Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

অস্ট্রেলিয়ার বাউন্স পক্ষে যেতে পারে কুলদীপের

জাডেজা পরে অলরাউন্ড দক্ষতার জোরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ফিরে এলেও অশ্বিন আর ফিরতে পারেননি। এখন আবার স্পিন বিভাগে পরিবর্তনের লগ্নে দাঁড়িয়ে ভারত।

যুজ়বেন্দ্র চহাল(ডানহাতি লেগস্পিনার), কুলদীপ যাদব (বাঁ হাতি চায়নাম্যান), ও রবীন্দ্র জাডেজা (বাঁ হাতি স্পিনার)।

যুজ়বেন্দ্র চহাল(ডানহাতি লেগস্পিনার), কুলদীপ যাদব (বাঁ হাতি চায়নাম্যান), ও রবীন্দ্র জাডেজা (বাঁ হাতি স্পিনার)।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:১২
Share: Save:

আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ। সেখানে বিরাট কোহালির দলের স্পিনার হবেন কারা? আগামী কয়েক মাস সব চেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যেতে পারে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই।

এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, অস্ট্রেলিয়ার উড়ান ধরার জন্য প্রতিযোগিতায় রয়েছেন ছ’জন স্পিনার। কোহালিদের জন্য সব চেয়ে উজ্জ্বল দিক হচ্ছে, সব ধরনের স্পিনাররাই দৌড়ে আছেন। অর্থাৎ, ভারতীয় দল যে বৈচিত্রের খোঁজ করছে, তা পরিষ্কার। যা ভীষণ ভাবেই কাজে দেয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। ছয় স্পিনার হলেন— রবীন্দ্র জাডেজা (বাঁ হাতি স্পিনার), কুলদীপ যাদব (বাঁ হাতি চায়নাম্যান), যুজবেন্দ্র চহাল (ডানহাতি লেগস্পিনার), ক্রুণাল পাণ্ড্য (বাঁ হাতি স্পিনার), ওয়াশিংটন সুন্দর (ডানহাতি অফস্পিনার) এবং রাহুল চাহার (ডানহাতি লেগস্পিনার)।

এঁদের মধ্যে কুল-চা জুটিকে ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। দু’বছরের উপর টানা শাসন করার পরে প্রশ্ন তৈরি হল তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। ২০১৭-তে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরে অশ্বিন এবং জাডেজাকে সরিয়ে কুলদীপ যাদব এবং যুজবেন্দ্র চহালকে আনা হয়েছিল। ভারতীয় দল ময়নাতদন্ত করতে বসে বুঝেছিল, মাঝের ওভারগুলিতে উইকেট নেওয়ার মতো বোলার তাঁদের হাতে নেই। অশ্বিনরা উইকেট তুলতে পারছেন না বলে শেষে গিয়ে বড় রান তুলে ফেলছে প্রতিপক্ষরা। কোহালিদের চোখ খুলে দিয়েছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল। অশ্বিন এবং জাডেজা সে দিন ১৮ ওভারে গলিয়ে দেন ১৩৭ রান। অর্থাৎ, ওভার পিছু সাড়ে সাত রানেরও বেশি। কোনও উইকেট নেই। ৫০ ওভারে ৩৩৮ তুলে ভারতকে চূর্ণ করে পাকিস্তান। এর পরেই শ্রীলঙ্কা সফরে যায় ভারত। অশ্বিন-জাডেজাকে সরিয়ে দেওয়া হয় ওয়ান ডে থেকে।

অনিল কুম্বলের জায়গায় রবি শাস্ত্রী হেড কোচ হিসেবে ফিরেই বলেন, ‘রিস্টস্পিনার’ আনতে হবে। কব্জির ব্যবহারে যাঁরা স্পিন করান, তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আক্রমণাত্মক বোলার হন। উইকেট নেওয়ার জন্য বোলিং করেন, রান আটকানোর জন্য নয়। শুরু হয় কুল-চা যুগ। জাডেজা পরে অলরাউন্ড দক্ষতার জোরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ফিরে এলেও অশ্বিন আর ফিরতে পারেননি। এখন আবার স্পিন বিভাগে পরিবর্তনের লগ্নে দাঁড়িয়ে ভারত। তবে সেই পরিবর্তন পঞ্চাশ ওভারে নয়, কুড়ি ওভারের জন্য ভাবা হচ্ছে।

কেন হঠাৎ কুল-চা জুটিকে বাইরে রেখে নতুন স্পিনারদের দেখে নেওয়ার চেষ্টা? ভারতীয় দলের অন্দরমহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির হারের পরে যেমন হয়েছিল, তেমনই এ বার টি-টোয়েন্টি নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এবং, তাতে ধরা পড়েছে স্পিনাররা অতি আক্রমণ করে ফেলছেন। তিন ধরনের ক্রিকেটের মধ্যে কুড়ি ওভারের খেলাতেই সব চেয়ে পিছিয়ে কোহালির দল। কে বলবে ভারতই কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে বিপ্লব ঘটিয়েছে আইপিএলের মাধ্যমে! এখনও পর্যন্ত মাত্র এক বারই তারা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে। সেই ২০০৭ সালে একেবারে প্রথম বছরে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে। টি-টোয়েন্টির র‌্যাঙ্কিংয়েও এখন কোহালিরা চার নম্বরে। সেখানে টেস্টে এক নম্বর, এক দিনের ক্রিকেটে দুই।

কুলদীপ বা চহাল ব্যাটিং বা ফিল্ডিংয়ে আহামরি নন, এটা একটা দিক। ভারতীয় দলে ভুবনেশ্বর না খেললে অনেক ক্ষেত্রেই শেষ চার ব্যাটসম্যান হবেন কুলদীপ যাদব, মহম্মদ শামি, যুজবেন্দ্র চহাল এবং যশপ্রীত বুমরা। টি-টোয়েন্টিতে এত লম্বা লেজ রাখতে চায় না কোনও দলই। কিন্তু আর একটা কারণ হচ্ছে, কুল-চা শুধুই আক্রমণাত্মক বোলিং করতে জানেন। রক্ষণাত্মক বোলিং যে কুড়ি ওভারের স্পিন বোলিংয়ে খুব জরুরি অস্ত্র, সেটা তাঁদের থেকে পাওয়া যায় না। পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে মাঝের দিকে যতটা আক্রমণাত্মক বোলিংয়ের দরকার হয়, টি-টোয়েন্টিতে সব সময় পরিস্থিতি সে রকম থাকে না। অনেক সময় আক্রমণাত্মক হয়ে পড়া ব্যাটসম্যানকে আঁটসাঁট বোলিংয়ে আটকে রাখতে হয়।

আবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে সিরিজ কোহালিরা না জিততে পারায় প্রশ্ন উঠছে, ওয়াশিংটন সুন্দর, ক্রুণাল পাণ্ড্য বা রাহুল চাহারদের উপর ভরসা করাই কি ঠিক হচ্ছে? তাই কুল-চা জুটির টি-টোয়েন্টি ভাগ্য পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছে, তেমনও বলা যাচ্ছে না। যা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, বিশ্বকাপে পনেরো জনের দল গেলে তাতে চার জন স্পিনারও থাকতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ার পিচে বাউন্স থাকবে বলে কুলদীপ এবং চহালের সম্ভাবনা বাড়বে। দু’জনেই ‘রিস্টস্পিনার’। এক জন বাঁ হাতি, অন্য জন ডান হাতি। এর মধ্যে কুলদীপ রহস্যময় স্পিনার। দু’দিকে বল স্পিন করিয়ে ধাঁধায় ফেলে দেন ব্যাটসম্যানদের। এখনও বিদেশি অনেক ব্যাটসম্যান বুঝেই উঠতে পারেননি কুলদীপের বোলিং। তাই তাঁকে দলের বাইরে রাখা আদৌ বিচক্ষণতার পরিচয় কি না, প্রশ্ন আছে।

ইংল্যান্ডে ব্রাত্য থাকতে থাকতে সুযোগ পেয়ে দুরন্ত খেলা রবীন্দ্র জাডেজার জায়গা কার্যত নিশ্চিত। কোনও কোনও মহলের ব্যাখ্যা, বৈচিত্র আনতে সব ধরনের স্পিনার রাখা হোক। সেক্ষেত্রে দু’জনের বেশি রিস্টস্পিনার রাখা হবে না। যার অর্থ, কুলদীপ, চহাল এবং রাহুল চহারের মধ্যে যে কোনও দু’জন সুযোগ পাবেন। সামনের বছরে আইপিএলে দারুণ কিছু ভেল্কি দেখাতে না পারলে হার্দিকের ভাই ক্রুণালের সম্ভাবনা কম। তাঁর চেয়ে ওয়াশিংটন প্রার্থী হিসেবে ভাল। আবার কারও কারও মত, এক জনই রিস্টস্পিনার রাখা হোক দলে। যার অর্থ, কুলদীপ এবং চহালের মধ্যে যে কোনও এক জনই থাকবেন। তখন টি-টোয়েন্টিতে ভেঙে যাবে কুল-চা জুটি। থাকবে শুধু ওয়ান ডে-তে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এখনও পঁচিশটি মতো কুড়ি ওভারের আন্তর্জাতিক ম্যাচ পাবেন কোহালিরা। সামনের বছরের আইপিএলেও দেখে নেওয়া যাবে নতুন মুখদের। শুধু একটাই ভয়, ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপের মতো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দল নিয়ে ডামাডোল না অব্যাহত থাকে। স্পিনার নিয়ে দড়ি টানাটানি চলুক, বিজয় শঙ্কর বিতর্ক যেন ফিরে না আসে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy