জুটি: শাহবাজের সঙ্গে উৎসবে নীলকন্ঠ (বাঁ দিকে)। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
‘‘ক্রিকেট ভারী অনিশ্চয়তার খেলা।’’ জনপ্রিয় এই উক্তি আরও এক বার প্রমাণ হয়ে গেল মঙ্গলবার ইডেনে। দিনের শেষ ওভারে পরপর দু’বলে উইকেট নিয়ে বাংলা শিবিরে আশঙ্কার কালো মেঘ সরিয়ে দিলেন শাহবাজ আহমেদ। তৃতীয় দিনের প্রথম বলে গত ম্যাচের হ্যাটট্রিক সংগ্রাহকের কাছে তার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর সুযোগ। সঙ্গে দলের তিন পয়েন্ট সুরক্ষিত করার হাতছানি।
প্রথম দিন ২৮৬-৫ স্কোরে শেষ করার পরে অনেকেই ভেবেছিলেন, বাংলা হয়তো ৪০০ রানের গণ্ডি পেরিয়ে যাবে। কিন্তু দ্বিতীয় দিন মাত্র ৩২ রান যোগ করেন নীচের সারির ব্যাটসম্যানেরা। ৩১৮ রানে শেষ হয়ে যায় মনোজ তিওয়ারিদের ইনিংস। জবাবে ছয় উইকেট হারিয়ে ১৯২ রান দিল্লির। দু’টি করে উইকেট নেন নীলকণ্ঠ দাস, শাহবাজ আহমেদ ও মুকেশ কুমার। দিল্লি এখনও পিছিয়ে ১২৬ রানে। হাতে চার উইকেট।
দিল্লির মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচেই দীর্ঘদিন ক্লাব ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন নীলকণ্ঠ দাস। ৩১ বছর বয়সি এই মিডিয়াম পেসার টানা ১৭ বছর প্রথম ডিভিশন খেলেছেন। শেষ ছ’বছর তাঁর ঠিকানা মোহনবাগান। তার আগে সাত বছর খেলেছেন ইস্টবেঙ্গলে। এ ছাড়াও ভবানীপুর, স্পোর্টিং ইউনিয়নের মতো বড় ক্লাবে পারফর্ম করার পরে রঞ্জিতে সুযোগ পেয়েছেন তিনি। ইডেনে একাধিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। উইকেট সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। প্রথম দিনের তুলনায় প্রাণ হারানো এই পিচে একেবারে উইকেটের সোজাসুজি বল রেখে গেলেন। ব্যাটসম্যান ভুল করলে আর রক্ষে নেই। হয় বল আছড়ে পড়বে তাঁর প্যাডে, নয়তো ছিটকে দেবে স্টাম্প। সেটাই হল। বিপক্ষের দুই ওপেনার কুণাল চাণ্ডেলা (৯) ও হিতেন দালাল (৪০) ফিরলেন নীলকণ্ঠের ইনসুইংয়ের খেই খুঁজে না পেয়ে। অভিষেক ম্যাচে বিপক্ষের দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে নীলকণ্ঠ বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই এই সুযোগের অপেক্ষা করেছি। আজ তা কাজে লাগাতে পেরে ভাল লাগছে।’’ কোচ অরুণ লালও খুশি বঙ্গ পেসারের পারফরম্যান্সে। বলছিলেন, ‘‘যতটা আশা করেছি, ততটাই করেছে ও। ও ভাল বল করলে দিনের শুরুতেই তিন পয়েন্ট নিশ্চিত হয়ে যাবে আমাদের। তার পরে ছয় পয়েন্টের জন্য ঝাঁপাব।’’
শেষ সেশনে ম্যাচের রং পাল্টে দিলেন মুকেশ কুমার। পুরনো বল ও গঙ্গার হাওয়া কাজে লাগিয়ে তাঁর হাত থেকে বেরলো রিভার্স সুইংয়ের জাদু। একেবারে বোকা বানিয়ে ফেরালেন নাইট তারকা নীতীশ রানা (২৪)-কে। ৬৫ রান করে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা অধিনায়ক ধ্রুব শোরে লোভ সামলাতে না পেরে ব্যাট ছুঁয়ে দিলেন মুকেশের বেরিয়ে যাওয়া বলে। শেষ ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে খিতিজ শর্মা ও সিমরনজিৎ সিংহকে আউট করে জয়ের স্বপ্ন ফিরিয়ে আনেন শাহবাজ। তাঁর দ্বিতীয় উইকেট পাওয়ার দৃশ্যই হয়তো দিনের সেরা মুহূর্ত। বাঁ-হাতি স্পিনারের আর্মার ব্যাটের ভিতরের দিকে লেগে চলে যায় ফরোয়ার্ড শর্ট-লেগে দাঁড়িয়ে থাকা কাজি জুনেইদ সৈফির হাতে। বাঁ-দিকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেন তরুণ ক্রিকেটার। কিন্তু দিনের সব চেয়ে বেদনাদায়ক মুহূর্ত অবশ্যই অনুষ্টুপ মজুমদারের রান আউট। ৯৯ রানে মিড উইকেটে ঠেলে সেঞ্চুরির দৌড়ে বাঁধা পড়েন তিনি। সরাসরি উইকেটে বল ছুড়ে অনুষ্টুপকে ফেরান হিতেন দালাল। তার পর থেকেই শাহবাজ (৪৬), আকাশ দীপরা ধৈর্য হারিয়ে মারতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন।
বুধবার সকালের এক ঘণ্টা পিচের আর্দ্রতা কাজে লাগানোর লক্ষ্য বঙ্গ পেসারদের। কিন্তু বল ৬৫.৩ ওভার পুরনো। এখনও ১৪.৩ ওভার পরে নতুন বল নিতে পারবে বাংলা। তাই সকালের এক ঘণ্টায় নতুন বলের সাহায্যে বিপক্ষ শিবিরে কম্পন ধরানো যাবে না। ভরসা রাখতে হবে রিভার্স সুইংয়ের উপরেই। কোচ যদিও বলছিলেন, ‘‘কাল সকালে শাহবাজ যদি হ্যাটট্রিক পূরণ করে, তা হলে এই ম্যাচ থেকেও ছয় পয়েন্ট নিয়ে ফেরা সম্ভব।’’
কিন্তু বাংলার কোচের পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিতে পারে বৃষ্টি। বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ ও গুজরাতের বিরুদ্ধে বৃষ্টিই কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলা শিবিরে। ছয় পয়েন্টের আশা জাগলেও তিন পয়েন্ট নিয়েই খুশি থাকতে হয়েছিল বাংলাকে। অরুণের আশঙ্কা, এ ম্যাচেও না একই দৃশ্য দেখতে হয় তাঁর দলকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলা প্রথম ইনিংস: ৩১৮ (অনুষ্টুপ মজুমদার ৯৯, শ্রীবৎস গোস্বামী ৫৯, শাহবাজ় আহমেদ ৪৬। সিমরনজিৎ ৪-৭৭, বিকাশ মিশ্র ৩-৭৮)। দিল্লি প্রথম ইনিংস: ১৯২-৬ (ধ্রুব শোরে ৬৫। শাহবাজ় ২-১১, মুকেশ ২-৫৭, নীলকণ্ঠ ২-৩৬)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy