Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

একশো দশ ভাগ উজাড় করে লড়ব, শপথ অধিনায়কের

শুক্রবার রাতে ভারতীয় ফুটবলের বিশাল ক্যানভাসে নতুন যুগ শুরুর দিনে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নেহরু স্টেডিয়ামের সব চোখ তাঁকিয়ে থাকবে কিন্তু মণিপুরের ছেলেটির দিকেই।

রতন চক্রবর্তী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৫৯
Share: Save:

ধীরজ সিংহ মাইরাংথেমের নাম ফুটবলপ্রেমীদের মজ্জাগত হয়ে যাওয়ার কথা নয়। হয়ওনি এখনও।

শুক্রবার রাতে ভারতীয় ফুটবলের বিশাল ক্যানভাসে নতুন যুগ শুরুর দিনে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নেহরু স্টেডিয়ামের সব চোখ তাঁকিয়ে থাকবে কিন্তু মণিপুরের ছেলেটির দিকেই। কারণ তিনি যে লুইস নর্টন দে মাতোসের টিমের শেষ প্রহরী। গোলের নিচে তাঁর নব্বই মিনিট ‘বেঁচে’ থাকার উপরই যে নির্ভর করছে যুব বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম ম্যাচের ভবিষ্যৎ। কারণ ম্যাচ শুরুর চব্বিশ ঘন্টা আগেই যে তাঁর কোচ স্লোগান তুলে দিয়েছেন, ‘‘গোল করার আগে গোল রোখাটা আমার কাছে বেশি জরুরি। প্রথম ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পেলেই আমি খুশি।’’

অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ ঘিরে দেশ জুড়ে আবেগের ঢল। উচ্ছ্বাসের ফানুস উড়ছে। লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোদের দেখে দেখে বিশ্বকাপের স্বাদ এখন বাড়ির রান্নাঘরে। ফিফার বয়স ভিত্তিক বিশ্বকাপগুলো মেসি-রোনাল্ডো তৈরির কারখানা। সেখানে ভারতের ছেলেরা খেলবে! স্বপ্নের উড়ানটা তো থাকবেই। সেটা আবার সংগঠন করছে ভারত। ফলে আশাটা দোষেরও কিছু নয়।

কিন্তু আবেগ আর বাস্তবের যে অনেক তফাত তা আর কেউ না জানুন, জানেন কোমল খাটাল, আনোয়ার আলিদের পর্তুগীজ কোচ। ‘‘আমরা জানি প্রতিপক্ষ কী গতিতে খেলে। কতটা শক্তিশালী। কাদের সঙ্গে আমরা খেলতে নামছি। আমাদের একটাই সুবিধা আমরা বারো জন নিয়ে খেলব। মাঠ ভর্তি দর্শক আমাদের সাহায্য করবে। ওরা তো আমার টিমের ছেলেদের মতোই মানসিকতা নিয়ে মাঠে আসবে।’’

যুক্তরাষ্ট্র টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দল। এমন তিন জন ফুটবলার টিমে আছে যাঁরা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ খেলে এসেছে সদ্য। তাদের এক জন আবার আফ্রিকান ফুটবলের আইকন জর্জ উইয়ার ছেলে। অন্য জন জশ সার্জেন্ট। বিপক্ষের বক্সে যখন ঝড় তোলেন এই মার্কিনি, মনে হয় সুনামি হচ্ছে। মাস খানেক আগে ফ্লোরিডার আইএমজি অ্যাকাডেমিতে যখন জ্যাক হ্যাকওয়ার্থের টিমের শিবির চলছিল, তখন সেখানে আছড়ে পড়েছিল হ্যারিকেন ঝড়, ইরামা। সাত দিন অনুশীলন বন্ধ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের এই টিমটার। দিল্লিতে আসার পরে তাদের থমকে দিয়েছিল লাস ভেগাসের মর্মান্তিক ঘটনা। তাতেও ভেঙে পড়েনি দলটা। বরং এ দিন তাদের অনুশীলন দেখে মনে হল ‘ইরামা ঝড়’ আর ‘গোল করার বারুদ’ নিয়ে নেহরু স্টেডিয়ামে আছড়ে পড়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে উইয়া ব্রিগেড।

সেই ঝড় আটকানোর জন্য ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ দলের অস্ত্র কী? বলতে দ্বিধা নেই সেটা হল, অমরজিৎ সিংহ, অনিকেত যাদব, অভিজিৎ সরকার, রহিম আলিদের শরীরী ভাষা। তাঁর নির্যাস ছিটকে বেরোয় মিডিয়ার সামনে আসা অধিনায়ক অমরজিৎ সিংহের কথায়। ‘‘প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামছি। আর কখনও ভারত খেলবে কী না জানি না। ১১০ ভাগ দেওয়ার জন্য তৈরি আমরা।’’ বলার সময় মণিপুরী মিডিও-র মুখে জেদ। টুইটারে উপচে পড়ছে শুভেচ্ছার ঢেউ। বিরাট কোহলি থেকে মিতালি রাজ, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি থেকে অক্ষয় কুমার, বরুন ধবন থেকে ভি ভি এস লক্ষণ—বাদ নেই কেউই। সুনীল ছেত্রী, জেজেরা তো আছেনই। যেমন হয়েছিল রিওতে দীপা কর্মকার বা ঝুলন গোস্বামীদের বিশ্বকাপ ফাইনালে নামার আগে। সেটা কতটা সাড়া ফেলেছে যুব দলের অন্দরমহলে? ‘‘সারা দেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে। এত সমর্থন, এত শুভেচ্ছা সত্যিই অসাধারণ অনুভূতি। এতদিন বাড়ি, পরিবার ছেড়ে শুধু তৈরি হয়েছি এই দিনটার জন্য। স্বপ্ন সফল করতে চাই।’’ বলার সময় কোনও জড়তা নেই। দিলখোলা, বোহেমিয়ানের মতো আগুন চোখে মুখে। যার মধ্যে দেখা যায় তিন বঙ্গসন্তানকেও। ব্যান্ডেল লিচুবাগানের অভিজিৎ সরকার, ইচ্ছাপুরের রহিম আলি আর কলকাতার জিতেন্দ্র সিংহ। বাংলা ফুটবলের এও তো একটা সোনালি অধ্যায়। খাতায় কলমে কিংবদন্তী চুনী গোস্বামী,প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা যে অধ্যায়ে পা দেননি কখনও।

এই যুব দলটার জন্য হাত উপুড় করে দিয়েছিল ফেডারেশন। টিম প্রস্ততির জন্য পনেরো কোটি টাকা খরচ করেছে তারা পাঁচ বছরে। দু লাখ মাইল ঘুরে আঠারো দেশে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে মাতোসের এখনকার টিম। এই টিমটার রসায়ন অবশ্য লুকিয়ে আছে অন্য জায়গায়। ২১ জনের মধ্যে ১৬ জন ফুটবলার পাঁচ বছর রয়েছেন এক ছাদের তলায়। ফলে বন্ধুত্ব আর একাত্মতা চোখে পড়ার মতো। মাঠে তাদের দেখতে লাগে পরিবারের মতো।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE