উথাপ্পার উইকেট তুলে দিন্দা।
অশোক দিন্দার মুখটা রবিবার বিকেলে যাঁরা ক্লাবহাউসে দেখলেন, তাঁদের খারাপ লাগবে। বেঙ্গল এক্সপ্রেসের ক্লিষ্ট চোখমুখ বলে দিচ্ছিল, উপরের স্কোরটা মোটেও ম্যাচের যথার্থ নির্ণায়ক নয়। কর্নাটকের সাত উইকেট পড়ে যাওয়ায় যদি কেউ ভেবে থাকেন ঘরের মাঠে মরসুমের প্রথম রঞ্জির প্রথম দিন অ্যাডভান্টেজ বাংলা, তা হলে সেটা চরম ভ্রমাত্মক।
ম্যাচের সঠিক নির্যাস যদি ধরতে হয়, তা হলে বাংলা অবশ্যই এগিয়ে ছিল। কিন্তু সেটা সকালের দিকে কোনও একটা সেশনে। বর্তমান পরিস্থিতি হল, সাত উইকেট হারালেও ম্যাচের রাশ হারায়নি কর্নাটক। যুদ্ধে ‘কোমায়’ চলে গিয়েও তারা ফিরে এসেছে সঞ্জীবনী মন্ত্রের জোরে। বঙ্গ পেসারদের দেওয়া সঞ্জীবনী মন্ত্র।
নইলে ৬৯-৫ থেকে ২৩৭-৭-এর ক্রিকেট বুদ্ধিতে আর কী ব্যাখ্যা হয়?
মানতে অসুবিধে নেই, ইডেনের সবুজ পিচ প্রথম দিনের শেষ দিক থেকে সহজ হয়ে আসছে। মানতে অসুবিধে নেই, উইকেট এখন থেকে যতটা পেসারদের, ততটা ব্যাটসম্যানেরও। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও বলতে হবে, পিচ যখন সম্পূর্ণ পেসার-সহায়ক ছিল, তখন বাংলা তার পুরো ফায়দা তুলতে পারেনি। অশোক দিন্দা চার উইকেট নিলেন। বীরপ্রতাপ সিংহ তিনটে। কিন্তু টিমের তৃতীয় সিমার শিবশঙ্কর পাল প্রথম দিন সম্পূর্ণ হতাশ করায় উথাপ্পা-মণীশ পাণ্ডেদের ব্যাটিং লাইন আপের টুঁটি যে লাঞ্চ পর্যন্ত চেপে রাখা গিয়েছিল, সেটা লাঞ্চের পরে আর রাখা গেল না। শিব আজও কৃপণ, কিন্তু কামড়টা কোথাও যেন একটু কম। লক্ষ্মীরতন শুক্ল— বল হাতে তিনি রোজ রোজ দুটো-তিনটে বার করবেন, আশা করা যায় না। আজ লক্ষ্মীও মার খেয়েছেন। বাংলার অর্ডারি সবুজ পিচেই।
অথচ কী শুরুটাই না করেছিল বাংলা। বিশেষ করে দিন্দা। ইডেনের প্রেসিডেন্ট্স বক্সে বসে জাতীয় নির্বাচক বিক্রম রাঠৌর দেখে গেলেন সবুজ পিচ, সিম বোলিংয়ের আদর্শ মেঘলা পরিবেশ পেলে বাংলার দিন্দা কোনও অংশে বরুণ অ্যারন বা উমেশ যাদবের চেয়ে কম যান না। একটা সময় কর্নাটক ছিল ৯-২। দিন্দার যে বলে উথাপ্পা শূন্য রানে কট বিহাইন্ড হলেন, সেটা তুলনাহীন। অফস্টাম্পের বাইরে মন্ত্রমুগ্ধের মতো ব্যাট চালালেন উথাপ্পা। ফেরার সময়ও তাঁর মুখচোখে অবিশ্বাস।
দিনের শেষে আড্ডায় মধ্যমণি সৌরভ। ম্যাচে উথাপ্পার উইকেট তুলে দিন্দা।
দিন্দার প্রথম স্পেল বলছিল: ৭-৩-১৯-৩। উথাপ্পা, ময়ঙ্ক অগ্রবাল, কুণাল কপূর— বেঙ্গল এক্সপ্রেসে কাটা এবং মৃত্যু। লাঞ্চ পর্যন্ত বাঁচলেন না স্টুয়ার্ট বিনিও। বীরপ্রতাপ সিংহ তখন যথেষ্ট প্রতাপ দেখাচ্ছেন, মণীশ পাণ্ডেকে তুলছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে লাঞ্চের পর থেকে বঙ্গ পেসের যাবতীয় বীরবিক্রম উধাও হয়ে গেল।
দুপুরের দিকে বাংলা নির্বাচকদের কেউ কেউ বলছিলেন, এই উইকেটে কর্নাটক আড়াইশো তুলে দিলে ব্যথা আছে। চিদম্বরম গৌতম আর কর্নাটকী অধিনায়ক বিনয় কুমার মিলে যা করলেন এবং পরে বিনয় একাই যা করছিলেন তাতে আড়াইশো কেন, তিনশোও অসম্ভব মনে হচ্ছে না। বাংলার ব্যাটিংয়ের সাড়ে তিনশো প্লাস তোলা অসম্ভব নয়। কিন্তু সবুজ পিচে নার্ভ রেখে সেটা করতে হবে।
বাংলা পারবে কি না, পরের কথা। কর্নাটকও ‘জিতব’ হুঙ্কার ধরে রাখবে কি না, ভবিষ্যত্ বলবে। তবে একটা জিনিস পরিষ্কার। ঢিকির-ঢিকির ৩-১ নয়, ছ’পয়েন্টের ম্যাচ এটা। আর পিচ প্রথম দিনের প্রথম ভাগে যা নমুনা পেশ করল, তাতে ম্যাচের রং পাল্টে দিতে পঞ্চাশটা রানই বোধহয় যথেষ্ট।
ওখানেই খচখচানি। অশোক দিন্দা তো বলে গেলেন, দেড়শোয় অল-আউট করা উচিত ছিল!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
কর্নাটক ২৩৭-৭ (গৌতম ৬৩, বিনয় কুমার ৪২ ব্যাটিং, দিন্দা ৪-৫০, বীরপ্রতাপ ৩-৪৫)।
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy