Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Ashleigh Barty

Ashleigh Barty: টেনিস ছেড়ে ক্রিকেটে, আবার টেনিসে ফেরা, অ্যাশলে বার্টির জীবন যেন নাটকে মোড়া

অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল অ্যাশলে বার্টির। অস্ট্রেলিয়ার ৪৪ বছরের আক্ষেপ মেটালেন তিনি।

ট্রফি নিয়ে বার্টি।

ট্রফি নিয়ে বার্টি। ছবি রয়টার্স

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:২৫
Share: Save:

সেই ছোটবেলা থেকে টেনিস খেলা শুরু করেছিলেন। এক সময় প্রথম দশেও ঢুকে পড়েছিলেন। সেখান থেকে হঠাৎই টেনিস থেকে বিরতি। বেছে নেন সম্পূর্ণ অন্য ধরনের খেলা ক্রিকেট। খেলে ফেলেন মহিলাদের বিগ ব্যাশ লিগে। এক বছর পর আবার টেনিসে প্রত্যাবর্তন। সেখান থেকেই টানা সাফল্য। অবশেষে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল অ্যাশলে বার্টির। অস্ট্রেলিয়ার ৪৪ বছরের আক্ষেপ মেটালেন তিনি।

১৯৯৬ সালের ২৪ এপ্রিল উত্তর কুইন্সল্যান্ডে জন্ম বার্টির। বাবা এবং মা দু’জনেই গলফের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মা গলফ ছেড়ে দেওয়ার পর রেডিয়োগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছেন। ছোটবেলায় টেনিসের পাশাপাশি নেটবল খেলেছেন বার্টি। তবে একটা সময় টেনিসের উপরই পুরোপুরি নজর দেন। কারণ, তাঁর মনে হয়েছিল নেটবল নাকি শুধু ‘মেয়েদের খেলা’। তাঁর দুই বোন সেই খেলায় অনেক ভাল ছিলেন। সেটাও খেলা ছাড়ার আর একটা কারণ। কিন্তু ছোটবেলায় এক বারও ক্রিকেট খেলেননি তিনি।

মাত্র ৪ বছর বয়সে ওয়েস্টার্ন ব্রিসবেন টেনিস সেন্টারে জিম জয়েসের অধীনে টেনিস খেলায় হাতেখড়ি। ছোটবেলাতেই জয়েস বুঝতে পারেন, বার্টি বাকি পাঁচ জন বাচ্চার মতো নয়। হাত এবং চোখের অসাধারণ সামঞ্জস্য এবং শট মারার দক্ষতা থাকার কারণে ছোট থেকেই বার্টি বাকিদের পিছনে ফেলেছিলেন। ছোটবেলায় বাড়িতেই বসার ঘরের দেওয়ালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বল মেরে যেতেন তিনি। তাঁর থেকে ৬ বছরের বড় ছেলেদের সঙ্গে এক সময় টেনিস খেলা শুরু করেন।

২০১১ সালে ১৪ বছর বয়সে প্রথম বার আন্তর্জাতিক টেনিস সংস্থার নথিভুক্ত ইভেন্টে নেমেছিলেন তিনি। তার আগে অবশ্য জীবনের প্রথম জুনিয়র গ্র্যান্ড স্ল্যাম প্রতিযোগিতা খেলা হয়ে গিয়েছে। সে বছরই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে প্রথম বার জুনিয়র গ্র্যান্ড স্ল্যামে নেমেছিলেন। এর পর ফরাসি ওপেনে দ্বিতীয় রাউন্ডে হেরে যান। কিন্তু উইম্বলডনে আটকানো যায়নি তাঁকে। জিতে নেন জুনিয়র গ্র্যান্ড স্ল্যাম। ১৯৮০ সালে ডেবি ফ্রিম্যানের পর প্রথম অস্ট্রেলীয় হিসেবে এই খেতাব। মহিলাদের টেনিস সংস্থা ডব্লিউটিএ-র বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলতে খেলতে একসময় সিঙ্গলসের র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দুশোয় ঢুকে পড়েন তিনি। ২০১৩-য় প্রথম বার কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম ম্যাচ জেতেন। ফরাসি ওপেন ইউএস ওপেনের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতেছিলেন তিনি। ডাবলসেও একই সঙ্গে উত্থান হতে থাকে। তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠেছেন। একটি ডব্লিউটিএ খেতাব জেতেন।

২০১৪ ইউএস ওপেনের পরে আচমকা টেনিস থেকে বিরতি নিয়ে নেন বার্টি। তখন বলেছিলেন, ছোটবেলা থেকে এত যাতায়াত করতে করতে তিনি ক্লান্ত। এ বার একটু বিশ্রাম নিতে চান। ২০১৫-র শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়ার মহিলা ক্রিকেট দলের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকেই ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা জাগে মনে। সেই সময়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলার কোনও অভিজ্ঞতাই ছিল না তাঁর। এই সময়ই বিগ ব্যাশ লিগে ব্রিসবেন হিট ক্রিকেট দলের কোচ অ্যান্ডি রিচার্ডসের সঙ্গে পরিচয় হয়ে যায়। টেনিস খেলার জন্য বার্টির হাতের জোর এমনিতেই ভাল ছিল। ফলে ক্রিকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয়নি। তাঁর শটের তীব্রতা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন অ্যান্ডি। কিছুদিন পরেই কুইন্সল্যান্ড ফায়ার দলের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করেন বার্টি। মহিলাদের প্রিমিয়ার ক্রিকেট টি-টোয়েন্টি লিগের ওয়েস্টার্ন সাবার্বান ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলতে থাকেন। দু’টি অর্ধশতরান করেন। সেই বছরই প্রথম চালু হয়েছিল মহিলাদের বিগ ব্যাশ লিগ। সেখানে ব্রিসবেন হিটের হয়ে একটি ম্যাচে মেলবোর্ন স্টারসের বিরুদ্ধে ২৭ বলে ৩৯ রান করেন। সেই মরসুমে দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন তিনি। তবে ব্যাট হাতে খুব একটা রান পাননি।

২০১৬-র ফেব্রুয়ারিতে আবার টেনিসে ফেরেন বার্টি। প্রথম দিকে শুধু ডাবলস খেলছিলেন। মে মাসে সিঙ্গলসে নামেন। ২০১৭-য় অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডে উঠেছিলেন। সে বারই সিনসিনাটি ওপেনে বিশ্বের ৯ নম্বর খেলোয়াড় ভেনাস উইলিয়ামসকে হারিয়ে দেন। ইউএস ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডে ওঠেন। তবে বার্টির জীবনের সেরা বছর ২০১৯। বছরের শুরুতেই সিডনি আন্তর্জাতিকের ফাইনালে ওঠেন। বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় সিমোনা হালেপকে হারিয়েছিলেন সে বার। ফরাসি ওপেনের আগে মাত্র দু’টি সুরকির কোর্টের প্রতিযোগিতায় খেলেছিলেন। কিন্তু ফরাসি ওপেনে চমকে দেন গোটা বিশ্বকে। র‌্যাঙ্কিংয়ে ক্রমশ উন্নতি হতে থাকে তাঁর। এরপর বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলে এবং জিতে বছরটা শেষ করেন বিশ্বের এক নম্বর মহিলা টেনিস খেলোয়াড় হিসেবেই।

কোভিডের কারণে ২০২০ খুব একটা ভাল যায়নি তাঁর। কিন্তু ২০২১-এ আবার পুরনো ছন্দে দেখা যায়। দুর্দান্ত খেলেন ঘাসের কোর্টে। জিতে নেন উইম্বলডন। ২০২২-এর শুরুটাও হল স্বপ্নের মতোই। ক্রিস ও’নিলের পর প্রথম অস্ট্রেলীয় হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতলেন বার্টি। বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় হিসেবেও নিজের জায়গা পোক্ত করলেন। নিজের পছন্দের জায়গা ঘাসের কোর্ট হলেও হার্ড কোর্টে তাঁর সাফল্য বেশি। ছোটবেলা থেকে ঘাসের কোর্টে খুব একটা খেলেননি বলে প্রথম দিকে একটু ভয় পেয়েছিলেন। সুরকির কোর্ট এবং ঘাসের কোর্টে আগেই গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা হয়ে গিয়েছিল। এ বার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতার সঙ্গে হার্ড কোর্টেও সাফল্য পেলেন বার্টি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE