পিঠ দিয়ে গোল করে গদিনের উচ্ছ্বাস । ছবি: এএফপি
উরুগুয়ে-১ (গদিন)
ইতালি-০
সামান্য একটু-আধটু কোচিং করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নিজের প্রথম একাদশ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকাটা একজন কোচের অবশ্য কর্তব্য। সিজার প্রান্দেলি বিশ্ব ফুটবলে বরেণ্য কোচ হওয়া সত্ত্বেও ব্রাজিল বিশ্বকাপে এই জায়গাটায় চরম মার খেয়ে গেলেন। প্রি-ওয়ার্ল্ড কাপে দশ ম্যাচে খেলান ৪০ জনকে। ব্রাজিলে এসেও তিনটে ওয়ার্ম আপ ম্যাচে শুরু করান ২৫ ফুটবলারকে। ২০১৪ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডেই বিদায় ঘটে গেল ইতালির। কিন্তু তাদের কোচের আর প্রথম দল বেছে ওঠা হল না! দলগত পরিকল্পনা, বোঝাপড়া, সংগঠন মাঠে দেখা যাবে কোথ্বেকে? আরও আশ্চর্যের, ব্যাপারটা কিনা ইতালির মতো ফুটবল ঐতিহ্যশালী দেশ প্রকট করল! ক্লাব ফুটবলে সেরি আ-র মতো দেশজ ফুটবলে ইতালির দিনও কি তা হলে শেষ!
ফুটবল খেলাটার কালো শিল্প যেন ম্যাচটা দেখাল! একটা দল প্রথম সেকেন্ড থেকে ডিপ ডিফেন্সে পাঁচ জনকে রেখে কোনওক্রমে ড্র করার মানসিকতা নিয়ে খেলল। কারণ, পরের রাউন্ডে যেতে এক পয়েন্টেরই দরকার ছিল তাদের। অ্যাটাকিং থার্ডে দৌড়লই না। আর অন্য দলটা দৌড়তে গিয়েও পারল না। বিপক্ষের পায়ের জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলল বারবার। এবং এ ধরনের বিরক্তিকর ম্যাচের ভাগ্য আচমকা যে ভাবে গড়ে ওঠে, মঙ্গলবার নাতালের মাঠেও তাই হল। খেলা শেষ হওয়ার ন’মিনিট মাত্র আগে একটা সেট-পিস সিচুয়েশন থেকে উরুগুয়ে জয়ের গোল করে বিশ্বকাপের ‘গ্রুপ অব ডেথ’ থেকে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গেল।
কিন্তু উরুগুয়েও আর বেশি দূর যাবে বলে মনে হয় না। সুয়ারেজ-কাভানির মতো দু’জন ফরোয়ার্ড নিয়েও ওরা কী পরিকল্পনা দেখাল আক্রমণে? আসলে সুয়ারেজ যতই ইপিএলের সেরা ফুটবলার হোক, ও না মেসি, না রোনাল্ডো। গতি, ড্রিবল কোনওটাই সত্যিকারের টপ ক্লাস নয়। কাভানির আবার বল কন্ট্রোল নেই। উরুগুয়ে এর আগে বিশ্বকাপে ইতালির সঙ্গে শেষ মুখোমুখিতে দু’গোলে হেরেছিল। সেটা নব্বইয়ের বিশ্বকাপ। তখনও ওদের কোচ ছিলেন অস্কার তাবারেজ। চব্বিশ বছর লাগলেও শোধ তুললেন তিনি।
তবে এটাই বিশ্বকাপের প্রথম তেরো দিনের সবচেয়ে বেশি মনে না-রাখার ম্যাচ। গোটা খেলায় দু’টোর বেশি পজিটিভ সুযোগ তৈরি করতে পারেনি উরুগুয়ে। ইতালি তা-ও নয়। দু’টো ক্ষেত্রেই সুয়ারেজের থেকে ঠিক সময়ে বল নিজের দখলে নেয় বুফো।ঁ কিন্তু শেষ রক্ষা হল না ইতালি ক্যাপ্টেনের। ৮১ মিনিটে কর্নারের বলটায় একঝাঁক ইতালি ফুটবলারের ভিড়ে দাঁড়িয়েও সবার চেয়ে বেশি লাফিয়ে মাথা ছুঁইয়ে গদিন উরুগুয়েকে মহার্ঘ গোলটা এনে দিল। একেবারে এ বারের লা লিগা চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচে বার্সেলোনার বিরুদ্ধে আটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে গদিনের গোলটার রিপ্লে। সিজার প্রান্দেলির কাছে কি সেই ম্যাচের ভিডিও ছিল না?
তার উপর চোটে ডি রোসির এ দিন খেলতে না পারা, মারচিসিও-র লাল কার্ডে শেষ আধ ঘণ্টা দশ জন হয়ে পড়ায়, প্রান্দেলি যেন আরও পরিকল্পনাহীন হয়ে পড়েন। তবে মারচিসিওকে মেক্সিকান রেফারি লাল কার্ড না দেখাতেও পারতেন। ওর ট্যাকলটা যত দূর মনে হল, ইচ্ছাকৃত ছিল না। দেখা গেল, ‘মোরেনো-আতঙ্ক’ কিংবা ‘কাউন্ট ড্রাকুলা’ ভীতি, যা-ই বলুন, সেটাই সত্যি হল ইতালির!
তারা অবশ্য একটা শেষ চেষ্টা করেছিল। গদিনের গোলটার সময় বক্সের ভিড়ে চিয়েলিনিকে সুয়ারেজ কামড়ে দিয়েছে-র অভিযোগ তুলে রেফারি মোরিনো রদ্রিগেজকে চেপে ধরেছিল ইতালিয়ানরা। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়ার গোল খাওয়ার শোকটোক ভুলে গিয়েও! বিপক্ষ ডিফেন্ডারকে সুয়ারেজের কামড় বিশ্ব ফুটবলে পরিচিত দৃশ্য। ব্যাপারটা প্রমাণিত হলে উরুগুয়ে হয়তো তাদের সেরা স্ট্রাইকারকে পরের রাউন্ডে পাবে না। কিন্তু উরুগুয়ের ‘ব্যাড বয়’ সুয়ারেজের সাসপেনশনে ইতালির লাভ কী! তাদের ‘ব্যাড বয়’ বালোতেলি আবার এ দিন খেলার চেয়ে বেশি প্লে-অ্যাক্টিং করায় হাফটাইমেই তাকে তুলে নিতে বাধ্য হল ইতালি কোচ।
তবে ইতালি ম্যাচটার বাস্তব পরিস্থিতিতে একেবারে সঠিক ফমের্শন নিয়েছিল। ৩-৫-২। বিপক্ষের পায়ে বল থাকার সময় খুব তাড়াতাড়ি পাঁচ জন ডিফেন্সে নেমে আসছিল। আর উপরে তুলে রেখেছিল শুধু ইমমোবাইলকে। পির্লোর মতো উঁচুদরের গেমমেকার পর্যন্ত সেন্টার সার্কেলের উপরে উঠছিল না। কিন্তু দিনের শেষে তাতেও ইতালি বাঁচতে পারল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy