দিন্দার (৬-৪৫) ঝড় কাজে এল না।
অশোক দিন্দা: ৬-৪৫।
অতীত শেঠ: ৭-৩৬।
বরোদা প্রথম ইনিংস: ৯৭ অলআউট।
বাংলা প্রথম ইনিংস: ৭৬ অলআউট।
বরোদা দ্বিতীয় ইনিংস: ৬৩-৩।
বাংলা দ্বিতীয় ইনিংস: ?
শেষের ওই প্রশ্নবোধক চিহ্নেই রাতের ঘুম উড়েছে এখন বাংলা শিবিরের। সাম্প্রতিকে এ রকম অদ্ভুত ম্যাচ তো খেলতে হয়নি কখনও। কারণ উপরের ওই স্কোরটা মোটেও তৃতীয় দিন শেষের নয়।
ওটা প্রথম দিনের!
লাহলিতে যে গ্রিন টপ অপেক্ষা করে থাকবে, জানা ছিল। কিন্তু প্রথম দিনের মধ্যে দুটো ইনিংস শেষ হয়ে তৃতীয় ইনিংসেরও এক-তৃতীয়াংশ শেষ হয়ে যাবে, ভাবা যায়নি।
ভাবা যায়নি, লাহলির পেস-মাইনে একদিনে উড়ে যেতে পারে তেইশটা উইকেট। ভাবা যায়নি, দিন শেষে বাংলাকে বসতে হবে বাঁচার অঙ্ক কষতে। এমন মারণ-উইকেটে দ্বিতীয় ইনিংসে দেড়শোর উপর তাড়া করতে হলে তো নিশ্চিত বিপদ!
বাংলা অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি বলছেন। বাংলা কোচ সাইরাজ বাহুতুলে বলছেন। আতঙ্কের পিচে বঙ্গ ব্যাটিংকে ভরসা দেওয়া সুদীপ চট্টোপাধ্যায়—তিনিও বলছেন।
অথচ সোমবার সকালে পরিষ্কার অ্যাডভান্টেজ বাংলা দেখাচ্ছিল। অশোক দিন্দা তখন আগুন ঝরাচ্ছেন। মাত্র ৪৫ রান খরচ করে তুলে নিয়েছেন ছ-ছ’টা উইকেট! এবং ইউসুফ পাঠান-হীন বরোদা শেষ কত রানে? না, ৯৭। একশোরও নীচে। মাত্র তিরিশ ওভারে।
কে জানত, বাংলা অলআউট হবে তারও কমে, মাত্র ৭৬ রানে? অশোক দিন্দার দর্প ঢেকে দেবেন কোনও এক অতীত শেঠ সাত-সাতটা উইকেট তুলে, মাত্র ৩৬ রান খরচ করে?
সন্ধেয় লাহলি থেকে ফোনে সাইরাজ বাহুতুলে বলছিলেন, এক দিনে তেইশ উইকেট ব্যাপারটা তাঁকেও চমকে দিয়ে গিয়েছে। তেইশ উইকেট কারণ, দু’টো টিমের প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে বরোদার দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুও এ দিনই হয়েছে! এবং তারা ৬৩-৩। লিড এখনই ৮৪ রানের। মঙ্গলবার সকালের প্রথম সেশনে দেড়শোর কমে বরোদাকে না রাখতে পারলে সমূহ বিপদ। ‘‘পিচে ভাল রকম ঘাস ছিল। গত বছরও এতটা দেখিনি। মারাত্মক সিম মুভমেন্ট হচ্ছিল। এক-একটা বল এতটা সিম করেছে যে বোলারও আশ্চর্য হয়ে গিয়েছে,’’ বলছিলেন বঙ্গ কোচ। বাংলা অধিনায়ক আবার ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, পিচে জায়গায় জায়গায় ঘাসের চাপড়া আছে। যেখানে বলের সিম পড়লে ব্যাটসম্যান ড্রাইভ করতে যাচ্ছে এবং ফাঁদে পড়ছে। মনোজর সাফ কথা, ‘‘লাহলি উইকেট ঘরোয়া ক্রিকেটের কঠিনতম। এই উইকেটে ১২০ বা তার বেশি উঠলে আমরা আর পারব না।’’
বাংলা টিম ম্যানেজমেন্টের কেউ কেউ সন্দিহান, লাহলি উইকেট ঠিকমতো তৈরিই হয়নি। এঁরা শুনেছেন যে, এখানে এর আগে একটা মহিলাদের ম্যাচ ছিল। তার পর আর উইকেট তৈরি করা যায়নি। কিন্তু তাই বলে বরোদার ৯৭ টপকানো যাবে না? পিচ ভজঘট ঠিকই, কিন্তু বাংলার টপ অর্ডারকে যিনি এঁফোড়-ওঁফোড় করলেন সেই অতীত শেঠের প্রথম শ্রেণি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা দুই! বাংলার হয়ে সর্বোচ্চ এ দিন সুদীপের ৩৭। বাঁ-হাতি তরুণ ছাড়া দু’অঙ্কে পৌঁছতে পেরেছেন মাত্র এক জন— সায়নশেখর মণ্ডল (১৭)। টিমের বাকি ন’জনের মিলিত স্কোর ২৬। এর মধ্যে রয়েছেন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি (০), অভিমন্যু ঈশ্বরন (৪), অগ্নিভ পান (৯), পঙ্কজ শ (০) এবং শ্রীবৎস গোস্বামী (৩)।
কেন এমন হাল?
‘‘মানছি, আমরা খারাপ ব্যাট করেছি। দিন্দা, মুকেশ এত ভাল করল। তার পর আমরা আরও ভাল ব্যাট করতে পারতাম। বরোদা কুড়ি-তিরিশ রান বেশি করেছে,’’ বললেন সাইরাজ। সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘কাল যে করে হোক আমাদের দু’তিন জনকে দাঁড়াতে হবে।’’
দেখা যাক। অশোক দিন্দার জন্যই বরং খারাপ লাগবে। আজকেরটা ধরলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একুশতম পাঁচ বা তার বেশি উইকেট নেওয়া হয়ে গেল বাংলা পেসারের। বাংলার চারশোতম প্রথম শ্রেণির ম্যাচে। কিন্তু দিনের শেষে তাঁর কৃতিত্ব আর মর্যাদা পেল কোথায়?
পুরোটাই তো চাপা পড়ে গেল বাংলার ব্যাটিং ব্যর্থতা আর লাহলি পিচে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বরোদা ৯৭ (আদিত্য ওয়াঘমোড়ে ১৭, দিন্দা ৬-৪৫, মুকেশ কুমার ৩-৩৯,
অমিত কুইলা ১-১২) ও ৬৩-৩ (কেদার দেওধর ৩৪ ব্যাটিং, মুকেশ ২-২২, কুইলা ১-১৭),
বাংলা ৭৬ (সুদীপ ৩৭, সায়নশেখর ১৩, অতীত ৭-৩৬)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy