চেতন শর্মা-সহ নির্বাচকরা ঈশ্বরণকেই পাঠিয়েছেন রিজার্ভ ক্রিকেটার হিসেবে। —ফাইল চিত্র
বিরাট কোহলীরা যে অভিমন্যু ঈশ্বরণকে টেস্ট দলে ভাবছেন না, তা স্পষ্ট হয়ে যায় পৃথ্বী শ, দেবদত্ত পাড়িক্কলকে পাঠানোর অনুরোধ করায়। অথচ চেতন শর্মা-সহ নির্বাচকরা ঈশ্বরণকেই পাঠিয়েছেন রিজার্ভ ক্রিকেটার হিসেবে। নিয়ম অনুযায়ী প্রধান দলের কেউ চোট পেলে সুযোগ পাওয়ার কথা রিজার্ভ দলের ক্রিকেটারদেরই।
ভারতীয় দল এবং নির্বাচকদের মতের যে অমিল রয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে ঈশ্বরণ মোটেই প্রথম ক্রিকেটার নন যিনি এমন পরিস্থিতির মাঝে পড়েছেন। ভারতীয় ক্রিকেটে বহু যুগ ধরেই এমন কাণ্ড ঘটছে। সেই সব ঘটনায় জড়িয়ে গিয়েছে তারকাদের নামও।
এরকমই একটি ঘটনায় জড়িয়েছিল বাংলার আর এক ক্রিকেটার রুসি জিজিভয়ের নাম। তবে এ বার অভিমন্যুকে যেরকম ভুগতে হল, সে বার জিজিভয়ের লাভ হয়েছিল। ছয়ের দশকের শেষ দিকে বাংলার হয়ে খেলতেন পার্সি উইকেটরক্ষক জিজিভয়। তিনি পার্সি সম্প্রদায়ের হওয়ায় সুবিধে পেয়েছিলেন তৎকালীন নির্বাচক কমিটির প্রধান বিজয় মার্চেন্টের। তিনিও পার্সি সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে ভারতীয় দলে তৃতীয় উইকেটরক্ষকের জায়গা ফাঁকা ছিল। সেখানে যাতে জিজিভয়কে ঢোকানো যায়, তার জন্য দলীপ ট্রফির একটি ম্যাচে জিজিভয়কে জোর করে পূর্বাঞ্চলের উইকেটরক্ষক হিসেবে খেলানোর জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন মার্চেন্ট। এমনিতে পূর্বাঞ্চলের হয়ে উইকেটরক্ষা করার কথা ছিল দলজিত সিংহর। টসের ঠিক আগে মার্চেন্টের নির্দেশ আসে, দলজিতকে ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলিয়ে জিজিভয়কে উইকেটরক্ষক হিসেবে খেলাতে হবে।
ভারতের হয়ে খেলা প্রাক্তন এক ক্রিকেটার বলেছিলেন, “আমি বাতলিবয়ের (একটি ইঞ্জিনিয়র সংস্থা) নাম শুনেছি আর এখন শুনছি জিজিভয়।” শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য নির্বাচিত হন বাংলার উইকেটরক্ষক। ভারতের হয়ে যদিও মাঠে নামার সুযোগ হয়নি। তবে সেটাই ছিল তাঁর প্রথম এবং শেষ বার ভারতীয় দলে ডাক পাওয়া।
বাংলার এক মাত্র রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলেন দু’বার। প্রথম বার ক্রিকেটার হিসেবে এবং দ্বিতীয় বার নির্বাচক হিসেবে। ১৯৭৯ সালের ইংল্যান্ড সফরে ভারতীয় দলের হয়ে যাচ্ছেন সম্বরণ, তাঁকে এমনই বার্তা দিয়েছিলেন সতীর্থরা।
আনন্দে সেই দিন রাতে বন্ধুদের খাওয়ান সম্বরণ। কিন্তু পরের দিন দেখা যায় তামিলনাড়ুর ভরত রেড্ডিকে দলে নেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, সেই সময় ভারতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন তামিলনাড়ুর ক্রিকেটার শ্রীনিবাস বেঙ্কটরাঘবন। সম্বরণ বলেন, “সে বার ভরত চারটি টেস্টে ৩৮ রান করেছিল।”
১৯৮৬ সালে কপিল দেবের দলে সুযোগ পেয়েছিলেন প্রায় অবসর নিয়ে নেওয়া মদন লাল। খেলার কথা ছিল মনোজ প্রভাকরের। কপিল নির্বাচকদের বুঝিয়েছিলেন প্রভাকরের থেকে মদন লালকে দলের বেশি প্রয়োজন। এক প্রাক্তন ক্রিকেটারের মতে সেই ঘটনার কথা আজও ভুলতে পারেননি প্রভাকর।
১৯৯৬ সালে ভারতীয় দল এবং নির্বাচকদের লড়াইয়ে ফের জড়িয়ে যান সম্বরণ। সেই সময় তিনি জাতীয় দলের নির্বাচক। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দলে নেওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। তৎকালীন অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন এবং প্রশিক্ষক সন্দীপ পাটিল রাজি নন সৌরভকে দলে নিতে। সম্বরণ বলেন, “সে বারের বিতর্কে আমার পক্ষে ছিল নির্বাচক প্রধান গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ এবং আরেক নির্বাচক রুংতা। ৩-২ ভোটে আমরা জিতি। মনে আছে সৌরভের নাম যখন দিল্লির তাজ প্যালেসে ঘোষণা করা হয়, বেশ কিছু সাংবাদিকও অবাক হয়েছিলেন। বিশ্বনাথ তাঁদের যুক্তি দিয়ে বোঝান কেন সৌরভকে দলে নেওয়া হয়েছে। বাকিটা ইতিহাস।”
১৯৯৮ সালে সাহারা কাপের দল নির্বাচনের সময় মজার ঘটনা ঘটেছিল। অধিনায়ক আজহারউদ্দিন চেয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের অলরাউন্ডার জয় প্রকাশ যাদবকে। কিন্তু নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক জ্যোতি বাজপেয়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ক্রিকেটার জ্যোতি প্রকাশ যাদবকে। ভারতের হয়ে কোনও ম্যাচ খেলার সুযোগই পাননি তিনি।
২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক সিরিজ। সেই সিরিজে খেলাই হত না হরভজন সিংহের। নির্বাচন কমিটিতে থাকা মদন লাল, অশোক মলহোত্ররা চেয়েছিলেন স্মরণদীপ সিংহকে দলে নিতে। সৌরভের জেদের কাছে হার মেনে দলে নিতে হয় হরভজনকে। বাকি ঘটনাটা ইতিহাস।
২০০৩-০৪ সালে সাংবাদিকরা সাক্ষী ছিলেন অধিনায়ক সৌরভ এবং নির্বাচক প্রধান সৈয়দ কিরমানির বাকযুদ্ধের। সৌরভ দলে চেয়েছিলেন দীপ দাশগুপ্তকে। তবে সে বার কিরমানির কথাই রাখতে হয়। তাঁর রাজ্যের তিলক নাইডু দলে ডাক পান।
২০১১ সালে রুদ্রপ্রতাপ সিংহকে ভারতীয় দলে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বন্ধু মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। টেস্টের প্রথম বলটা তিনটে ড্রপ খেয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে পৌঁছয়। সেই ম্যাচের পর আর টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি আর পি সিংহ।
অধিনায়ক, ভারতীয় দল এবং নির্বাচকদের এই লড়াইয়ে বহু ক্রিকেটারের ভাগ্য বদলে গিয়েছে। কেউ সুযোগই পাননি খেলার, কেউ আবার হয়ে উঠেছেন তারকা। এ বার এই তালিকায় নতুন সংযোজন অভিমন্যু। কোন দিকে বইবে তাঁর ভাগ্য?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy