Advertisement
E-Paper

ফুটবল-পূজাকে নিয়ে নতুন স্বপ্নের সরণিতে ক্রোমা

আগোগো নামে কেউ তাঁকে চেনেন না ভারতে। কলকাতা ময়দান তাঁকে চেনে ঘানেফো আনসুমানা নামেই। যা তাঁর প্রয়াত বাবার নাম। ময়দানে তিনি পরিচিত ক্রোমা নামে।

প্রেরণা: অনুশীলনে ছুটি। হবু স্ত্রী পূজার সঙ্গে একান্তে ক্রোমা। নিজস্ব চিত্র

প্রেরণা: অনুশীলনে ছুটি। হবু স্ত্রী পূজার সঙ্গে একান্তে ক্রোমা। নিজস্ব চিত্র

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৯ ০৪:০৯
Share
Save

পেশা তাঁর ফুটবল। আর নেশা বাঙালির রসগোল্লা, সন্দেশ! নাম আগোগো। বাড়ি অতলান্তিক মহাসাগরের পারে লাইবেরিয়ার রাজধানী মনরোভিয়ায়!

যদিও আগোগো নামে কেউ তাঁকে চেনেন না ভারতে। কলকাতা ময়দান তাঁকে চেনে ঘানেফো আনসুমানা নামেই। যা তাঁর প্রয়াত বাবার নাম। ময়দানে তিনি পরিচিত ক্রোমা নামে।

চব্বিশ ঘণ্টা আগে প্রায় একাই চূর্ণ করে এসেছেন তাঁর পুরনো ক্লাব মোহনবাগানকে। সামনের সপ্তাহে বিয়ে করতে চলেছেন তাঁর বাঙালি প্রেমিকা পূজা দত্তকে। যিনি ক্রোমার ধর্ম ইসলামে দীক্ষিত হয়ে বর্তমানে সাদিয়া। তিনিই ক্রোমার বাংলা শিক্ষিকা। মঙ্গলবার ক্রোমার বর্তমান ক্লাব পিয়ারলেসের অনুশীলন ছিল না। তাই বিকেলে হবু বাঙালি স্ত্রীকে নিয়ে শিঙাড়া, জিলিপি খেতে খেতে ক্রোমা বললেন, ‘‘ফেসবুকে পরিচয়। আমার জীবনে পূজা আসার দশ দিনের মধ্যে মোহনবাগানে খেলার প্রস্তাব পাই। এ বার পাকাপাকি ভাবে জীবনে আসছে। আশা করি, এ বার আরও ভাল হবে। সুখ-দুঃখের বন্ধু পূজা। তাই বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

মা, বাবা-সহ সাত ভাই এক বোনের সংসার। ছোটবেলায় দেখতেন গাড়িচালক বাবা হিমশিম খাচ্ছেন পরিবার চালাতে। খিদের সঙ্গে লড়াই করে বেড়ে উঠেছে ফুটবল জীবন। ক্রোমার কথায়, ‘‘অভাবের মধ্যে ফুটবলই ছিল আমার জীবনে আলোর মতো। সপ্তম শ্রেণির পরে স্কুলে যাওয়াই বন্ধ হতে বসেছিল।’’ যোগ করেন, ‘‘বাবা চাইতেন উকিল হই। ফুটবল খেলতে দিতেন না। লুকিয়ে স্কুলে খেলতাম। সপ্তম শ্রেণিতে বাবা বেতন দিতে না পারায় স্কুলে যেতাম না। প্রধান শিক্ষক আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় আমাকে খেলানোর জন্য বাড়ি এসে এ কথা জানতে পেরে বেতন মকুব করে দেন। বাবা স্যরের হাত ধরে কেঁদেছিলেন।’’

১১ বছর বয়সে প্রথম পেশাদার ফুটবলে হাতেখড়ি লাইবেরিয়ার লিসর এফসিতে। সে কথা বলতে গিয়ে ক্রোমার চোখে জল। বলেন, ‘‘সই করার পরে প্রথম মাসে ভারতীয় মুদ্রায় পেয়েছিলাম ২০ হাজার টাকা। মা-বাবার হাতে তুলে দিয়ে দারুণ আনন্দ হয়েছিল। আর প্রথম দিন স্থানীয় খবরের কাগজে আমার ছবি বেরোনোর পরে মায়ের আনন্দাশ্রু দেখাও বড় প্রাপ্তি।’’ পিয়ারলেস ফুটবল দলের অধিনায়ক পরক্ষণেই বিমর্ষ। বললেন, ‘‘মা আজ অসুস্থ। বাবা মারা গিয়েছেন ১০ বছর আগে।’’

কী ভাবে ভারতে এলেন? ক্রোমা বলেন, ‘‘ভারতে খেলা এক বন্ধু প্রথম আমাকে চেন্নাইয়ের ক্লাবে খেলার সুযোগ করে দেন। এক বছরের ভিসা পেলেও বিমানের টিকিট কাটার অর্থ ছিল না। লোকের কাছে হাত পেতেও অর্থ পাইনি। শেষমেশ স্থানীয় এক ক্লাবের কর্তা সেই টাকা দিলে ভারতে আসতে পেরেছিলাম।’’

কলকাতায় ক্রোমা কৃতজ্ঞ তাঁর বন্ধু সোনাই ও পিয়ারলেস কর্তাদের কাছে। বলেন, ‘‘মহমেডান মাঠে খেলা দেখতে গিয়ে প্রথম সোনাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। ও-ই আমাকে প্রথম চার হাজার টাকার ‘খেপ’ জোগাড় করে দিয়েছিল বনগাঁয়। তার পরে পিয়ারলেস ক্লাবে সই করিয়েছিল।’’ যোগ করেন, ‘‘খেপ খেলি বলে ময়দানে অনেকের কত সমালোচনা শুনি। ফৌজদারি অপরাধ তো করি না। বাড়িতে বৃদ্ধ মায়ের ওষুধের টাকা আর বাচ্চা ভাইগুলোর পড়াশোনা, সংসার চালানোর খরচ আমাকেই বহন করতে হয়। কোনও নেশা করি না। পার্টি থেকে দূরে থাকি। সেই অর্থই আমার নেই।’’

মোহনবাগান ছাড়া ইস্টবেঙ্গলেও খেলেছেন। তা হলে শুধু ‘জয় মোহনবাগান’ বলেন কেন? ক্ষুব্ধ ক্রোমা বলেন, ‘‘মোহনবাগানে কেউ গালি দেয়নি। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলে খেলার সময়ে কেরলে আই লিগে গোকুলম ম্যাচের পরে কয়েক জন লাল-হলুদ ভক্ত আমার মা-কে নিয়ে খারাপ কথা বলেছিলেন। তাই স্লোগানে ইস্টবেঙ্গল থাকে না।’’

Football Ansumana Kromah

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}