হতাশ: পঞ্জাবের সামনে ম্লান মনোজেরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ভুল সিদ্ধান্ত, সঠিক পরিকল্পনার অভাব— প্রশ্ন উঠতে পারে এমন অনেক কিছু নিয়েই। কিন্তু দিনের শেষে এটাই সত্যি যে, রঞ্জি ট্রফির শেষ আটে ওঠার ম্যাচে কোণঠাসা গতবারের সেমিফাইনালিস্ট বাংলা।
পছন্দের যে পিচে ১৮৭ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছেন মনোজ তিওয়ারিরা, সেই বাইশ গজেই ম্যাচের দ্বিতীয় দিন সাত উইকেটে পঞ্জাব তুলল ৩৫৭! প্রথম ইনিংসে বাংলা পিছিয়ে ১৭০ রানে। তিন পয়েন্ট পাওয়ার আশা শেষ। এ বার খালি হাতে মাঠ ছাড়ার আশঙ্কা ঢুকে প়ড়ল তাদের শিবিরে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সল্টলেক ক্যাম্পাসের ঘূর্ণি পিচেই যুবরাজ সিংহদের স্বাগত জানাতে চেয়েছিল বাংলা। অথচ দেখা যাচ্ছে স্পিন নয়, পেসই এখন বঙ্গ বোলিংয়ের সেরা শক্তি। পেসার মুকেশ কুমার চার উইকেট নিয়ে পঞ্জাবের টপ অর্ডারে ধাক্কা দেওয়ার পরে স্পিনার প্রদীপ্ত ফেরান পরের তিন ব্যাটসম্যানকে। যাঁদের মধ্যে ছিলেন এই ম্যাচের অন্যতম আকর্ষণ যুবরাজ সিংহও। মাত্র এক রান করে বাংলার তরুণ স্পিনারের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান তিনি।
দলের দুই প্রধান স্পিনারের প্রথম শ্রেণির অভিজ্ঞতা যে মোট ২৬ ম্যাচের, তা বোধহয় মনে ছিল না টিম ম্যানেজমেন্টের। আমির গনি ২০টি ও প্রদীপ্তর ছয়। মনোজ তিওয়ারির দলের প্রধান উইকেট সংগ্রহকারীর নাম যে অশোক ডিন্ডা, তাও বোধহয় ভুলে গিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। পরিস্থিতি দেখে মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে, দলের প্রধান অস্ত্র কাজে লাগানোর বদলে সে অস্ত্র ভোঁতা করার ব্যবস্থা করে মাঠে নেমেছে বাংলা।
বোনাস পয়েন্ট নিয়ে ম্যাচ জিততে চেয়েছিলেন মনোজ। দ্বিতীয় দিনে শুভমন গিল ও আনমোলপ্রীত সিংহের ব্যাটিংয়ের পরে পঞ্জাবকে ঘূর্ণি পিচে ফেলার সিদ্ধান্তটাই না বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে। বাঁ হাতি স্পিনার প্রদীপ্ত সকাল থেকেই নেগেটিভ লাইনে বল করে গেলেন। ডিপ মিড-উইকেট, লং-অন, লং-অফ ও ডিপ এক্সট্রা কভার রেখে দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে ‘ওভার দ্য উইকেট’ বল করেন প্রদীপ্ত। যে কারণে পঞ্জাব ব্যাটসম্যানদের এলবিডব্লিউ-র ফাঁদে ফেলার ঝুঁকি কমে যায়। বিপক্ষের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর এর চেয়ে ভাল উপায় আর কী হতে পারে! তার উপর ডিন্ডাকে প্রথম এক ঘণ্টায় মাত্র তিন ওভার বল করানো হল। পিচের স্যাঁতসেঁতে ভাবটাই ব্যবহার করতে পারলেন না বাংলার প্রধান পেসার। দিনের শুরু থেকেই শুভমনদের ভয় কাটানোর ব্যবস্থা করে ফেললেন মনোজেরা। আগের দিন যে পিচে পঞ্জাবের বাঁ হাতি স্পিনার বিনয় চৌধরি ছয় উইকেট পান, সেখানেই বাংলার পেসার মুকেশ নিলেন চার উইকেট। যার অর্থ বাংলার শক্তি তাঁদের স্পিনার নয়, বরং পেসাররাই। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে স্পিন সহায়ক উইকেটে খেলতে গেল কেন বাংলা? বাংলার বোলিংয়ের এই ভুল পরিকল্পনায় ৯১ রান তুলেন নিলেন শুভমন। সারা দিন ব্যাট করলেন আনমোলপ্রীতও। দিনের শেষে তিনি অপরাজিত ১২৪ রানে। এর মধ্যে আবার বল ধরতে না পেরে মনদীপকে স্টাম্পড করার সহজ সুযোগও নষ্ট করেন শ্রীবৎস। ৪৪ রান করা মনদীপ তখন কুড়িতে। মনদীপ-আনমোলপ্রীত জুটি যোগ করে ৮৩ রান।
স্কোরকার্ড
বাংলা ১৮৭(৬৯.১ ওভার)
পঞ্জাব ৩৫৭-৭ (১১০ ওভার)
পঞ্জাব (আগের দিনের ৪৭-২ এর পর প্রথম ইনিংস)
শুভমন ক সুদীপ বো মুকেশ ৯১
আনমোলপ্রীত ব্যাটিং ১২৪
মনদীপ ক অভিমন্যু বো মুকেশ ৪৪
যুবরাজ বো প্রদীপ্ত ১
গুরকীরত ক ডিন্ডা বো প্রদীপ্ত ১২
গীতাংশ খেরা বো প্রদীপ্ত ৪২
বিনয় ব্যাটিং ১০
অতিরিক্ত ২৩
মোট ৩৫৭-৭
পতন: ৩-১২৯ (শুভমন, ৩৮.১), ৪-২১২ (মনদীপ, ৬৮.৬), ৫-২২৮ (যুবরাজ, ৭১.১), ৬-২৪৬ (গুরকীরত, ৭৫.৩), ৭-৩২৬ (গীতাংশ, ৯৯.৩)।
বোলিং: অশোক ডিন্ডা ১৯-৪-৫৫-০, মুকেশ কুমার ২৭-৪-৮৯-৪, প্রদীপ্ত প্রামাণিক ৩৭-৫-১০০-৩, আমির গনি ১৮-১-৬৬-০, ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় ৮-১-২৪-০, অনুষ্টুপ মজুমদার ১-০-৬-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy