Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ফোরলান বিদায়ে তেতে কলকাতা, স্বস্তিতে মুম্বই

ছবিটা এখনও লোকের মনে আছে। জার্মানির ক্রসবারে চুম্বন করে ছিটকে যাচ্ছে বল, আর তিনি কোনও দিকে না তাকিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থানের ম্যাচ কেউ ভোলেনি, ভোলেনি তাঁর সে দিনের অভিব্যক্তি।

জোসে মলিনা যখন জোসে মোরিনহো। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

জোসে মলিনা যখন জোসে মোরিনহো। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

প্রীতম সাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৪
Share: Save:

ছবিটা এখনও লোকের মনে আছে। জার্মানির ক্রসবারে চুম্বন করে ছিটকে যাচ্ছে বল, আর তিনি কোনও দিকে না তাকিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থানের ম্যাচ কেউ ভোলেনি, ভোলেনি তাঁর সে দিনের অভিব্যক্তি। মাথা নিচু। হেয়ারব্যান্ডটা চেপে ধরছেন মাঝে-মাঝে।

দিয়েগো ফোরলান নিশ্চুপ।

শনিবার মাথায় কোনও ব্যান্ড ছিল না। কিন্তু মাথা ঠিক ছ’বছর আগের দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের মতোই। নিচু। টিম বাসে ওঠার আগে ঝাঁকড়া চুলের ফাঁকফোঁকড় দিয়ে চারপাশটা দেখলেন একবার। কী দেখলেন কে জানে, শুধু দৃষ্টিকে জড়িয়ে থাকা হতাশাটা বোঝা গেল।

দিয়েগো ফোরলান আবার নিশ্চুপ।

মুম্বইয়ে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্বে আর নেই তিনি। ফাইনালে যদি ওঠে মুম্বই, উরুগুয়ে বিশ্বকাপারকে দেখা যাবে। নইলে নয়। কিন্তু দিয়েগো ফোরলান না থেকেও যেন প্রবল ভাবে আছেন। আছেন দুই টিমের দুই কোচের মননে, কথাবার্তায়।

আজ আইএসএলে

দ্বিতীয় সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে মুখোমুখি কেরল ব্লাস্টার্স ও দিল্লি ডায়নামোস

(স্টার স্পোর্টস ১ সন্ধে ৭-০০)

জোসে মলিনা যে উল্লসিত হবেন, স্বাভাবিক। এটিকে কোচ তিনি। বিশ্বকাপারকে দুর্দান্ত ভাবে আটকেও দিয়েছেন। কিন্তু মুম্বই কোচ? গুইমারেস? আশ্চর্যের হল, মুম্বইয়ে ফোরলান পাবেন না জেনেও তাঁর কোনও টেনশন নেই।

বরং মলিনারই মতো স্বস্তি আছে!

এটিকে কোচ রবীন্দ্র সরোবরে জিতে সদম্ভ গর্জন ছাড়লেন যে, মুম্বইয়ে অ্যাডভান্টেজ এটিকে। ‘‘ফোরলান না থাকায় আমরা সুবিধে তো পাবই। ওর মতো মার্কি মাঠে থাকলে সব সময় বাড়তি তটস্থ থাকতে হয়,’’ বলছিলেন মলিনা। মজার হল, ফোরলান না থাকায় সুবিধে নাকি মুম্বই কোচেরও হচ্ছে! গুইমারেসের দাবি, ‘‘ফোরলান না থাকায় কোনও অসুবিধা হবে না। বরং ওর জায়গায় যে ফুটবলার খেলবে, সে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবে। তাই পরিশ্রমও বেশি করবে।’’

আসল কারণটা শোনা গেল। গুইমারেস একটু অসন্তুষ্ট ফোরলানের ফিটনেস নিয়ে। সেট পিসের দক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। ফ্রিকিক পেলে এখনও অতীতের মতোই ফোরলান মায়াবী, ভয়ঙ্কর সুন্দর। কিন্তু শুধু ফ্রিকিক দিয়ে তো আর ফুটবল চলে না। তাতে গতি লাগে, লাগে ফিটনেস। সাঁইত্রিশ বছরের ফোরলান স্বাভাবিক নিয়মেই তা আর পারছেন না। কিন্তু আবার আইএসএলের সবচেয়ে দামি ফুটবলারকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখাও বা যায় কী ভাবে? আর যাই হোক, গুইমারেস তো আর হাবাস নন!

এটিকে আবার দু’টো জিনিস চাইছে। এক, সেট পিস থেকে গোল হজম বন্ধ করা। ডিফেন্সকে আরও নিশ্ছিদ্র করা। দুই, ফুটবলারদের ক্লান্তি তাড়ানো। ফাইনালে উঠলে সেরা টিমকে তাজা রাখা। যে কারণে মুম্বইয়ের ফিরতি লেগে বেশ কিছু পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। মলিনা বললেন, ‘‘উইনিং কম্বিনেশন বলে আবার কিছু হয় নাকি? একটা গ্রেট টিম তখনই হয়, যখন তার চব্বিশ জন প্লেয়ারই ফিট থাকে।’’ ফাইনাল..কোচি...শব্দগুলো বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলছে না এটিকে কোচের মনে। বললেন, ‘‘ও সব কোচিতে গেলে ভাবব।’’ মলিনা বুঝিয়ে দিলেন ভবিষ্যৎ নয়, তিনি বেঁচে থাকেন বর্তমানে। ফাইনালের সুখস্বপ্নের চেয়েও তাঁকে বেশি তৃপ্তি দেয় ফোরলানকে ফাউল না করেও শুধু কূটনৈতিক বুদ্ধিতে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া! বললেনও, ‘‘ফোরলানকে আমরা লাথিও মারিনি। ফাউলও করিনি। শুধু বল সাপ্লাই কেটে দিয়েছি। ব্যস, গুমরে-গুমরে হতাশায় শেষ হয়ে গেল। একটা কোচের কাছে এটা যে কত বড় পাওনা বলে বোঝাতে পারব না।’’

বলে বোঝানোর প্রয়োজন কী? কেউ না হোক, অন্তত কোনও এক দিয়েগো ফোরলান তো হাড়ে-হাড়ে বুঝলেন!

অন্য বিষয়গুলি:

ATK Forlan ISL 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE