মহড়া: রক্ষণ জোরদার করার প্রস্তুতি চলছে বাংলাদেশের। নিজস্ব চিত্র
রোগাসোগা চেহারা, উচ্চতা প্রায় ছ’ফুট। মাঠের মধ্যে যতটা ক্ষিপ্র, মাঠের বাইরে চলাফেরা ততটাই ধীর, স্থির।
অতীতে কাজ করে এসেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামলেই সদা তৎপর থাকেন ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ (এই নামেই বাংলাদেশ জাতীয় দলকে আদর করে ডাকেন তাদের সমর্থকেরা)-এর এই গোলকিপার আশরাফুল ইসলাম রানা।
রবিবার সকালে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন সংলগ্ন মাঠে অনুশীলন শেষ করে ড্রেসিংরুমের দিকে এগোচ্ছিলেন আশরাফুল। তখনই তাঁর দিকে উড়ে এল বাংলাদেশের এক সাংবাদিকের প্রশ্ন—কাতার ম্যাচে ভারতীয় গোলকিপার গুরপ্রীত সিংহ যে রকম ব্যস্ত ছিলেন, মঙ্গলবার তো সে রকম ব্যস্ততাতেই থাকতে হবে আপনাকে। শুনে দাঁড়িয়ে পড়েন অতীতে রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা বাহিনীর হয়ে লাইবেরিয়ায় কাজ করে আসা আশরাফুল। তার পরে প্রশ্নকর্তার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মানিকগঞ্জের ছেলে বলে দেন, ‘‘ভারতের জন্য আমরা তৈরি রয়েছি। অতীত ভুলে যান। মঙ্গলবার কিন্তু একটা নতুন নব্বই মিনিটের ম্যাচ। সেখানে যাদের পরিকল্পনা কাজ করবে, তারাই জিতে ফিরবে।’’
আর সুনীল ছেত্রী, উদান্ত সিংহদের আক্রমণাত্মক ফুটবল থামিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া? এ বার হাসতে থাকেন বাংলাদেশ গোলকিপার। বলে ফেলেন আসল কথাটা। তাঁর মন্তব্য, ‘‘বক্সের আশেপাশে সুনীল ভয়ঙ্কর। ওর কোনাকুনি সব শট, ফ্রি-কিক, পুরনো মুভ গত দু’দিন ধরে হোটেলের ঘরে বসে মন দিয়ে দেখেছি। কোচ গত রাতে সেই সঙ্গেই কাতারের বিরুদ্ধে আমাদের খেলার ভুলভ্রান্তি নিয়ে ভিডিয়ো-ক্লাস করেছেন।’’ যোগ করেন, ‘‘কী ভাবে সুনীলদের বোতলবন্দি করতে হবে সেই সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্যও কোচ দিয়েছেন চার ডিফেন্ডার-সহ আমাকে। আজ হবে ভারতের শক্তি নিয়ে ভিডিয়ো বিশ্লেষণ। আমরা তৈরি সুনীল-উদান্তদের জন্য।’’ তবে বিপক্ষ গোলকিপার ভারতের গুরপ্রীত সিংহ সাঁধুর প্রশংসাও করছেন আশরাফুল। বলছেন, ‘‘কাতারের বিরুদ্ধে গুরপ্রীতের ক্ষিপ্র পারফরম্যান্স দেখেছি। সে দিনটা ওর ছিল।’’
এ দিন বাংলাদেশ অনুশীলন দেখে বোঝা গিয়েছে, ভারতীয় ফরোয়ার্ডদের বল নিয়ে দৌড়নোর জন্য ফাঁকা জায়গা দিতে নারাজ জেমি ডে-র ছেলেরা। সুনীল-উদান্তদের আক্রমণ ভোঁতা করতে বাংলাদেশ রক্ষণে এই দায়িত্ব সামলানোর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন স্টপার ইয়াশিন খান। আর পিছন থেকে রক্ষণ সংগঠনের রিমোট কন্ট্রোল ছিল গোলকিপার রানার হাতে।
নির্দেশ: লক্ষ্যে স্থির বাংলাদেশের কোচ জেমি ডে। নিজস্ব চিত্র
দেড় ঘণ্টার বাংলাদেশ অনুশীলনে জোর দেওয়া হল রক্ষণ জোরদার করায়। বিপক্ষের আক্রমণের সময় বাংলাদেশ মিডফিল্ডার ও ডিফেন্ডাররা কোথায় বিপক্ষকে ‘ব্লক’ করবেন, কে কাকে ‘কভার’ দেবেন, এ সবই ইয়াশিনদের হাতে ধরে দেখাচ্ছিলেন বাংলাদেশ কোচ। পাশাপাশি আক্রমণে ওঠার সময় রক্ষণ ও মাঝমাঠ কতটা ও কী ভাবে উঠবে, সেই মহড়াও হল মিনিট কুড়ি। শেষ মুহূর্তে হল বিপক্ষের কর্নার, ফ্রি-কিকের সময়ে বল বিপন্মুক্ত করার প্রস্তুতি। যা সেরে উঠে রহিম নবির অন্তরঙ্গ বন্ধু ও বাংলাদেশের সহকারী কোচ মহম্মদ মাসুদ পারভেজ কাইসার বলে দিলেন, ‘‘ছেলেদের পইপই করে বলে দেওয়া হয়েছে, ভারতকে তাদের নিজেদের ছন্দে খেলতে দেওয়া চলবে না। মঙ্গলবার প্রথম মিনিট থেকেই তাই আমাদের কাজ হবে ওদের তালটা কেটে দেওয়া। সঙ্গে ম্যাচের দখলটাও নিতে হবে আমাদের। তারই মহড়া হল আজ। সুনীলদের সেট পিস রোখার প্রস্তুতিও সেরে রাখলাম। সোমবার চূড়ান্ত মহড়া হবে।’’
যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে শেষ বার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত খেলেছিল ১৯৮৫ সালের ১২ এপ্রিল। সেটাও ছিল বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ম্যাচ। যে ম্যাচে ২-১ জিতেছিল ভারত। ৩৪ বছর পরে সেই বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ম্যাচ কভার করতে ওপার বাংলা থেকে এ বার ৪০ জন সাংবাদিকের একটা বড় দল এসেছে কলকাতায়। এ দিন অনুশীলনের পরে তাঁদের সামনেই বাংলাদেশের গোলকিপার কোচ ববি মিমস বলে দিলেন, ‘‘সুনীল ছেত্রীদের ভারত আমাদের চেয়ে এগিয়ে। আর এটাই আমাদের বাড়তি প্রেরণা জোগাচ্ছে।’’ ১৯৯৫ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জয়ী ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের সদস্য এই প্রাক্তন গোলকিপার আরও বলছেন, ‘‘ঘরের মাঠে দর্শকঠাসা স্টেডিয়ামে খেলবে ভারত। সুনীলদের নিয়ে ভারতীয়দের প্রচুর প্রত্যাশা রয়েছে। সেই কারণে চাপে রয়েছে ওরাই। আমরা বরং অনেক খোলা মনে খেলতে পারব ভারতের বিরুদ্ধে। সুনীলদের যাবতীয় অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করার জন্য আমরা তৈরি রয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy