Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
চুরি করাটা শেখাল তো ব্যাটসম্যানরা

বিরাটরা কেন খারাপ পিচে খেলবে, প্রশ্ন দিলীপ দোশীর

ক্রিকেট ছাড়ার পর থেকেই সংবাদমাধ্যম থেকে দূরে। সাক্ষাৎকারও দিতে চান না খুব একটা। আনন্দবাজারের জন্য অবশ্য সেই শপথ ভাঙতে রাজি হলেন বাংলার স্পিন-গৌরব। চলতি সিরিজ নিয়ে ফোনে খোলামেলা দিলীপ দোশী।ক্রিকেট ছাড়ার পর থেকেই সংবাদমাধ্যম থেকে দূরে। সাক্ষাৎকারও দিতে চান না খুব একটা। আনন্দবাজারের জন্য অবশ্য সেই শপথ ভাঙতে রাজি হলেন বাংলার স্পিন-গৌরব।

ফুরফুরে: ধোনির শহরে ফুটবল প্রেম কোহালির। পিটিআই

ফুরফুরে: ধোনির শহরে ফুটবল প্রেম কোহালির। পিটিআই

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৭ ০৪:২৫
Share: Save:

প্রশ্ন: বেঙ্গালুরুর ‘ডিআরএসগেট’ নিয়ে আপনার কী প্রতিক্রিয়া?

দিলীপ দোশী: পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, একটা টিমের ক্যাপ্টেন ড্রেসিংরুমের দিকে তাকিয়ে আছে ডিআরএস নেব কি নেব না, তা জানার জন্য। কোটি কোটি মানুষ সেটা টিভি-তে দেখতে পাচ্ছে। খুবই লজ্জাজনক এবং দুর্ভাগ্যজনক।

প্র: ক্রিকেটকে আর কি জেন্টলম্যান্‌স গেম বলা হবে?

দোশী: এত দিন বলা হতো কেন, কে জানে! আমার তো মনে হয়, ক্রিকেট শুরু থেকেই কখনও ভদ্রলোকের খেলা ছিল না। ম্যাচ গড়াপেটা থেকে শুরু করে বল-বিকৃতি, কোন দুর্নীতিটা হয়নি এই খেলায়? আর ক্রিকেটে চুরিটা তো শিখিয়েছে ব্যাটসম্যানরাই। আমাদের সময়ে ডিআরএস ছিল না। টিভি রিপ্লে আবিষ্কৃত হয়নি। তখন পায়ে লাগলে বোলাররা এলবিডব্লিউ-এর আবেদন করলেই ব্যাটসম্যানগুলো ব্যাট তুলে দেখাত। মানে আমার ব্যাটে লেগেছে। সব বলই কি তোদের ব্যাটে লাগে রে? এখনও দেখছি, প্রতারণাটা ব্যাটসম্যানগুলোই করছে। আগে ছোটখাটো স্তরের চুরি ছিল। এখন তো দেখছি ডাকাতি চলছে।

প্র: আইসিসি কি পারত না বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে?

দোশী: আমার মনে হয়, স্মিথ কী করেছে, সেটা প্রমাণ করা খুব কঠিন ছিল। মানে জেরা করলে ও তো বলতেই পারত যে, আপনি জানলেন কী করে যে, আমি ড্রেসিংরুমের দিকে তাকাচ্ছিলাম কি না? নিয়মের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। যথেষ্ট প্রমাণ না থাকার জন্যই হয়তো আইসিসি-র মনে হয়েছে, এটা নিয়ে বেশি দূর এগিয়ে লাভ নেই।

প্র: স্মিথ এ রকম করল কেন, আপনার কী মনে হয়?

দোশী: সত্যি আমিও দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। পরে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে বসে মনে হয়েছে, ওদের তো কোনও সঙ্কেত করতেও দেখলাম না। মানে নিজেদের মধ্যে প্ল্যান করে যদি এটা করবে, তা হলে তো একটা সঙ্কেত কিছু থাকবে। ডিআরএস নিতে হলে একটা আঙুল দেখালাম বা না নিতে হলে দু’টো আঙুল— এ রকম কিছু। সে সব কিছু দেখলাম না। ওই কারণেই বলছি, অভিযুক্ত হিসেবে স্মিথকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো খুব কঠিন ছিল। আইসিসি-কে তাই দোষ দেব না।

প্র: ভারতে ঘূর্ণি পিচ নিয়ে খুব বিতর্ক চলছে। আপনি কী বলবেন এ নিয়ে?

দোশী: ধুর, খুবই নিম্নমানের পিচে খেলা হচ্ছে। ভারতের তো ভাল টিম রয়েছে। তা হলে এ রকম পিচে খেলতে হবে কেন? ভাল উইকেটে খেলেও আমাদের এই দল জিততে পারে। টার্নার করে অস্ট্রেলিয়াকে সুযোগ করে দিচ্ছি আমরা। ওদের স্পিনাররা উল্টে আমাদের ঘাড়ে চেপে বসল!

প্র: কেমন লাগছে অস্ট্রেলিয়ার দুই স্পিনার নায়ন আর ও’কিফ-কে?

দোশী: নেথান লায়ন বেশ ভাল। ওর লুপটা অসাধারণ। দু’জনের মধ্যে ওকে আমি এগিয়ে রাখব। ও’কিফ বেশিটা লাইন-লেংথের ওপর নির্ভর করা স্পিনার। কিন্তু খুব শৃঙ্খলাপরায়ণ।

প্র: আর ভারতের দুই স্পিনার অশ্বিন এবং জাডেজা?

দোশী: দু’জনেই ভাল। কিন্তু এই সিরিজে ততটা ভাল দেখাচ্ছে না কারণ অস্ট্রেলিয়া ভাল খেলে দিচ্ছে। একটা কথা মানতেই হবে। অস্ট্রেলিয়া সহজে ছাড়ার পাত্র নয়। ওরা ঠিক লড়াই করবে। এটাই ওদের সং‌স্কৃতি। এই সিরিজটা খেলতে আসার আগেও দুবাইয়ে প্রায় সপ্তাহ দু’য়েক প্র্যাকটিস করে এসেছে। প্রস্তুতি নিয়ে খেলতে এসেছে। ওদের অনেকে হাল্কা ভাবে নিয়েছিল। বলে দিয়েছিল, সহজেই আমরা উড়িয়ে দেব। সেই পূর্বাভাসকে ওরা মিথ্যা প্রমাণিত করে দিয়েছে।

আরও পড়ুন: গড়াপেটা নিয়ে এ বার সাসপেন্ড ইরফানও

প্র: বাকি সিরিজে কী হতে পারে?

দোশী: ক্রিকেটার হিসেবে আমি কখনও পূর্বাভাসে যাইনি। যাবও না। তবে আমার মনে হয়, সিরিজ এখনও যে কেউ জিততে পারে। বেঙ্গালুরুতে ভারত জিতেছে বলেই অস্ট্রেলিয়া আর ফিরে আসতে পারবে না, এমন ভাবা উচিত হবে না। এই অস্ট্রেলিয়া দল কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছে, ওরা আমাদের ঠকাতে পারে। আশা করব, সেটা থেকে বিরাটের দল শিক্ষা নিতে পেরেছে। বাকি দুই টেস্টের জন্য ওদের যেন হাল্কা ভাবে না নেয়।

প্র: পিচ নিয়ে বলছিলেন। দেশের মাঠে সুবিধে মতো উইকেট বানানো আটকাতে কড়া পদক্ষেপ করা উচিত?

দোশী: অবশ্যই করা উচিত। আমি কিন্তু শুধু আমাদের দেশের পিচকেই কাঠগড়ায় তোলার ঘোর বিরোধী। একই কথা বলা যায় ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে নিয়েও। ইংল্যান্ড কেন নিজেদের সুবিধে মতো সব সময় অত বেশি করে সিমিং উইকেট বানাবে? কেন উপমহাদেশের টিম গেলে অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকা বেশি বেশি করে ঘাস ছেড়ে রাখবে? ভারতের ঘূর্ণি উইকেটের পাশাপাশি এগুলোও দেখা উচিত আইসিসি-র। এবং কেউ বাড়াবাড়ি রকমের হোম অ্যাডভ্যান্টেজ নিতে চাইলেই কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত।

প্র: রাঁচীতে কী হবে মনে হচ্ছে?

দোশী: আবার পূর্বাভাস? আমি ও সবের মধ্যে নেই। তবে আমার মনে হচ্ছে, ভারত বেঙ্গালুরুতে জিতে গিয়ারে ফিরেছে। আবার অস্ট্রেলিয়া পুণেতে ৩৩৩ রানে জিতে দেখিয়ে দিয়েছে, ভারতকে ভারতের মাটিতে বড় ব্যবধানেও ওরা হারাতে পারে। রাঁচীতে দারুণ লড়াই দেখা যেতে পারে। তবে একটাই প্রার্থনা, খেলাটা যেন ভাল পিচে হয়। অতো ঘূর্ণির তো সত্যিই আমাদের দরকার নেই। বিরাটদের খুব বলতে ইচ্ছা করছে, ভাই, তোমরা ভাল পিচেও দুর্ধর্ষ ক্রিকেট খেলে যে কাউকে হারানোর ক্ষমতা রাখো।

অন্য বিষয়গুলি:

Dilip Doshi India Former Cricketer Interview
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE