অরুণলাল। —ফাইল চিত্র
দিল্লি থেকে এক ব্যক্তি এসে বাংলার ক্রিকেটের মনোভাব বদলে দিয়েছিলেন। যার ফল পাওয়া গিয়েছিল ১৯৮৯ সালে। স্বাধীনতার পরে প্রথম রঞ্জি ট্রফি জিতেছিল বাংলা।
২০১৮-র রঞ্জি ট্রফি মরসুমে সাইরাজ বাহুতুলের প্রশিক্ষণে বাংলা শিবির যখন অথৈ জলে, মেন্টর হিসেবে ফেরানো হল তাঁকে। কঠোর মানসিকতা ও শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে দিলেন বেশ কয়েক জন। কিন্তু তিনি বাকিদের কথার পরোয়া করেন না কোনও সময়েই। দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে যা যা প্রয়োজন, সেটাই করে এসেছেন, আবারও করছেন। তিনি অরুণ লাল। মেন্টর থেকে বাংলার কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয় ২০১৮-১৯ মরসুমে। দায়িত্ব পেয়েই জানিয়ে দেন, ‘‘যারা পারফর্ম করবে, তারাই খেলবে। না পারলে বসতে হবে বাইরে।’’ এই মনোভাবের প্রতিবাদ করেছিলেন দলের কেউ কেউ। তাঁর সামনে কিছু বলার সাহস পাননি।
অরুণের সেই নাছোড় মানসিকতার ফল চলতি মরসুমে পাচ্ছে বাংলা। রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে ওড়িশার বিরুদ্ধে ব্যাকফুটে থেকেও ম্যাচের দখল নেয় অভিমন্যু ঈশ্বরনের দল। শনিবার দুপুরের মধ্যেই প্রথম ইনিংস লিড নিশ্চিত করেন নীলকণ্ঠ দাস, ঈশান পোড়েল, মুকেশ কুমারেরা। শেষ দু’দিন টানা ব্যাট করলেও ক্ষতি নেই। প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকার ফলে সেমিফাইনালে চলে যাবে বাংলা। তিরিশ বছরের ট্রফি খরা মেটানোর লক্ষ্যে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে তারা।
প্রথম ইনিংসে বাংলার ৩৩২ রানের জবাবে ওড়িশা অলআউট ২৫০ রানে। ৮২ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলা। দিনের শেষে দুই উইকেট হারিয়ে তাদের রান ৭৯। কটকের ড্রিমস ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রাণহীন পিচে বিপক্ষকে কম রানে বেঁধে ফেলার কাজ একেবারেই সহজ ছিল না। পিচ প্রস্তুতকারক এক রকম উইকেটের বর্ণনা দিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছেন। বলে গিয়েছিলেন, ‘‘এই পিচ থেকে দুরন্ত বাউন্স পাবেন পেসাররা।’’ ঘটে ঠিক উল্টো। হাঁটুর উপরে বল উঠছে না। তার উপরে ওড়িশা ব্যাটসম্যানদের ধীরে চলো নীতির বিরুদ্ধে উইকেট তোলাও ছিল কঠিন। দ্বিতীয় দিনে দেবাশিস সামন্তরায় ও শান্তনু মিশ্রর ১২৫ রানের জুটি আঁধার নামিয়ে এনেছিল বাংলা শিবিরে। যদিও দিনের শেষে তিন উইকেট ফেলে ম্যাচে ফেরে বাংলা। শনিবার তৃতীয় দিনের শুরু থেকে ফের সাবলীল ব্যাট করে ওড়িশা। নতুন বল নিতে তখনও ১৩ ওভার বাকি।
সকালে পিচের আর্দ্রতা ব্যবহার করে উইকেট নেওয়ার উপায়ও ছিল না। বল এতটাই পুরনো হয়ে গিয়েছিল যে, কোনও সাহায্যই পাওয়া যাচ্ছিল না। অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরন তাই বাঁ-হাতি স্পিনার শাহবাজ আহমেদকে বল করিয়ে দ্রুত ৮০ ওভারে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। অভিমন্যু বলছিলেন, ‘‘চেষ্টা করেছি, যতটা দ্রুত নতুন বল পাওয়া যায়। তা হলে সকালের কিছুটা আর্দ্রতাও ব্যবহার করা যাবে।’’
৮২তম ওভারে নতুন বল নেয় বাংলা। ফিরিয়ে আনা হয় নীলকণ্ঠ দাসকে। তাঁর বলে গতি নেই। কিন্তু প্রথম ডিভিশনে এক দশকেরও বেশি অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উইকেটের সোজাসুজি বল করছিলেন দ্বিতীয় দিন থেকেই। তাতে রানও আটকানো যাবে, ব্যাটসম্যান ভুল করলে আসবে উইকেটও। ৮২তম ওভারের পঞ্চম বলে নীলকণ্ঠের লেগকাটার দেবব্রত প্রধানের (১৫) ব্যাট ছুঁয়ে শ্রীবৎস গোস্বামীর দস্তানায় ধরা পড়ে। ঘুরে দাঁড়ানোর অক্সিজেন পেয়ে যায় বাংলা। ১৯১ রানে পাঁচ উইকেট হারালেও তাদের সেরা জুটি তখন ক্রিজে। অধিনায়ক শুভ্রাংশু সেনাপতির সঙ্গে ব্যাট করছিলেন অভিজ্ঞ বিপ্লব সামন্তরায়। মনেই হচ্ছিল না, বোলারেরা তাঁদের সমস্যায় ফেলছেন।
হঠাৎই স্লিপ থেকে মিড-অফে চলে যান মনোজ তিওয়ারি। মুকেশের হাতে বল দিয়ে কী বেশ বোঝালেন। পপিং ক্রিজের কোণ থেকে বল করার পরিকল্পনা বদলে ফেললেন মুকেশ। একেবারে আম্পায়ারের গা ঘেঁষে বল করতে শুরু করেন। বলের চকচকে দিক লুকিয়ে নেন, যাতে ব্যাটসম্যানের বুঝতে সমস্যা হয়, কোন দিকে সুইং করাবেন। এই রণনীতিই আশীর্বাদ হয়ে আসে বাংলা শিবিরে। ব্যাট নামাতে দেরি করে মুকেশের রিভার্স সুইংয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন বিপ্লব (৩)। উইকেটকিপার রাজেশ ধুপের (১০) উইকেট কামড়ে পড়ে থাকার চেষ্টা করলেও মুকেশের রিভার্স সুইংয়েই পরাস্ত। সেখান থেকে ওড়িশার ফিরে আসার কোনও সুযোগ ছিল না। সূর্যকান্ত প্রধান দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় একটি ছয় ও চার মেরে বাংলা শিবিরে চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। লাঞ্চের পরের ওভারেই মুকেশের ইয়র্কার স্টাম্পে আছড়ে পড়ে তাঁর। ১১ বলে ১৩ রানে ফিরে যেতে হয় তাঁকে। ওড়িশা শিবিরে শেষ দু’টি পেরেক পোতেন ঈশান পোড়েল। কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা শাহবাজ আহমেদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান শুভ্রাংশু (৪৬)। বোল্ড বসন্ত মোহান্তি। তিনটি করে উইকেট নিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন বাংলার তিন পেসার।
বাংলা শিবিরের রণনীতি, শেষ দু’দিন ব্যাট করে যাওয়া। সেই পরিকল্পনা নিয়েই নেমেছিলেন অভিমন্যু ঈশ্বরন (৮৯ বলে ৩০) ও কৌশিক ঘোষ (১৩০ বলে ৪১)। অতিরিক্ত ধীর গতির ব্যাটিং করে বাংলার শিবিরে অযথা চাপ সৃষ্টি করেন তাঁরা। রান রেট বাড়ানোর সুযোগ যখন তৈরি হয়, তখনই আউট হয়ে ফিরে যান দু’জনে। তৃতীয় দিনের শেষ থেকেই পিচে বল ঘুরতে শুরু করেছে। চতুর্থ দিন দ্রুত দুই উইকেট হারালে ফের চাপ সৃষ্টি হবে শিবিরে।
কিন্তু এই বাংলা শিবির হার মানতে শেখেনি। ড্রেসিংরুমে যে তিনি বসে আছেন। যিনি ম্যাচের শেষে দলের হাডলে বলে দিলেন, ‘‘হাল ছাড়ব না। শেষ বল পর্যন্ত ব্যাট করে যাব।’’
স্কোরকার্ড
বাংলা ৩৩২ এবং ৭৯-২
ওড়িশা ২৫০ (১০২.১)
ওড়িশা (প্রথম ইনিংস)
(শুক্রবার ১৫১-৪ এর পরে)
দেবব্রত ক শ্রীবৎস বো নীলকণ্ঠ ১৫•৪৬
শুভ্রাংশু ক শাহবাজ বো ঈশান ৪৬•১০৩
বিপ্লব এলবিডব্লিউ বো মুকেশ ৩•১৬
রাজেশ এলবিডব্লিউ বো মুকেশ ১০•৩৩
সূর্যকান্ত বো মুকেশ ১৩•১১
বসন্ত বো ঈশান ৫•৬
কানওয়ার ন. আ. ৪•২
অতিরিক্ত ৮
মোট ২৫০ (১০২.১)
পতন: ৫-১৯১ (দেবব্রত, ৮১.৫), ৬-১৯৮ (বিপ্লব, ৮৬.৩), ৭-২১৭ (রাজেশ, ৯৭.৩), ৮-২৩৫ (সূর্যকান্ত, ৯৯.৬), ৯-২৪১ (শুভ্রাংশু, ১০০.৫), ১০-২৫০ (বসন্ত, ১০২.১)।
বোলিং: ঈশান পোড়েল ২৭.১-১০-৭২-৩, নীলকণ্ঠ দাস ২১-৮-৪৩-৩, মুকেশ কুমার ২৬-৯-৫১-৩, শাহবাজ আহমেদ ২৩-৫-৬০-১, অর্ণব নন্দী ৫-০-১৭-০।
বাংলা (দ্বিতীয় ইনিংস)
কৌশিক বো সারাঙ্গি ৪১•১৩০
ঈশ্বরন ক পরিবর্ত বো গোবিন্দ ৩০•৮৯
রামন ন. আ. ৪•৩৭
মনোজ ন.আ. ৩•১৪
অতিরিক্ত ১
মোট ৭৯-২ (৪৫)
পতন: ১-৬০ (ঈশ্বরন, ৩০.৫), ২-৭৬ (কৌশিক, ৪১.৩)।
বোলিং: সূর্যকান্ত প্রধান ৯-৩-২০-০, বসন্ত মোহান্তি ৮-৩-১০-০, দেবব্রত প্রধান ৮-৪-৭-০, কানওয়ার সিংহ চৌহান ১০-০-৩১-০, গোবিন্দ পোদ্দার ৮-২-৮-১, অনুরাগ সারাঙ্গি ২-০-৩-১।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy