অভিনন্দন: ডাবল সেঞ্চুরি করার পরের দিন মনোজের সঙ্গে এক ফ্রেমে সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ। পাশে মেন্টর অরুণ লাল। নিজস্ব চিত্র
চা-বিরতির পাঁচ ওভার পরে একটি ঘটনাই মধ্যপ্রদেশের তিন পয়েন্ট পাওয়ার আশাকে বেশ কিছুটা ক্ষীণ করে দিয়ে গেল। অনুষ্টুপ মজুমদারের বল রক্ষণাত্মক খেলতে গিয়ে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে কৌশিক ঘোষের কাছে ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন নমন ওঝা। দেখা গেল, আম্পায়ার অমিত বনসলের সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে মাথা নাড়তে নাড়তে মাঠ ছাড়ছেন নমন। সেই যে ড্রেসিংরুমে ঢোকেন, দিনের শেষ পর্যন্ত আর বেরোতে দেখা যায়নি। এমনকি, কারও সঙ্গে কথাও বলেননি নমন। দিনের শেষে মধ্যপ্রদেশের এক কর্তাকে দেখা গেল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে অনুরোধ করছেন, তাঁদের ড্রেসিংরুমে এক বার যাওয়ার জন্য। সৌরভ এক বার ঘুরে এলেন।
অধিনায়কের আউটে খুশি নন নমনের সতীর্থ শুভম শর্মাও। তাঁদের ৮৮ রানের জুটিই মধ্যপ্রদেশকে ২৫৪ রানে পৌঁছতে সাহায্য করে। যদিও দিনের শেষে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বেশ কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছে মধ্যপ্রদেশ। কারণ, বাংলার থেকে এখনও ২৫৬ রানে পিছিয়ে রয়েছে তাঁরা। বৃহস্পতিবার প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে তিন উইকেট তুলে নিতে পারলে ফলো-অন হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে নমনদের দলের।
শুভমের কথায়, ‘‘নমনের উইকেটটি সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বলের সঙ্গে নমনের ব্যাটের কোনও যোগাযোগই ছিল না। কিন্তু আম্পায়ারকে দোষারোপ করতে চাই না। ওঁদেরও তো ভুল হতে পারে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নমন আউট হওয়ার পরে আমাদের তিন পয়েন্ট পাওয়ার আশা কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। দেখা যাক, চতুর্থ দিন ফলো-অন বাঁচাতে পারি কি না।’’
আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে নমন ও তাঁর সতীর্থ খুশি না হলেও তিনি আউট ছিলেন বলেই পাল্টা জানিয়ে গেলেন বাংলার কৌশিক ঘোষ। বিতর্কিত ক্যাচ নিয়ে কৌশিকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পরিষ্কার ব্যাটের শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। তাই আম্পায়ারের কাছে আবেদন করেছি। এটা তো করতেই হবে। মধ্যপ্রদেশের প্রধান ব্যাটসম্যান নমন। ওর উইকেটটা সত্যি খুব প্রয়োজন ছিল।’’
নমনের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, বাংলার হাত থেকে ম্যাচ বার করে নিয়ে যাওয়ার রসদ একমাত্র তাঁর কাছেই রয়েছে। ৬৫ রানে মধ্যপ্রদেশের দুই উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে ব্যাট করতে আসেন অধিনায়ক। অশোক ডিন্ডা, আমির গনি, ঈশান পোড়েল, বি অমিতদের সামলে ১৫১ বলে ৭৪ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। রজত পাটিদারের সঙ্গে ৬১ রানের জুটি গড়ার পরে শুভম শর্মার সঙ্গে আরও ৮৮ রান যোগ করেন। কিন্তু নমনের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ান বাংলার পার্ট-টাইম লেগস্পিনার অনুষ্টুপ। তাঁর আউট হওয়ার দু’ওভার পরে শুভম শর্মাকেও ফিরিয়ে দেন অনুষ্টুপ। দিনের শেষে তিনি বলে গেলেন, অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারির নির্দেশেই বল করার জন্য তৈরি ছিলেন তিনি। ‘‘নমন আর শুভমের জুটি ভাঙার দায়িত্ব আমাকে দেয় মনোজ। দু’জনকেই ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাকে লড়াইয়ে ফেরাতে পেরে ভাল লাগছে। চতুর্থ দিনের প্রথম এক ঘণ্টা ভাল জায়গায় বল রাখতে পারলে তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করা যাবে।’’
বাংলার হয়ে দু’টি করে উইকেট নেন ডিন্ডা ও অনুষ্টুপ। একটি উইকেট আমির গনির ঝুলিতে। তৃতীয় দিনের তৃতীয় ওভারেই আর্যমান বিড়লা (১২)-কে ফিরিয়ে দেন ডিন্ডা। ১৭তম ওভারে (ম্যাচের ২৭তম) তাঁর আউটসুইংয়ে পরাস্ত হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান অঙ্কিত দানে। নৈছনপুর এক্সপ্রেসের গতি ও সুইংয়ের মিশেলে হারিয়ে যেতে শুরু করেছিল মধ্যপ্রদেশ। কিন্তু ছন্দের পতন হতে শুরু করে রজত পাটিদারের ক্যাচ পড়ার পর থেকে। ডিন্ডার বলে স্কোয়ার লেগে দাঁড়িয়ে রজত পাটিদারের (৪৯) সোজা ক্যাচ ফেলেন আমির গনি। রজতের রান তখন ছিল ১৪। শেষ পর্যন্ত গনির বলেই ফেরেন তিনি। অফস্পিনারের আদর্শ ডেলিভারিতে ব্যাট ও পায়ের মধ্য দিয়ে বল গলে যায় রজতের। কিন্তু শুধু গনিই নন, ক্যাচ পড়ে অনুষ্টুপ মজুমদারের হাত থেকেও। ঈশান পোড়েলের বলে প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে অঙ্কিত শর্মার ক্যাচ ফেলেন অনুষ্টুপ। তখন চার রানে ব্যাট করছিলেন বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান। দিনের শেষে ৯ রানে অপরাজিত তিনি। ক্রিজে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন যশ দুবে (২০)। সহজ স্টাম্পিংয়ের সুযোগ নষ্ট করেন বিবেক সিংহও। আমির গনির আর্মার বুঝতে না পেরে ড্রাইভ করতে এগিয়ে আসেন শুভম। অফস্পিনারের বল সোজা হয়ে যাওয়ায় ব্যাটসম্যানের মতোই অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন বিবেক। বুঝিয়ে দেন, তিনি বিশেষজ্ঞ কিপার নন।
হালফিলে ইডেনের উইকেটে যে গতি দেখা গিয়েছিল, মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচের তৃতীয় দিন পর্যন্ত তার একাংশও দেখা যায়নি। বাংলার শক্তি তাদের পেস আক্রমণ। কিন্তু তৃতীয় দিনের শেষে সাহায্য পেয়েছেন স্পিনারেরা। বাংলা দলে বিশেষজ্ঞ স্পিনার শুধুমাত্র গনি। সে ক্ষেত্রে অনুষ্টুপ ও মনোজকেও বোলিংয়ের ভার সামলাতে হতে পারে। চতুর্থ দিনে প্রথম এক ঘণ্টাই ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে দিতে পারে। শেষ দিনে বিপক্ষকে আর একশো রানের মধ্যে অল আউট করে ফলো-অন করাতে পারলেই এক মাত্র ছয় পয়েন্টের জন্য ঝাঁপানোর সুযোগ থাকবে। না হলে তিন পয়েন্ট নিয়েই দ্বিতীয় ম্যাচ শেষ করতে হবে মনোজদের।
স্কোরকার্ড
বাংলা ৫১০-৯ (ডি.)
মধ্যপ্রদেশ ২৫৪-৫
মধ্যপ্রদেশ (আগের দিন ১৫-০-এর পর প্রথম ইনিংস)
আর্যমান বিড়লা ক বিবেক বো ডিন্ডা ১২
অঙ্কিত দানে ক বিবেক বো ডিন্ডা ৩৮
রজত পাটিদার বো গনি ৪৯
নমন ওঝা ক কৌশিক বো অনুষ্টুপ ৭৪
শুভম শর্মা ক মনোজ বো অনুষ্টুপ ৪৫
যশ দুবে ন. আ. ২০
অঙ্কিত শর্মা ন. আ. ৯
অতিরিক্ত ৭
মোট ২৫৪-৫
পতন: ১-২২ (বিড়লা, ১২.৪), ২-৬৫ (দানে, ২৬.৫), ৩-১২৬ (পাটিদার, ৪১.৬), ৪-২১৪ (ওঝা, ৭৪.৪), ৫-২২৩ (শুভম, ৭৬.১)।
বোলিং: অশোক ডিন্ডা ১৮-৬-৪২-২, ঈশান পোড়েল ২১-৪-৭১-০, বি অমিত ১৭-২-৫৪-০, আমির গনি ২১-১-৫৯-১, অনুষ্টুপ মজুমদার ৮-০-২০-২, মনোজ তিওয়ারি ১-০-৩-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy