ফাইল চিত্র।
ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা মানেই মর্যাদার লড়াই। আবেগের বিষ্ফোরণ। বিশ্বকে দু’ভাগে বিভক্ত করে দেওয়া দ্বৈরথ।
করোনা বিপর্যস্ত ব্রাজিলে এ বার পরিস্থিতি অন্য রকম। রবিবার রিয়ো ডি জেনিরোর ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের দুই অন্যতম সেরা শক্তি। নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র) বনাম লিয়োনেল মেসির এই দ্বৈরথকে কেন্দ্র করে উন্মাদনা প্রবল থাকলেও প্রকাশ কম। কারণ, ব্রাজিলের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি। প্রবল আতঙ্কের মধ্যে আমরা দিন কাটাচ্ছি। খবরের কাগজ, টেলিভিশনে শুধুই মৃত্যুর খবর।
ব্রাজিলীয়দের কাছে ফুটবল শুধু খেলা নয়, ধর্মও। তাই ব্রাজিলে ফুটবল কখনও বন্ধ হয় না। মানুষ আনন্দে ফুটবল খেলেন। আবার দুঃখ ভুলতেও ফুটবলকে বেছে নেন। দু’বছর আগেও কোপা আমেরিকা হয়েছিল ব্রাজিলে। সে বার সেমিফাইনালে নেমারদের প্রতিপক্ষ ছিল আর্জেন্টিনা। ২-০ জেতার পরে সারা রাত আমরা উৎসব করেছিলাম। মারণ ভাইরাসের অভিশাপে সেই ছবিটা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। মানুষ এখন প্রয়োজন ছাড়া আতঙ্কে বাড়ির বাইরে পা রাখছেন না। অধিকাংশ মানুষই ব্রাজিলে কোপা আমেরিকা হওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন। সাও পাওলোয় আমি নিজেও কার্যত গৃহবন্দি। ইচ্ছে থাকলেও ফাইনাল দেখতে রিয়ো যাওয়ার উপায় নেই। রবিবার আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হলে আমাদের যন্ত্রণা হয়তো কিছুটা কমবে।
আমরা ব্রাজিলীয়রা চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারি না। বিশেষ করে প্রতিপক্ষ যদি আর্জেন্টিনা হয়, তা হলে তো কথাই নেই। ফাইনালে আমি কিছুটা এগিয়ে রাখব নেমারদেরই। কারণ, ঘরের মাঠে খেলার সুবিধে পাবে ব্রাজিল। এত দিন কোপার সব ম্যাচই হয়েছে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে। শুনছি, ফাইনালে নাকি মারাকানার মোট দর্শকাসনের দশ শতাংশ মানুষকে খেলা দেখার ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে।
এ বারের ফাইনালের আগে দু’দলের মধ্যে আশ্চর্য মিল খুঁজে পাচ্ছি। ব্রাজিল অনেকটাই নির্ভর করছে নেমারের উপরে। আর্জেন্টিনা তাকিয়ে থাকবে মেসির দিকে। অবশ্য এটা নতুন নয়। মেসির আগে আর্জেন্টিনা পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিল দিয়েগো মারাদোনার উপরে। ব্রাজিলে কিন্তু কখনওই এই ব্যাপারটা ছিল না। সব সময়ই একটা দল হিসেবেই খেলত। পেলের সঙ্গে ছিলেন গ্যারিঞ্চা, ডিডি, জাগালো-সহ একঝাঁক কিংবদন্তি। পরবর্তী কালে রোমারিয়ো, বেবেতো, দুঙ্গা। তার পরে রোনাল্ডো, রিভাল্ডোরা। এক জন ফুটবলারের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়া আমার মতে খুবই বিপজ্জনক। এর ফলে প্রতিপক্ষের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। অবাক হব না, ফাইনালের নিষ্পত্তি যদি
টাইব্রেকারে হয়।
আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে জিততে হলে ব্রাজিলকে দু’টি বিষয়ে জোর দিতে হবে। এক) মেসিকে খেলতে দেওয়া চলবে না। ওর মতো শিল্পীকে কখনও ‘ম্যান মার্কিং’ করে আটকানো সম্ভব নয়। আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের প্রধান লক্ষ্য থাকবে বল পেলেই মেসিকে দেওয়া। সেটা করতে দেওয়া চলবে না। আমার মনে হয়, কাসেমিরোর উপরেই এই দায়িত্ব দেবেন কোচ তিতে। পেনাল্টি বক্সের সামনে কোনও অবস্থাতেই ফাউল করা চলবে না। মেসির ফ্রি-কিক কিন্তু ভয়ঙ্কর। দুই) দলগত ফুটবল খেলতে হবে। আমি নিশ্চিত নেমারের জন্য নিশ্চয়ই চক্রব্যূহ রচনা করবে আর্জেন্টিনা। তাই লুকাস পাকেতা ও রিচার্লিসনকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।
আশা করব, এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ব্রাজিলবাসীর মুখে হাসি ফোটাতে সফল হবে নেমাররা।
(লেখক ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন কোচ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy