ইতিহাসের সামনে নাদাল। ছবি রয়টার্স
গত বছরের উইম্বলডন শেষ হওয়ার পরে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল গোটা বিশ্বের টেনিসমহলে। বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতবেন কে? বলার অপেক্ষা রাখে না, গোটা বিশ্বই প্রায় ভোট দিয়েছিল নোভাক জোকোভিচের পক্ষে। গত বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, রোলঁ গারোজ এবং উইম্বলডন জিতে ‘হ্যাটট্রিক’ করার পর ইউএস ওপেনও যে সার্বিয়ার বেলগ্রেডের বাড়িতে যেতে চলেছে তা নিয়ে কেউই বিশেষ সংশয় প্রকাশ করছিলেন না।
গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন নাদাল। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে ক্রাচ নিয়ে হাঁটাচলা শুরু করতে দেখা গিয়েছিল। সেই দিনই নিউ ইয়র্কে ফাইনালে উঠে পড়েন জোকোভিচ। ইতিহাস গড়ার থেকে মাত্র এক ম্যাচ দূরে ছিলেন তিনি।
তবে ইতিহাস কখনও সোজা পথে চলে না। নিউ ইয়র্কের আর্থার অ্যাশ কোর্টে সে দিন জোকোভিচের স্বপ্ন যিনি ভেঙে দিয়েছিলেন, সেই ড্যানিল মেদভেদেভই এ বার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন নাদালের নজিরের সামনে। রবিবার আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে নাদালকে জিততে গেলে এক রাশিয়ানের প্রবল জেদ এবং আগ্রাসন সামলাতে হবে। ঘটনাচক্রে, যিনি তাঁর থেকে দশ বছরের ছোট।
নাদাল নিজেও কি কোনও অংশে পিছিয়ে? গোড়ালির চোট তাঁকে ছোটবেলা থেকেই ভুগিয়েছে। কিন্তু কেরিয়ারের শেষ দিকে এসে তা যেন কিছুতেই স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছিল না। ২০২০-তে ফরাসি ওপেনের পর আর একটিও গ্র্যান্ড স্ল্যাম ঢোকেনি নাদালের ক্যাবিনেটে। শুধু তাই নয়, এ বারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তাঁর খেলা নিয়েই বিরাট সংশয় তৈরি হয়েছিল। ক্রাচ ছেড়ে হাঁটাচলা শুরু করার পর যখন কোর্টে সবে অনুশীলন শুরু করেছেন, তখনই আক্রান্ত হলেন কোভিডে। এই ঘটনা তাঁকে শুধু শারীরিক ভাবে নয়, মানসিক ভাবেও ভেঙে দিয়েছিল।
It's a sixth #AusOpen final for @RafaelNadal 🙌
— #AusOpen (@AustralianOpen) January 28, 2022
He outlasts Matteo Berrettini in a 6-3 6-2 3-6 6-3 thriller 👏 #AusOpen · #AO2022
🎥: @wwos · @espn · @eurosport · @wowowtennis pic.twitter.com/UIbtfGbKvq
জানুয়ারির শুরু থেকে টেনিসবিশ্ব উত্তাল জোকোভিচকে নিয়েই। টিকা না নিয়ে সে দেশে পা রাখা, অভিবাসন দপ্তরের হাতে ‘বন্দি’ হয়ে যাওয়া, আদালতে একের পর এক মামলা এবং হার, সব শেষে দেশে প্রত্যাবর্তন। এত সব কিছুর মাঝে নাদালকে নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। তিনি নিশ্চুপে সে দেশে পা রেখেছেন, অ্যাডিলেডে প্রস্তুতি প্রতিযোগিতা জিতেছেন এবং এখন তিনি ইতিহাস গড়ার থেকে এক ম্যাচ দূরে।
এত কিছুর পরেও স্পেনীয় খেলোয়াড় যেন অদ্ভুত ভাবে শান্ত। আরও একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে নজির গড়া নয়, বরং চোট সারিয়ে টেনিসে ফিরতে তিনি বেশি খুশি। বলেছেন, “আমি সব সময় খুশি থাকতে চাই। টেনিস খেলতে পেরে আমার যে রকম খুশি হয়, তা আর কোনও কিছুতেই হয় না। আমার কাছে আর একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার থেকে টেনিসে ফেরাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এক বার যে টেনিস খেলার সুযোগ পেলাম, সেটার জন্যেই আমি বেশি কৃতজ্ঞ।”
মেদভেদের নাদালের পুরনো শত্রু। ২০১৯-এর ইউএস ওপেন ফাইনালে পাঁচ সেটের দুরন্ত ফাইনালে নাদালের কাছে হেরেছিলেন তিনি। গত বছরের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে জোকোভিচের কাছে হারেন। ইউএস ওপেনে জোকোভিচের রথ থামিয়ে দেন। এ বার তাঁর সামনে নাদাল। মেদভেদেভ বলেছেন, “জানি বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে খেলতে চলেছি। আবার একজনের মুখোমুখি আমি যে ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম পাওয়ার জন্যে লড়ছে। বেশ মজার ব্যাপার তাই না? তবে ওদের রেকর্ড নিয়ে ওরা ভাবুক। আমি আর একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে চাই।”
প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই বিভিন্ন বাধা টপকাতে হয়েছে মেদভেদেভকে। দ্বিতীয় রাউন্ডে নিক কিরিয়সের বিরুদ্ধে ম্যাচের সময় অস্ট্রেলিয়ার ভয়ঙ্কর সমর্থকদের বিদ্রুপের মুখে পড়েছিলেন তিনি। সেমিফাইনালে আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়ানোয় জরিমানা হয়েছে। কিন্তু ফেডেরার-নাদাল-জোকোভিচ— এই ত্রয়ীর বাইরে সব থেকে সম্ভাবনাময় হিসেবে ধরা হচ্ছে তাঁকেই। আলেকজান্ডার জেরেভ, আন্দ্রে রুবলেভ বা স্টেফানোস চিচিপাসরা এখনও নিজের জায়গা মজবুত করতে পারেননি। নাদালকে রবিবার হারানোই শুধু নয়, পুরুষদের টেনিসে তারুণ্যের দাপটকে প্রতিষ্ঠিত করাও মেদভেদেভের কাছে চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy