উইল শর্টজ
শব্দের দুনিয়া বেজায় রঙিন। আমাদের চারপাশে প্রতিদিন ঘুরছে কত-শত শব্দ। সেই শব্দকেই খেলার আকারে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে শব্দের ধাঁধার। সকালে ঘুম থেকে উঠে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এখনও কত শত শব্দের ধাঁধা নিমেষে সমাধান হয়ে যায়। কখনও বা কঠিন শব্দের প্যাঁচে পড়ে মনে হয় এমন শব্দজট বানালো কে!
এই শব্দের খেলার কথা বলতে গিয়েই পরিচয় ‘এনিগমাটোলজি’ শব্দটির সঙ্গে। এনিগমাটোলজি অর্থাৎ ধাঁধা বিষয়ক পড়াশোনা। শুনেই অবাক লাগছে, তাই না? ধাঁধার আবার পড়াশোনা আছে? হ্যাঁ ঠিকই। এনিগমাটোলজি কোনও সহজলভ্য বিষয় নয়। এ বিষয়ের একমাত্র ডিগ্রি রয়েছে যাঁর, তিনি হলেন উইল শর্টজ। নিঃসন্দেহে তিনি শব্দ নিয়ে ধাঁধার জনক।
শোনা যায়, মাত্র ১৪ বছর বয়সে উইল শর্টজ জীবনের প্রথম ধাঁধা বিক্রি করেন। প্রাথমিক স্তরে সেই ধাঁধা নিয়েই এগোতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এমন এক বিষয় নিয়ে এগোনো বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল। ভেবেছিলেন ওকালতি নিয়ে পড়াশোনা করে অর্থ জমিয়ে ফের এই বিষয়টি নিয়ে এগোবেন। তবে ওকালতি পড়তে পড়তেই তিনি খোঁজ পান ধাঁধাবিষয়ক পড়াশোনার। সব ছেড়েছুড়ে পড়তে শুরু করেন এনিগমাটোলজি। প্রাথমিক স্তরে কেউই তাঁকে উৎসাহ দেননি। যদিও সব চড়াই–উতরাই পার করে বেশ ভালভাবেই পড়াশোনা শেষ করেন উইল। হয়ে যান পৃথিবীর একমাত্র ডিগ্রিধারী এনিগমাটোলজিস্ট। এরপর উইলকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৮৭ থেকে ন্যাশনাল পাবলিক রেডিয়োতে তিনি পাজল মাস্টার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৯৩ সালে যুক্ত হন দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর সম্পাদক হিসেবে। তৈরি করে একের পর এক শব্দের ধাঁধার — শব্দজব্দ বানানো ও সম্পাদনা, এই বিষয়টি তিনি এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তা ছাড়া ১৫ বছর ধরে গেমস ম্যাগাজিনের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন উইল। তাঁর হাত ধরেই শুরু হয়েছে আমেরিকান ক্রসওয়ার্ড পাজল টুর্নামেন্ট, ওয়ার্ল্ড পাজল চ্যাম্পিয়নশিপের।
শব্দ-জব্দের দুনিয়ায় তাঁর এমন কৃতিত্ব রয়েছে, যা এক কথা অবিস্মরণীয়। নিউইয়র্ক টাইমস-এ থাকাকালীন তিনি প্রতি সপ্তাহে নতুন ধরনের শব্দের খেলা শুরু করেন। ১৯৯৬-এ আমেরিকার নির্বাচনের দিনে বানানো একটি শব্দ-জব্দ সেই সময় গোটা মার্কিন মুলুকে হুলুস্থুলু ফেলে দেয়। বিল ক্লিনটন ও বব ডোলের মধ্যে কে রাষ্ট্রপতি হবেন, তা নিয়ে প্রত্যেক আমেরিকাবাসীর মধ্যে ছিল উত্তেজনা। উইল তাঁর বানানো শব্দজব্দে ১৪ ঘরের শব্দে ক্লু দিয়ে বসলেন, ‘আগামীকালের পত্রিকার প্রধান সংবাদ’। যাঁরা এটি মেলাতে পারেননি, তাঁরা মুখিয়ে ছিলেন পরের দিনের পত্রিকার জন্য। পরের দিন পত্রিকা হাতে নিয়েই পাঠক পেয়ে গেলেন ধাঁধার উত্তর ‘CLINTON ELECTED’। কিন্তু মজার ব্যপার হল, সেই দিন ক্লিনটন না জিতে বব ডোল জিতে গেলেও ধাঁধা ঠিক মিলে যেত।
তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বজুড়ে। বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘ব্যাটম্যান ফরএভার’-এর জন্য ধাঁধা লিখেছেন তিনি। তাঁর জীবন নিয়ে নির্মিত পুরস্কারপ্রাপ্ত একটি তথ্যচিত্রও রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy