তাঁর হাত থেকে বেরনো কাটারগুলো খেলা ব্যাটসম্যানের পক্ষে যতটা কঠিন, তার চেয়েও কঠিন বোধহয় তাঁর মুখ থেকে ভাল কথা বার করা। তবু সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মুস্তাফিজুর রহমান বললেন। বিরাট কোহালির বেঙ্গালুরুর মুখোমুখি হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা আগে সোমবার দুপুরে আনন্দবাজারকে ফোন সাক্ষাত্কারে বাংলাদেশের বোলিং সেনসেশন অধিকাংশ কথাই বললেন বিরাট কোহালি নিয়ে...।
প্রশ্ন: আপনার তো এটাই প্রথম আইপিএল। কেমন লাগছে সব কিছু?
মুস্তাফিজুর: প্রথম আইপিএল ঠিকই। কিন্তু ভারতে এটা আমার প্রথম আসা নয়। বিশ্বকাপে এলাম। বেঙ্গালুরুতেও ঘুরে গিয়েছি। শহরের কয়েকটা জায়গা চিনেও ফেলেছি। টিমে মিশে যেতেও কোনও অসুবিধে হয়নি। সব মিলিয়ে ভালই লাগছে।
প্র: শুনলাম, আপনি নাকি বাংলা ছাড়া কাউকে সাক্ষাত্কার দিচ্ছেন না। আপনার সাক্ষাত্কারের একমাত্র শর্ত হল, প্রশ্নকর্তাকে বাংলা জানতে হবে। তা হলে টিমের সঙ্গে মিশছেন কী ভাবে? কমিউনিকেট করা তো অসম্ভব।
মুস্তাফিজুর: (হাসি) ওই অল্পস্বল্প ইংরেজি আর হিন্দি দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। চেষ্টা করছি ভাষা দু’টো দ্রুত শিখে ফেলার। জীবনে শেখাটা খুব জরুরি।
প্র: আর কয়েক দিন পর বাংলা নববর্ষ। সাতক্ষীরাকে মিস করছেন না?
মুস্তাফিজুর: করছি। নববর্ষে বাড়ি থাকব না, মন খারাপ করছে। কিন্তু কিছু করার নেই। ক্রিকেট খেলার জন্যই প্রথম আইপিএল খেলতে পারছি।
প্র: আপনার কাটারের ঘষামাজা কেমন চলছে?
মুস্তাফিজুর: ওহ্, কাটার। ভালই। আমার প্রধান অস্ত্র ওটা। ঝালাতে তো হবে। চেষ্টা করছি আরও ভাল করে তোলার। বাকিটা উপরওয়ালার হাতে।
প্র: আজ সন্ধেয় আপনাদের প্র্যাকটিস আছে চিন্নাস্বামীতে। মাঠে নামার সময় কোনও অনুভূতি হবে না? মনে হবে না যে, এখানে সে দিন বিশ্বকাপের ভারত ম্যাচটা আর একটু হলেই জিতে গিয়েছিলাম!
মুস্তাফিজুর: নাহ্। হবে না। কী হবে মনে করে? যদি দেশের হয়ে খেলতে আসতাম, মনে হয়তো পড়ত। কিন্তু এখন আইপিএল খেলতে এসে দিনটাকে মনে করে আর লাভ কী? ফিরে তো আসবে না দিনটা। পাল্টেও যাবে না কিছু।
প্র: মঙ্গলবার চিন্নস্বামীতে ভারত বনাম বাংলাদেশ হচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু আপনি খেললে আবার হচ্ছেও। নামলে তো বিরাট কোহালির বিরুদ্ধে লড়তে হবে। কোনও স্পেশ্যাল প্ল্যান-ট্যান করে রেখেছেন? বিশেষ করে বিরাট বিশ্বকাপ থেকে যেমন দুর্ধর্ষ ফর্মে আছেন, থামাতে তো স্পেশ্যাল কিছু লাগবে।
মুস্তাফিজুর: আমি তো খেলা নিয়ে ভাবি। আলাদা করে কাউকে নিয়ে ভাবতে যাই না তো। যদি কাল খেলি, সেরাটা দেব এটুকু বলতে পারি।
প্র: এটা কোনও কথা হল? বিরাটের বিরুদ্ধে বল করলে কোনও প্ল্যান থাকবে না হয়? তা ছাড়া আপনি বিশ্বের হাতেগোনা কয়েক জন বোলারের একজন যিনি কোহালিকে ঝামেলায় ফেলেছেন। যদিও উইকেট পাননি।
মুস্তাফিজুর: আমি তো উইকেট পাওয়ার জন্য খেলি না। বোলিং করে আনন্দ পাওয়ার জন্য খেলি। উইকেট পেলে ভাল লাগে। আর আমার মনে হয়, যে বলটা আমি করি সেটা খেলতে সবারই অসুবিধে হয়। দাদারও হয়।
প্র: দাদা? কে দাদা?
মুস্তাফিজুর: কেন, কোহালি দাদা?
প্র: কোহালিকে আপনি কোহালি দাদা বলে ডাকেন নাকি?
মুস্তাফিজুর: আমরা তো বয়সে বড় যারা তাদের দাদাই বলি। ছোটদের ভাই। তবে সামনাসামনি কখনও কোহালি দাদা বলে ডাকিনি। কথা হয়নি তেমন।
প্র: সোজাসুজি বলুন, মুস্তাফিজুর রহমানের চোখে বিরাট কোহালি কী?
মুস্তাফিজুর: অসাধারণ একজন ব্যাটসম্যান।
প্র: ব্যস?
মুস্তাফিজুর: কোহালি দাদাকে নিয়ে আমি বলার কে? আমার বলাটাই তো ধৃষ্টতা হয়ে যাবে। তবে এটুকু বলতে পারি যে, ওঁর সবচেয়ে যেটা আমাকে টানে তা হল আগ্রাসন। আর টেকনিকের দিক থেকে তুলনাহীন। ব্যাটিংয়ের যার কোনও খুঁত নেই বললেই চলে।
প্র: একটা কথা বলুন। কোহালিকে আপনি এত সম্মান করেন। কিন্তু ভারত বনাম বাংলাদেশ খেলা হলে তো আপনাদের দু’জনকেই যুদ্ধে নামিয়ে দেওয়া হয়। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট থেকে মিডিয়া, সব জায়গাতেই চলে। অস্বস্তি হয় না?
মুস্তাফিজুর: আমি সে সব নিয়ে কী বলব? সব ভুলে আমার কাজটা করি। কোহালি দাদাও নিশ্চয়ই তাঁরটা করেন।
প্র: ঠিক আছে। আপনার কাজটাই বলুন। ওই কাটার শিখলেন কোথা থেকে? বিশেষ করে স্লোয়ার কাটারটা তো খেলা যায় না।
মুস্তাফিজুর: আমাদের দেশে পেসারদের ক্যাম্প হয়। সেখানে আমাকে বিজয় ভাই (আনামুল হক বিজয়) বলেছিলেন, তুমি কাটার পারো? তা আমি বলেছিলাম, করিনি কখনও। চেষ্টা করে দেখতে পারি। তার পর দেখলাম ওটা হচ্ছে। আমার আপনাআপনিই ওটা হয়। হাতে ধরে কেউ শেখায়নি। তার পর থেকে ওটা নিয়ে আরও খেটেছি।
প্র: শেষ প্রশ্ন। ধরা যাক, বাংলাদেশ নেটে আপনি আর কোহালি দু’জনেই আছেন। মনে হয় না, সে রকম কেউ থাকলে এত দিনে আপনার কাটারগুলো আরও ধারালো হয়ে যেত?
মুস্তাফিজুর: হ্যাঁ, সেটা পারত। উনি যে মাপের ব্যাটসম্যান, তাতে নেটে ওঁর বিরুদ্ধে বল করতে পারলে নিজেকে আরও নিখুঁত তো করে তুলতেই পারতাম। বুঝে যেতাম, কোন কাটারটা আরও ধারালো করতে হবে আর কোনটায় উইকেট আসবেই আসবে।
আরও পড়ুন:
আইপিএলের বিস্তারিত সময়সূচি
আইপিএলের বিস্তারিত পয়েন্ট টেবল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy