গ্যালারি থেকে নেইমারের সমর্থনেও জেতেনি ব্রাজিল। ক্যালিফোর্নিয়ায়। ছবি: এএফপি
ব্রাজিল ০: ইকুয়েডর ০
সকাল সকাল উঠে ব্রাজিলের খেলা দেখার জন্য খুব আগ্রহী ছিলাম। যতই কোনও নামী তারকা না থাক দলে, ব্রাজিল তো ব্রাজিল। নিজের ফুটবলারজীবন থেকেই আমার ব্রাজিলের স্টাইল খুব পছন্দ। ফুটবলকে ওরা শিল্পে পরিণত করেছে। কিন্তু রবিবার নব্বই মিনিটে সেই ব্রাজিলকে খুঁজেই পেলাম না। বরং এমন একটা দলকে দেখলাম যারা আক্রমণ করার সাহসটাই হারিয়ে ফেলেছে।
ইকুয়েডর খুব একটা সহজ দল না সেটা ঠিক। কিন্তু তা বলে এই। পজিটিভ মুভ খুব কম। পাস-পাস-পাস খেলে সুযোগ নষ্ট করা। গোলের মুখ খুলতে না পারা। এটা কি ব্রাজিল নাকি? ব্রাজিল মানে তো জানতাম যারা খুব ডিরেক্ট ফুটবল খেলে গোলের মুখ খুলে দিতে পারে। ব্রাজিল মানে তো কোনও ব্যক্তিগত প্রতিভার উপর নির্ভর করা নয়। এগারো জন মিলে সমানতালে বিপক্ষকে নাচিয়ে ছাড়বে। কিন্তু এই ব্রাজিল তো ভয় ভয় খেলছিল। নিজেদের গুটিয়ে রেখে গোল না খাওয়ার মতো খেলছিল। গোল দেওয়ার সেই অদম্য জেদটা ছিল কোথায়?
সবাই বলতে পারেন, কোপায় ব্রাজিল রিজার্ভ দল পাঠিয়েছে। যে দলে নেইমার নেই তাদের থেকে কতই বা আশা করা যায়। কিন্তু কয়েকজন যথেষ্ট প্রতিভাবান ফুটবলার এই কোপা দলে আছে। উইলিয়ান, ফিলিপ কুটিনহো, কাসেমিরো— এরা সবাই নিজেদের ক্লাবের জন্য দারুণ খেলেছে গত মরসুমে। তা হলে একদম যে খারাপ দল সেটা তো বলা যাবে না।
কিন্তু তাতেও তো বোঝা গেল, অতিরিক্ত নেইমার-নির্ভরশীলতায় ভুগছে ব্রাজিল। নেইমার না থাকায় ফাইনাল থার্ডে সেই ভয়ঙ্কর অস্ত্রই ছিল না ব্রাজিলের। ব্রাজিল কয়েকটা সুন্দর সুযোগ তৈরি করেছিল। যেমন উইলিয়ানের দুর্দান্ত একটা পাসে কুটিনহো প্রায় গোল করেই দিয়েছিল। আবার দ্বিতীয়ার্ধে লুকাস মৌরার হেড একটুর জন্য গোলে ঢোকেনি। কিন্তু ব্যস এইটুকুই। ব্রাজিল বলতে বিপক্ষ ডিফেন্সের ত্রাস— সেই দৃশ্য আর কোথায় দেখলাম।
নেইমারের এখনও মেসির পর্যায়ে উঠতে সময় লাগবে কিন্তু দেশের জন্য ও মেসির থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নেইমার এমন একজন ফুটবলার যে ডিফেন্স চিরে বেরোতে পারে। যার ড্রিবলিং নিঁখুত। যে একার হাতেই চার-পাঁচজনকে কাটিয়ে গোল সাজাতে পারে। সেট পিস নিতে পারে। আবার দুর্দান্ত ফিনিশারও। আর এ রকম ফাইভ ইন ওয়ান প্যাকেজ যে কোনও দলের জন্য সম্পদ। নেইমার না থাকায় সেই ঝাঁঝটাই ছিল না ব্রাজিল আক্রমণে।
রবিবার ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল অতিরিক্ত পাস খেলা। দু’একবার সুন্দর পাসিং মুভ তৈরি করেছিল দুঙ্গার দল। ঠিক সেই পুরনো ব্রাজিলের মতো গতি দিয়ে আক্রমণ। কিন্তু জোনাস, এলিয়াসরা ঠিক সময় শট নিতে পারল কোথায়। ভাল জায়গায় বল পেয়েও গোলে না মেরে পাস দিচ্ছিল। আর সেখানেই অর্ধেক মুভ মাঠেই মারা গেল।
বড় রোনাল্ডো যাওয়ার পরে আর কোনও ভাল সেন্টার ফরোয়ার্ড আসেনি ব্রাজিলে। কোপার প্রথম ম্যাচেও যার ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল গোল করার সেই জোনাস তো কার্যত অদৃশ্য ছিল গোটা ম্যাচে। শট নেওয়া তো দূর। হাতে গুণে বলা যেতে পারে ঠিক ক’বার বল ধরেছে জোনাস। তার পর ওর পরিবর্ত যে নামল সেই গ্যাব্রিয়েল ভাল ভাল পাস বাড়ালেও মাঝমাঠে নেমে যাচ্ছিল বেশি। সেন্টার ফরোয়ার্ড মানে তো যার কাজ হবে গোলকিপারকে সব সময় চাপে রাখা। সেই সব জোনাস আর করল কোথায়? এ রকম স্ট্রাইক জুটির উপর ভরসা করে কি কোনও বড় টুর্নামেন্ট জেতা যায়?
স্ট্রাইকারের মতো এই দলের গোলকিপিং ডিপার্টমেন্টও খুব দুর্বল। এমনিতেই ব্রাজিল ডিফেন্সে থিয়াগো সিলভা বা দাভিদ লুইজ নেই। এই পরিস্থিতিতে কোথায় আরও বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলবে গোলকিপার আলিসন, উল্টে সহজ কাজগুলোও কঠিন করে তুলছিল। লাইনের ধার থেকে বোলানোসের মারা সেই শটটা তো অবিশ্বাস্য ভাবেই গোলে ঢুকিয়ে দিয়েছিল আলিসন। ভাগ্যিস লাইন্সম্যান গোল কিক দিয়ে দিয়েছিল, না হলে তো ব্রাজিলকে হারতে হতে পারত। যদিও রিপ্লে দেখে আমার মনে হয়েছে সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল। কারণ বলটা পুরোপুরি বাইরে যায়নি।
বিশ্বকাপ ও গত বছরের কোপার সঙ্গে এই দলের কোনও তুলনাই চলে না। এই দলের অর্ধেক ফুটবলারকে দেখে মনে হল অভিজ্ঞতার অভাবে ভুগছে। কিন্তু এই দুর্বল দলেও উইলিয়ান, কুটিনহো, কাসেমিরো নজর কাড়ল। কুটিনহো বেশ কয়েক বার চেষ্টা করল কিছু মুভ তৈরি করার। আর একটু বেশি ক্লিনিকাল হতে পারলে কোপায় ও নিশ্চয়ই আরও ভাল খেলতে পারবে। উইলিয়ান প্রকৃত উইঙ্গারের মতোই খেলেছে। খুব গতিতে ড্রিবল করতে পারে। আর কাসেমিরো প্রমাণ করে দিয়েছে কেন এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা হোল্ডিং মিডিওদের মধ্যে ও একজন।
ব্রাজিল গোল না পাওয়ার জন্য ইকুয়েডরেরও প্রশংসা করতে হবে। দ্বিতীয়ার্ধে মিনা-পারেদেসরা যেমন রক্ষণ করেছে সত্যিই দেখে ভাল লাগল। ব্রাজিলকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়েনি।
টিভি-তে দেখছিলাম ব্রাজিলের আক্রমণের সময় নেইমার গ্যালারিতে বসে হাত-পা ছুড়ছে। বুঝতেই পারছিলাম মাঠে থাকতে না পারার যন্ত্রণাটা ওর মধ্যে রয়েছে। কিন্তু কোপায় ভাল কিছু করতে হলে ব্রাজিলকে নেইমার-মোহে আটকে থাকলে চলবে না। খুব তাড়াতাড়ি নেইমারহীন আক্রমণের একটা ঝাঁঝালো ফর্মুলা বার করতে হবে।
না হলে কিন্তু বিশ্বকাপের মতো শতবর্ষের কোপার শেষটাও যন্ত্রণার হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy