কলকাতা ফুটবলের ক্যানভাসে নতুন রং লেগেছিল বছর দু’য়েক আগে।
আগুনে, ধুন্ধুমার, বাংলা দু’ভাগ হয়ে যাওয়া ডার্বির আগের দিন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের কোচ-কর্তারা একে অন্যের পাশে বসে হাসছেন, ফুল দিচ্ছেনদেখে চমকে উঠেছিলেন অনেকেই। এ-ও আবার হয় নাকি? বলে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন ষাট-সত্তর-আশি-নব্বই দশকের প্রচুর ফুটবলার।
শনিবার বিকেলে আরও বড় চমক! মাঝে আজ রবিবার একটি ম্যাচ থাকা সত্ত্বেও মঙ্গলবারের আই লিগের ডার্বি নিয়ে সরকারি সাংবাদিক সম্মেলন করে ফেললেন দুই প্রধানের কোচই। যা কলকাতার ইতিহাসে কখনও হয়নি। আইএসএলের ধাক্কায় কি এতটাই পানসে হয়ে গেল আপামর বাঙালির আবেগের ম্যাচ? বিস্ময় চেপে রাখতে পারেননি আর্মান্দো কোলাসো এবং সঞ্জয় সেন। “অনেক সময় পরিস্থিতির জন্য অনেক কিছুই হয়। কাল একটা ম্যাচ আছে। সেখানে তো অনেক কিছুই হতে পারে। ডার্বির আগে এখনই তো বলা সম্ভব নয় কী পরিস্থিতি হবে।” লাল-হলুদ কোচের পাশে বসে মোহন-কোচের মন্তব্য আরও চমকপ্রদ। “এখন যা ভাবছি, কাল ইস্টবেঙ্গল-ভারত এফ সি ম্যাচের পর তার তো বদল ঘটতেই পারে। কত কিছু তো হতে পারে। তখন অনেক পার্থক্য হয়ে যাবে ওই ম্যাচের পর।”
অভিনব পরিস্থিতিতে অবশ্য লাল-হলুদ কর্তারা দীর্ঘদিনের প্রথা ভাঙতে বাধ্য হয়েছেন। ডার্বিতে মাঠের ঝামেলা এড়াতে বিধাননগর পুলিশের কর্তাদের সাংবাদিক সম্মেলনে আনার জন্যই এই বদল, বলছেন তাঁরা। কারণ বনগাঁ উপ নির্বাচনের ভোট গণনার জন্য পুলিশের কর্তারা আসতে পারবেন না বলেই এগিয়ে আনা হয়েছে সবকিছু। রেকর্ড সংখ্যক এক লাখ বত্রিশ হাজার দর্শকের সামনে ডার্বি হয়েছে যুবভারতীতে। নব্বই বছরের দুই প্রধানের ধুন্ধুমার যুদ্ধে বহু ঘটনা, অঘটনের সাক্ষী থেকেছে বাংলা। কিন্তু কখনও এভাবে দুই প্রধানের কোটি সমর্থকের আবেগকে পিছনে ফেলে রেখে শুধু পুলিশের কথা ভেবে এক ম্যাচ বাকি থাকতে ডার্বির সাংবাদিক সম্মেলন হয়নি। কিন্তু এসে কী বলেছেন বিধাননগরের ডিসি হেড কোয়ার্টার রণেন বন্দ্যোপাধ্যায়? “জলের বোতল নেওয়া যাবে না। জলের জন্য পাউচের ব্যবস্থা থাকবে। দুপুর তিনটেয় টিকিট কাউন্টার বন্ধ হয়ে যাবে। দু’দলের সমর্থকের গ্যালারির মাঝে ফাঁকা রাখা হবে কিছু জায়গা,” বলেছেন পুলিশের ওই কর্তা। যাতে নতুনত্ব কিছু নেই। সচিব কল্যাণ মজুমদার বরং নতুন তথ্য দিয়েছেন। “বাজি তো ফাটানো যাবেই না। গ্যালারিতে কাগজের মশালও জ্বালানো যাবে না। যা আমাদের সমর্থকরাই জ্বালান। ফেডারেশনের বারণ আছে। সমর্থকদের অনুরোধ করছি, কেউ মশাল জ্বালাবেন না। আমরা সমস্যায় পড়ব,” বলে দিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি বসলে যা হয়, দু’দলের কোচ নিজের টিম সম্পর্কে কোনও মন্তব্যই করেননি। বরং একে অন্যের টিমের প্রশংসা করেছেন। আর্মান্দো যেমন বলেছেন, “মোহনবাগান শক্তিশালী দল। তবে খেলাটা ভাল হবে।” বিপক্ষ কোচের সঙ্গে হাত মোলানোর পর বাগান কোচের মন্তব্য, “প্রত্যেক বিভাগে ইস্টবেঙ্গল শক্তিশালী। ব্যালান্সড টিম।” কেউই বুক বাজিয়ে বলেননি ‘আমরা জিতব’। বলবেনই বা কী করে? কেউ তো জানেনই না ডার্বিতে কোন কোন ফুটবলারকে সুস্থ অবস্থায় বা কার্ড-বিহীন অবস্থায় পাবেন। ভাবতে কষ্ট হচ্ছিল, এই ম্যাচটার আগের দিন পিকে-অমলের জামানায় কী অবস্থা হত বাংলার? মন্তব্যের তুবড়িতে কী ভাবে একে অপরকে উড়িয়ে দিয়ে বাজার গরম করে দিতেন। এ দিন আর্মান্দো আর সঞ্জয়ের কথা শুনে মনে হচ্ছিল ন্যাতানো মুড়ির মতো। সমর্থকরা তাতবেন কী করে? ফুটবলাররাও? পাশে কফি শপে ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার প্রয়াত কৃশানু দে-র জন্মদিন পালন করছিল লাল-হলুদের একটি ফ্যান ক্লাব। তাঁবুর বাইরে ‘ভারতের মারাদোনা’-র হাসিমুখের ছবিটা দেখে অনেকেই ফিরে যাচ্ছিলেন সেই সময়ের ডার্বির উত্তেজনার কথায়। সেসব এখন কই? তা সে ইস্টবেঙ্গলের সচিব যতই বলুন “এখনও ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান আছে। শেষ হয়ে যায়নি।” পাশে বসে তাঁকে সমর্থন জানান বাগান কোচ। দুই তাঁবুতেই টিকিট বিক্রি হচ্ছে। বাগানে বিক্রি বেশি, ইস্টবেঙ্গলে কম। বাহাত্তর হাজার টিকিট ছাপা হয়েছে। কিন্তু কত দর্শক আসবেন? “আমি জ্যোতিষী নাকি যে বলে দেব, কত দর্শক আসবে?” উত্তর লাল-হলুদ সচিবের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy