রাহুল নন, দ্বিতীয় টেস্টে হয়তো মুকুন্দই (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র
জ্বর থেকে সেরে উঠলেও কলম্বোর দ্বিতীয় টেস্টে ওপেনার হিসেবে কে এল রাহুল ফিরবেনই, জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। তার কারণ, সেরে উঠলেও রাহুল পুরো পাঁচ দিনের ক্রিকেটের ধকল নেওয়ার মতো সুস্থতা ফিরে পেয়েছেন কি না, তা নিয়ে নিঃসংশয় হওয়া যাচ্ছে না। সেই কারণেই রান করেও অরুণ লাল-দের মতো বাদ পড়া ভাগ্যহীন ওপেনারদের ক্লাবে না-ও নাম লেখাতে পারেন অভিনব মুকুন্দ।
গলে ভারত জেতার পরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের (এসএসসি) মাঠে। গলের মতো কলম্বোতেও বেশ গরম রয়েছে। সঙ্গে আর্দ্রতার পরিমাণও বেশি থাকায় ফিটনেসের ওপর জোর দিচ্ছে ভারতীয় শিবির। টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করছে, এই পরিবেশে সুপার ফিট এগারো জনকেই মাঠে নামাতে হবে।
এমনিতে রাহুলের জ্বর যে সেরে গিয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কলম্বোর হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল তাঁকে। যে কারণে টিমের সঙ্গে গলেও যেতে পারেননি। তিনি যোগ দেন পরে। তবে গলে যে দিন ভারত টেস্ট ম্যাচ জিতল, সে দিনই প্র্যাকটিস শুরু করে দেন রাহুল। টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পরেই ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারকে সঙ্গে নিয়ে নেট প্র্যাকটিসে ঢুকে পড়তে দেখা যায় তাঁকে।
সেটা দেখে কারও কারও ধারণা হয়ে যায়, রাহুল ফিট হয়ে গিয়েছেন এবং তিনি কলম্বো টেস্টে খেলবেন। অতীতে বহু বার এমন ঘটেছে যে, দলের এক নম্বর ওপেনারের অনুপস্থিতিতে পরিবর্ত কেউ এসে রান করে দিয়েছেন। কিন্তু প্রধান ওপেনার ফেরার পর তাঁকে জায়গা ছেড়ে দিতে হয়েছে। এ ব্যাপারে সব চেয়ে বড় উদাহরণ হয়ে আছেন অরুণ লাল।
দর্শক আচরণে ক্ষুব্ধ সুনীল গাওস্কর ইডেন টেস্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় অরুণ ডাক পেয়েছিলেন। সাতাশির ফেব্রুয়ারিতে ইমরানের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেই টেস্টের দুই ইনিংসে রান করেন যথাক্রমে ৫২ এবং ৭০। কিন্তু তার পরেও জয়পুরে তৃতীয় টেস্টে গাওস্কর ফিরতেই জায়গা ছেড়ে দিতে হয় অরুণকে। অন্য ওপেনার শ্রীকান্তের থেকে ইডেনে বেশি রান করা সত্ত্বেও তাঁর জায়গা হয়নি। গাওস্কর-শ্রীকান্তই ওপেন
করেন জয়পুরে।
রাহুল নিশ্চয়ই গাওস্কর নন। কিন্তু এই সিরিজ শুরু হওয়ার আগে তিনিই ছিলেন এক নম্বর ওপেনার। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে উত্তপ্ত টেস্ট সিরিজে ৬টি হাফ সেঞ্চুরি সহকারে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার। চেতেশ্বর পূজারা করেছিলেন ৭ ইনিংসে ৪০৫ রান। গড় ৫৭.৮৫। রাহুলের ছিল ৭ ইনিংসে ৩৯৩ রান। গড় ৬৫.৫০। গোটা সিরিজে কাঁধে চোট নিয়ে খেলে গিয়েছিলেন রাহুল। তার পরেই অস্ত্রোপচার করাতে হয়। যে জন্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও খেলতে পারেননি। শ্রীলঙ্কায় যখন প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ তৈরি, তখনই আবার জ্বরে আক্রাম্ত হয়ে কলম্বোর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পড়ে থাকতে হল।
মাত্র ক’দিনের এই হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকার মধ্যেই যে পরিস্থিতি পুরো পাল্টে যাবে, কে জানত! শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য রাহুল ছিলেন এক নম্বর ওপেনার। দু’নম্বর ছিলেন মুরলী বিজয়। আর শিখর ধবনের জায়গাই হয়নি সফরে। তাঁর স্ত্রী, পরিবার থাকে মেলবোর্নে। শিখর সেখানে চলে যাবেন ভেবেছিলেন। তার মধ্যেই ফোন আসে, বিজয়ের চোট পুরোপুরি সারেনি। তোমাকে শ্রীলঙ্কা যেতে হবে। গলের প্রথম টেস্টে নেমে সেই শিখরই প্রথম ইনিংসে করে দিলেন ১৯০। তাঁর সঙ্গী অভিনব মুকুন্দ প্রথম ইনিংসে রান না পেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ৮১। শুধু তাঁর ৮১ রানই নয়, যে রকম দাপট দেখিয়ে ব্যাট করেছেন অভিনব, সেই ভঙ্গিকে একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছে না টিম ম্যানেজমেন্ট। মাত্র ১১৬ বলে ৮১ রান করেছিলেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ছিল সত্তরের কাছাকাছি।
এ দিকে, রাহুলকে নিয়ে সমস্যা হচ্ছে, তিনি কতক্ষণ রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকার মতো সুস্থতা অর্জন করেছেন, কেউ জানে না। শুধু নেটে আধ ঘণ্টার ব্যাটিং প্র্যাকটিস দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। গল থেকে সড়ক পথে সোমবারেই কলম্বো পৌঁছেছে ভারতীয় দল। আজ, মঙ্গলবার সকালে তারা প্র্যাকটিস করবে এসএসসি-তে। তখন রাহুলের ফিটনেস যাচাই করার একটা সুযোগ পাওয়া যাবে। যদি দেখা যায় তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টা প্র্যাকটিস করেও ক্নান্ত বোধ করছেন না রাহুল বা তিনি নিজে বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছেন খেলার ব্যাপারে, তা হলে তাঁকে প্রথম একাদশে আনার ভাবনা ফিরবে।
তবে সোমবার রাত পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, তাঁকে নিয়ে ঝুঁকি না নেওয়ার দিকেই মত বেশি। অনেকেরই মনে হচ্ছে, সামনে লম্বা মরসুম রয়েছে। আর সেই মরসুমে কঠিন সব চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে হবে। ইংল্যান্ডে প্রস্তাবিত টেস্ট সিরিজ রয়েছে। রাহুল আসন্ন কঠিন মরসুমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। খুব দরকার না পড়লে কলম্বোতেও তাঁকে বিশ্রাম দিলে টিমেরই উপকার হবে।
জয়পুরের অরুণ লালের চেয়ে কলম্বোর অভিনব মুকুন্দের ভাগ্য তাই সামান্য হলেও উজ্জ্বল দেখাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy