Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Paris Olympics 2024

মনের দৈত্যকে হারাতে প্যারিস অভিযানে সিমোন বাইলস

তিনি সিমোন বাইলস যে প্যারিসে ফিরছেন, তা শুধু এ বারের সব চেয়ে রক্ত টগবগ করা কাহিনি নয়। সর্বকালের অলিম্পিক্সের রূপকথায় ঢুকে পড়ছে। সম্প্রতি ‘নেটফ্লিক্স’ একটি তথ্যচিত্র বার করেছে বাইলসকে নিয়ে।

প্রতীক্ষা: প্যারিসে মহড়ায় জিমন্যাস্টিক্সের রানি বাইলস।

প্রতীক্ষা: প্যারিসে মহড়ায় জিমন্যাস্টিক্সের রানি বাইলস। ছবি: সংগৃহীত।

সুমিত ঘোষ
প্যারিস শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৪ ০৮:২০
Share: Save:

অতিরিক্ত একটা শোয়ার ঘরের একটি দেওয়াল আলমারি। আর তার মধ্যে যত্ন করে রাখা কিছু জিনিসপত্র। যদি বলা হয়, ইনি কোনও অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন, তা হলে যে কেউ ধরে নেবেন, আলমারিতে সাজানো রয়েছে তাঁর একাধিক পদক।

কিন্তু না। পদক নয়। সাফল্যের আশীর্বাদ নয়, আলমারির মধ্যে ধরা রয়েছে ব্যর্থতার অভিশাপ। পরাজয়ের কান্না মেশানো কিছু ব্যবহৃত জিনিস। যেমন টোকিয়ো অলিম্পিক্সে আমেরিকার জার্সি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরা পোশাক। এমনকি উড়ান টিকিট। টোকিয়োয় গিয়েছিলেন তারকার জৌলুস নিয়ে। ফিরে আসেন পতনের অন্ধকার নিয়ে।

তিনি সিমোন বাইলস যে প্যারিসে ফিরছেন, তা শুধু এ বারের সব চেয়ে রক্ত টগবগ করা কাহিনি নয়। সর্বকালের অলিম্পিক্সের রূপকথায় ঢুকে পড়ছে। সম্প্রতি ‘নেটফ্লিক্স’ একটি তথ্যচিত্র বার করেছে বাইলসকে নিয়ে। নাম ‘সিমোন বাইলস রাইজ়িং’। এমন নামকরণ যে করা যেতে পারে, স্বয়ং বাইলস বোধ হয় ভাবেননি যখন তিনি রণে ভঙ্গ দিয়ে টোকিয়ো থেকে বিদায় নিচ্ছিলেন। তাঁর মতো চ্যাম্পিয়ন বলেই হাত কাঁপছে। না হলে লেখা যেত, পালিয়েছিলেন।

কী হয়েছিল তাঁর? সোজা কথায় বলতে গেলে, তিনি হয়ে উঠেছিলেন সাফল্যের কয়েদি। তারকা যে কখন মানুষের চাহিদা, প্রত্যাশার ফাঁসে নিজেই বন্দি হয়ে যায়, কেউ জানে না। মাইকেল ফেল্পসের মতো সফল ক্রীড়াবিদ অলিম্পিক্সের ইতিহাসে কেউ নেই। ২৩টি সোনা জিতেছেন কিংবদন্তি সাঁতারু। সেই ফেল্পসও বলেছিলেন, ‘‘আমাদের মাচো হতে হয়। কোনও দুর্বলতা থাকতে নেই।’’ অনেক দিন পরে অবসরোত্তর জীবনে ঢুকে ফেল্পসের মনে হয়, তিনি ঠিক বলেননি। তাই সংশোধন করে দিয়ে বলেন, ‘‘দুর্বলতা থাকতে পারে। কিন্তু থাকলেও তা দেখাতে নেই।’’ বাইলস এমন এক মানসিক রোগে আক্রান্ত হন যাতে শূন্যতা গ্রাস করতে পারে যে কোনও মুহূর্তে। চরম অবসাদে ডুবে যেতে পারে এই ধরনের রোগীরা। তখন মস্তিষ্ক কোনও কাজই করবে না। শূন্যে শরীর ছুড়ে হেলিকপ্টারের ডানার মতো পাক খেতে খেতে নামার সময় যদি কারও মাথা কাজ না করে, কী হতে পারে? সাফল্য, ব্যর্থতা তো অনেক পরের কথা। জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণ তৈরি করে দেওয়ার মতো ঝুঁকি!

বাইলস আপ্রাণ লড়াই করতে থাকেন এই রোগের বিরুদ্ধে। কিন্তু একটা সময় তাঁর মতো চ্যাম্পিয়নের জেদও হার মানতে বাধ্য হয়। ছোটবেলায় নানা রকম অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন তিনি। আমেরিকার জিমন্যাস্টিক্স দলের কুখ্যাত প্রাক্তন ডাক্তার ল্যারি নাসারের যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। সেখান থেকে এই মানসিক রোগের উৎপত্তি হয়ে থাকতে পারে বলে মনোবিদদের ধারণা। টোকিয়োয় নামার আগে সেই মনের মধ্যে বাসা বাঁধা সেই দৈত্য নখদাঁত বার করে বাইলসকে আক্রমণ করে। আর তা থেকে নিজেকে রক্ষা করার মন্ত্র জানা ছিল না তাঁর। অলিম্পিক্সে সাত-সাতটি পদকজয়ী আর্টিস্টিক জিমন্যাস্ট তিনি। কিন্তু অসহায় ভাবে বন্দি হয়ে পড়েন মনের অসুখের।

খেলার মঞ্চ দেখলেই পালাতে থাকেন তিনি। জিমে গিয়ে নিভৃতে কিছুক্ষণ শারীরিক কসরত করেন কিন্তু যে-ই দেখেন, লোকজন এসে পড়েছে মুখ ঢাকা দিয়ে পালান। এ ভাবেই দিন চলছিল। এক দিন হঠাৎ চ্যাম্পিনের গর্ব ঝলসে ওঠে। তখন নিজেকে বোঝান, বিনা যুদ্ধে ছাড়ব না। ফিরব মারণ ভল্টের পৃথিবীতে। বেণীর সঙ্গে দিব মাথা। সেই লক্ষ্যেই তিনি প্যারিসে এসেছেন। ফিরে আসার পরে ইতিমধ্যেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছেন, তাই তাঁকে নিয়ে প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছে।

অন্যান্য দেশ থেকে উঠে আসা নতুন সব প্রতিযোগীরা নন। বাইলসের প্রধান প্রতিপক্ষ সেই মানসিক দৈত্য। তাকে হারিয়ে বাড়ির দেওয়াল আলমারিতে টোকিয়োর যন্ত্রণার চিহ্ন মুছে দিতে হবে। প্যারিসে ধাতব মেডেলই শেষ কথা নয়। কেউ কেউ নামছেন জীবনের
পদকের খোঁজে!

অন্য বিষয়গুলি:

Paris Olympics 2024 Simone Biles Gymnast
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy