এটিকেতে সই পস্তিগার।
কাকা, দ্রোগবা, ফোরলান। গত কয়েক মাসে বিশ্বের অনেক তাবড় ফুটবলারের নাম যুক্ত করা হয়েছে আটলেটিকো দে কলকাতার সঙ্গে। যদিও শেষমেশ আইএসএলের দ্বিতীয় সংস্করণে কলকাতা তার মার্কি ফুটবলারের সিংহাসনে বসিয়েছে ৩২ বছরের হেলডার পস্তিগাকে।
নামটা শুনলেই প্রথমে এটিকেপ্রেমীদের হয়তো মনে হবে, কে এই পস্তিগা? কেন কোনও নক্ষত্র ছেড়ে এমন একজনকে মার্কি বাছল কলকাতা? লুই গার্সিয়ার মতো প্লেমেকারের বদলে কতটা উপযুক্ত একজন নিখাদ স্ট্রাইকার?
পস্তিগার কেরিয়ারের দিকে তাকালে দেখা যাবে মোরিনহোর মতো মহাকোচের হাতে তৈরি তিনি। ‘দ্য স্পেশ্যাল ওয়ান’ ফুটবলারের মধ্যে যে গুণগুলো দেখতে ভালবাসেন, সেই সব কিছুই আছে পস্তিগার মধ্যে। ক্রমাগত উপর-নীচ করার ক্ষমতা। ফরোয়ার্ড হয়েও নিজেদের ডিফেন্স সামলাতে পারা। সঠিক সময় সঠিক জায়গায় থাকার দক্ষতা। যে মরসুমে (২০০২-’০৩) উয়েফা কাপ সমেত ত্রিমুকুট জিতেছিল পোর্তো, সে বার ১৯ গোল করেছিলেন পস্তিগা।
তা ছাড়া, গত বার সেমিফাইনাল-ফাইনালে স্ট্রাইকার ছাড়াই খেলতে বাধ্য হয়েছিলেন হাবাস। ফিকরুর সঙ্গে তীব্র মনোমালিন্যের জেরে। যে জন্য এ বার স্প্যানিশ কোচের আরওই বেশি টার্গেট ছিল দলে ভাল বিদেশি স্ট্রাইকার নেওয়ার। পারলে একাধিক। সেই মতোই হাবাসের হাতে এই মুহূর্তে কানাডিয়ান ইয়ান হিউমের পাশাপাশি পস্তিগাও।
গার্সিয়ার থেকে শারীরিক ভাবেও বেশি শক্তিশালী পস্তিগা। যাঁর ফুটবলের পাঁচ ফ্যাক্টর— বল ধরে রাখা। ভাল পাসিং। ড্রিবলিং। দূরপাল্লার শট। সর্বোপরি বল কন্ট্রোল। এটিকে সমর্থকরা হয়তো তুলনায় নিয়ে আসবেন প্রাক্তন মার্কি গার্সিয়াকে। কিন্তু দু’জনের খেলা দুই ঘরানার। গার্সিয়া যেন সূঁচের মধ্যেও বল গলাতে পারতেন। পস্তিগা আবার খুব ডিরেক্ট। বল পেলেই তেকাঠিতে শট মারেন। সেট পিসেও ভয়ঙ্কর।
কলকাতার মার্কি হওয়ার দৌড়ে পস্তিগার সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাতারকা ডোনোভান। তিনিও স্ট্রাইকার। তবে ৩১ জুলাই ছিল মার্কি বাছার শেষ দিন। তার দু’দিন আগেও ডোনোভানের থেকে কোনও সদুত্তর না পাওয়ায় পস্তিগাকে বুধবার চুক্তিবদ্ধ করে ফেলল এটিকে।
গত মরসুমের মার্কি গার্সিয়া এসেছিলেন অবসরজীবন ভেঙে। তাঁর কেরিয়ার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পস্তিগা কলকাতার দলে খেলবেন তাঁর আন্তর্জাতিক কেরিয়ার চলার মাঝেই। মানে তিনি অনেক বেশি ম্যাচ ফিট রয়েছেন। আইএসএল টু-র প্রত্যেকটি মার্কি ফুটবলারের মধ্যে বয়সেও সবচেয়ে ছোট পস্তিগা। গত বছর অনেক মার্কি ফুটবলার নব্বই মিনিট খেলতে পারছিলেন না। গার্সিয়াও চোট সমস্যায় ভুগেছেন। সেই সব মাথায় রেখে কম বয়সি মার্কি চেয়েছিলেন এটিকে কোচ হাবাস। টিমের স্পোর্টিং ডিরেক্টর আলবার্তো মারেরো লন্ডনে গিয়ে সই করান পস্তিগাকে। সেখানে ছুটি কাটিয়ে সরাসরি মাদ্রিদে এটিকে ক্যাম্পে যোগ দেবেন পস্তিগা।
এটিকের পরামর্শদাতা ভাইচুং ভুটিয়া বলছিলেন, ‘‘পস্তিগাকে মার্কি করার কারণ, ও পুরো ম্যাচ খেলতে পারবে। অন্য টিমের মার্কিদের চেয়ে ওর বয়স কম।’’ টিমের অন্যতম ডিফেন্ডার অর্ণব মণ্ডলও বললেন, ‘‘গার্সিয়ার মতো পস্তিগাও খুব ভাল প্লেয়ার। ইউরোপিয়ান ফুটবলে অনেক বড় ম্যাচ খেলেছে।’’ কোচ হাবাস বলেছেন, ‘‘পস্তিগাকে পেয়ে কলকাতা আরও শক্তিশালী হল।’’
শুধুমাত্র পর্তুগিজ লিগ নয়। লা লিগা, প্রিমিয়ার লিগেও খেলে পস্তিগা প্রমাণ করেছেন, যে কোনও ঘরানার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন। ইউরো ২০০৪-এ পর্তুগালকে ফাইনালে উঠতে সাহায্য করেছিলেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে গোলও ছিল তাঁর। গত ব্রাজিল বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে ছয় গোল করেছেন।
সব মিলিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালের সতীর্থ এবং মোরিনহোর প্রাক্তন ছাত্রের সঙ্গে যদি হিউমের জুটি হয়, এটিকে সমর্থকরা ‘ফাটাফাটি ফুটবল’ আশা করতেই পারেন এ বার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy