই ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন। এখনও তা মঞ্জুর হয়নি। আমি জানি না তাদের ভিসা এখন বাতিল করা হবে কি না।’’ একই ছবি রাজস্থানের জয়সলমেরেও। সেখানকার একলব্য ভিল বস্তিতে শরণার্থী বালাম যেমন বলছিলেন, পাকিস্তানে ফেরার চেয়ে মরণ ভাল। পহেলগাম হামলার দিনেই পাকিস্তানে সিন্ধু প্রদেশ থেকে ভারতে পৌঁছেছেন খেটো রাম। তিনিও বলছেন, ‘‘ওই নরকে আর ফিরতে চাই না। সব বেচে দিয়ে এসেছি।’’ ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের ফলেই খেটো রামদের দুর্গতি বাড়ছে বলে সরব বিরোধীরাও। সরকারের সিদ্ধান্তের জেরে সংখ্যালঘুদের হয় পাকিস্তানে ফিরে যেতে হবে কিংবা এ দেশে জেলে থাকতে হবে বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলে। তাঁর অভিযোগ, মোদী সরকার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের সংখ্যালঘুদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে জানিয়েছিল। এখনও পর্যন্ত ৩৫০ জন নাগরিকত্ব পেয়েছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)