ছিলেন কলকাতা ময়দানে। কিন্তু গত দু’মাসে সেই ময়দানটা বদলে গিয়েছিল ওঁদের।
বিধানসভা ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছিলেন সাত ক্রীড়াবিদ। বৃহস্পতিবার ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা গেল সেই সাত জন প্রার্থীর মধ্যে পাস করেছেন দু’জন। দু’জনই আবার প্রথম বার বিধানসভায় যাচ্ছেন শাসক দল তৃণমূলের টিকিটে।
এক জন ক্রিকেটার আর অন্য জন ফুটবলার।
দু’জনেই প্রায় খেলতে খেলতেই বিধায়ক হয়ে গেলেন এ বারের ভোটে। হাওড়া উত্তর কেন্দ্রের লক্ষ্মীরতন শুক্ল চলতি মরসুমেও খেলেছেন মোহনবাগান ও বাংলার হয়ে। আর বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের প্রার্থী দীপেন্দু বিশ্বাস গত বছর কলকাতা লিগে খেলেছেন টালিগঞ্জ অগ্রগামীর জার্সি গায়ে।
দীপেন্দুর বড়মামা এস সন্মুগমদাস কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন দীর্ঘ দিন। লক্ষ্মীর পরিবারে কেউ সেই অর্থে রাজনীতিতে ছিলেন না। ক্রিকেটের বাইশ গজ থেকে ভোটের ক্রিজে লক্ষ্মী এ বারই প্রথম নামলেও দীপেন্দু অবশ্য দু’বছর আগে বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রেই নেমেছিলেন উপনির্বাচনে। যদিও সে বার তিনি হেরে যান বিজেপির দাপুটে নেতা শমীক ভট্টাচার্যের কাছে। এ বার সেই শমীকবাবুকেই চব্বিশ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়ে জয়ীর হাসি দীপেন্দুর মুখে। লক্ষ্মীরতন আবার দুই হেভিওয়েট প্রার্থী কংগ্রেসের সন্তোষ পাঠক এবং বিজেপির রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে টপকে জিতেছেন ছাব্বিশ হাজার ন’শো উনষাট ভোটের ব্যবধানে।
লক্ষ্মীবারে ভোট যুদ্ধ জিতে টেলিফোনে লক্ষ্মীরতনের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘‘অনেক কিছু করার ইচ্ছে আছে। উত্তর হাওড়া এবং গোটা বাংলা থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের তুলে আনতে চাই। তার জন্য সিরিয়াস ভাবনাচিন্তা করেছি। এ বার সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।’’ একটু থেমে ফের বললেন, ‘‘বিশেষ করে অ্যাথলেটিক্স এবং সুইমিংয়ে।’’
কলকাতার তিন প্রধানে দাপিয়ে খেলা দীপেন্দুর প্রতিক্রিয়াতে লক্ষ্মীর চেয়েও যেন সিরিয়াসনেস বেশি। বুধবারই তিনি জেনে গিয়েছিলেন আইএসএল থেকে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলকে সরিয়ে দ্বিতীয় সারির লিগ ওয়ানে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে ফে়ডারেশন। এ দিন সেই প্রসঙ্গ টেনে ময়দানের ‘দীপু’ বললেন, ‘‘বিধানসভায় গিয়ে আইএসএল থেকে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলকে বাদ দেওয়ার বিষয়টা নিয়ে সরব হব। এই অপচেষ্টা রুখতেই হবে।’’ একটু থেকে তিনি আরও যোগ করলেন, ‘‘বসিরহাটে একটা অত্যাধুনিক স্টেডিয়ামও করতে চাই। এএফসি-র নিয়ম মেনে। যেখানে শুধু লিগের ম্যাচ নয়, আন্তর্জাতিক ম্যাচও আয়োজন করব। বাংলার আরও একটা গর্ব করার মতো স্টেডিয়াম হবে এটা।’’
অতীতে বাম জমানায় বিধানসভায় ময়দানের প্রতিনিধি বলতে ছিলেন সাঁতারু বুলা চৌধুরী। তার পর প্রথম তৃণমূল মন্ত্রীসভায় ময়দানের কোনও খেলোয়াড়-বিধায়ক দেখা যায়নি। এ বার বিধানসভা ভোটে যে সাতজন লড়তে নেমেছিলেন তার মধ্যে বামফ্রন্টের জ্যোর্তিময়ী শিকদার এবং বিজেপির-র ষষ্ঠী দুলে ছাড়া সকলেই ছিলেন তৃণমূলের। বাকিরা ছিলেন ভাইচুং ভুটিয়া, রহিম নবি এবং যোগ প্রশিক্ষক তুষার শীল। একসঙ্গে ময়দানের এত জন খেলোয়াড়কে এর আগে কখনও ভোটের আসরে দেখা যায়নি। কিন্তু জয়লক্ষ্মী এঁদের কারও ভাগ্যেই ঢলে পড়েনি। ভাইচুং, নবিদের ফোন করলে তাঁদের ফোন বেজেই গিয়েছে এ দিন। কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এঁরা ছাড়াও বালিতে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন বৈশালী ডালমিয়া। নিজে খেলাধূলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে না থাকলেও প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়ার মেয়ে বৈশালী। সে ক্ষেত্রে তিনি ময়দানি পরিবারের সদস্য। বৈশালী বালিতে জোট প্রার্থী সৌমেন্দ্রনাথ বেরাকে হারিয়েছেন পনেরো হাজারের কিছু বেশি ভোটে। তার পরে বাড়ি ফিরেছেন নির্বাচন কমিশন থেকে তাঁর জয়ের সার্টিফিকেট হাতে। আনন্দবাজারে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বালি থেকে অনেক ফুটবলার, ক্রিকেটার অতীতে উঠে এসেছেন। সেই ধারা বজায় রাখতে এলাকায় একটা অ্যাকাডেমি করতে চাই। যেখানে মেয়েদেরও খেলার সুযোগ থাকবে।’’
বৈশালী, লক্ষ্মীদের মতো ভোটের ময়দানে লড়তে নামেননি সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে এ দিন তৃণমূলের এই বিশাল জয়ের পর সিএবি-র আসন্ন নির্বাচনে ফের প্রেসিডেন্ট পদে সৌরভের পুনঃনির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই নিরঙ্কুশ হয়ে গেল বলে মনে করছে ময়দান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy