গত দু’দিন শপিংমলে, বাজারে পরিচিতদের কাছ থেকে একটা প্রশ্ন খুব শুনছি। ফোরলান না থাকায় হিউম-পস্টিগারা আইএসএলের অ্যাওয়ে সেমিফাইনালে কতটা সুবিধা পাবে?
আমার মতে, দিয়েগো ফোরলান না থাকায় ফাইনাল যাওয়ার ব্যাপারে অ্যাডভান্টেজ কলকাতার।
কেন? মুম্বইয়ের কাছে মঙ্গলবারের ম্যাচটা কিন্তু বেশ চাপের। প্রথমত এ বারই প্রথম সেমিফাইনাল খেলছে ওরা। তার উপর অ্যাওয়ে সেমিফাইনাল এক গোলে হারার পর ঘরের মাঠে ওদের সামনে পড়ে রয়েছে ৯০ মিনিট। সেখানে বোরহা-নাতোরা কিন্তু এই ধরনের বড় ম্যাচ খেলে আসছে গত তিন বছর ধরে। আর তার পাঁচটার মধ্যে কলকাতা হেরেছে মাত্র এক বার। গত বছর পুণেতে চেন্নাইয়ের কাছে। কাজেই এই চাপের সঙ্গে লড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে কলকাতার।
নিজে এ দেশের ফুটবলে একটু-আধটু খেলেছি বলেই জানি এটা একটা বিশাল চাপ। এ রকম পরিস্থিতিতে দলে সব সময় একজন লিডার দরকার। যে মাঠে খেলা চলাকালীন টিমকে ফোকাসড রাখবে। ঝিমিয়ে পড়তে দেবে না। মুম্বইকে মঙ্গলবার মাঠে মোটিভেশন জোগানোর এই কাজটা করতে পারত ফোরলান। ছ’বছর আগে ওর সঙ্গে একটা বড় সময় (টানা তিন দিন) কাটানোর সুবাদে জানি ও কত বড় একটা অনুপ্রেরণা হতে পারে সতীর্থদের কাছে। বিশেষ করে সুনীল-সনিদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনার জন্য। কিন্তু মুম্বই এই মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা পাচ্ছে না।
সোমবার সকালে দেখলাম এটিকের লালরিন্দিকা বলেছে, বোরহা আর পস্টিগা ওদের চাপে পড়তে দেয় না। মুম্বইয়ে যে সেই কাজটা করে তাকে তো পাবে না মুম্বই। আরও একটা ব্যাপার, ফোরলান এ বারের আইএসএলে খুব একটা দৌড়ঝাঁপ করেনি। স্রেফ ফুটবল সেন্সটা কাজে লাগিয়েই পাঁচটা গোল করে গিয়েছে। এমনিতেই উরুগুয়ের প্লেয়াররা স্কিলের সঙ্গে পাওয়ারটা মিশিয়ে দেয়। ফলে মাঝমাঠে সেকেন্ড বলের জন্য ধাক্কাধাক্কির সময় মুম্বইতে অ্যাডভান্টেজ কলকাতারই। বেশ কয়েকটা ম্যাচে হাইন্ড স্ট্রাইকার হিসেবে ফোরলানকে দেখেছি দুই উইংকে ঠিকানা লেখা পাস বাড়াতে। এ বার তা হবে না। এছাড়াও যেটা ওর ইউএসপি, সেই বিষাক্ত সুইং মেশানো ফ্রিকিক বা বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে গোলের দরজা চকিতে খুলে ফেলতে পারবে না মুম্বই।
এর সঙ্গে মুম্বই পাবে না ফোরলানের তুখোড় ফুটবল মস্তিষ্কও। চোখ বুজলেই দেখতে পাচ্ছি গত শনিবার রবীন্দ্র সরোবরে ওর ফ্রিকিক থেকে ভিয়েরার গোলটা। ফ্রিকিকটা যখন মারতে যাচ্ছে তখন ফোরলান এমন ভাবে ডান দিক ঘেঁষে দাঁড়াল দেখে মনে হল বাঁ পায়ে ইনসুইঙ্গার মারবে। পাঁচিল তৈরি হয়ে যাওয়ার পর দেখলাম বাঁ দিকে সরে এসে ডান পায়ে ইনসুইঙ্গার মেরে বিভ্রান্ত করে দিল কলকাতা ডিফেন্সকে। এটাই দিয়েগো ফোরলান। এ রকম ধূর্ত এক জন প্লেয়ার বিপক্ষে না থাকলে যে কোনও টিমই স্ট্র্যাটেজিগত ভাবে সুবিধা পাবে। আশা করি এটিকেও সেই ফায়দা তুলবে।
এ পর্যন্ত পড়ে অনেকেই হয়তো প্রশ্ন তুলবেন, মুম্বইতে গ্রুপ লিগের ম্যাচেও তো কলকাতার বিরুদ্ধে ফোরলান খেলেনি। কিন্তু তাতেও তো কলকাতা জিতে ফিরতে পারেনি। উত্তরে বলি, ওটা ছিল গ্রুপের ম্যাচ। আর এটা মুম্বইয়ের কাছে ডু অর ডাই সেমিফাইনাল। দু’টো ম্যাচের অঙ্ক কিন্তু একদম আলাদা। মুম্বই এক্ষেত্রে সনি-দিফেদেরিকো-সুনীলদের নিয়ে টিম গেমে কলকাতাকে প্যাঁচে ফেলার চেষ্টা করবেই। তবে সেটার জন্য কিন্তু মলিনার মাঝমাঠ ও ডিফেন্স তৈরি আছে।
কেন ডিফেন্সকে তৈরি বললাম? রবীন্দ্র সরোবরে ফোরলান ৭৪ মিনিট পর্যন্ত মাঠে থাকা সত্ত্বেও এটিকে ডিফেন্স দ্বিতীয়ার্ধে কোনও ভুলচুক করেনি। এতে এটিকে ডিফেন্সের কনফিডেন্স তো বাড়বেই। উল্টে ফোরলান না থাকার মনস্তাত্ত্বিক সুবিধাটাও সুদে-আসলে নেবে সেরেনো-প্রীতমরা।
মুম্বইয়ের মাঠে আজ তিন যুদ্ধ
• গারসন ভিয়েরা বনাম হেল্ডার পস্টিগা: মুম্বই ডিফেন্সের অন্যতম স্তম্ভ। ইউএসপি ট্যাকল এবং ক্লিয়ারেন্স। পস্টিগা করেছেন দু’গোল। সতীর্থদের গোলের ঠিকানা লেখা পাস বাড়াতে সিদ্ধহস্ত।
• লিও কোস্তা বনাম সামিঘ দ্যুতি: মুম্বই মাঝমাঠের ভরসা কোস্তা দ্রুত পৌঁছে যান অ্যাটাকিং থার্ডে। এটিকের দ্যুতি রাইট উইংয়ে বিপক্ষের ত্রাস তাঁর পাসিং, ড্রিবলিং এবং ক্রসিংয়ের জন্য।
• সুনীল ছেত্রী বনাম প্রবীর দাস: ফোরলানের অনুপস্থিতিতে মুম্বইয়ের ম্যাচ উইনার সুনীল স্কোরিং জোনে গোলের গন্ধ পান। এটিকের রাইট ব্যাক প্রবীর কড়া ট্যাকলে বল কাড়ার সঙ্গে ওভারল্যাপে খুলে ফেলেন গোলের দরজা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy