‘লিঙ্গ-নিরপেক্ষ’ পোশাকে ক্রিস্টিন ডেভিস। ছবি ও তথ্যসূত্র: নাসা
নাসাকে চিঠি লিখেছিল কিশোরী হিলারি। জানিয়েছিল, সে মহাকাশচারী হতে চায়। জবাবে মার্কিন গবেষণা কেন্দ্র জানিয়েছিল, তারা মেয়েদের নেয় না।
গত কাল ইতিহাস গড়েছে নাসা-র দুই কন্যা, ক্রিস্টিনা কোখ ও জেসিকা মেয়ার। এই প্রথম ‘স্পেসওয়াক’ করেছে নাসার মহিলা-দল। এর পরেই টুইট করে প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি ও ডেমোক্র্যাট নেত্রী হিলারি ক্লিন্টন জানান, তাঁর কাহিনি। শুধুমাত্র মেয়ে বলে কী ভাবে কিশোরী-বেলার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। লিখেছেন: নতুন প্রজন্মের ছোট ছোট মেয়েরা আজকের ঐতিহাসিক স্পেসওয়াক দেখল। প্রার্থনা করি, তাদের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নগুলো যেন কোনও গণ্ডিতে আটকে না পড়ে।
ছোটবেলাতে স্বপ্ন ভেঙেছিল হিলারি ক্লিন্টনের। কিন্তু এই একুশ শতকেও মন ভেঙেছে অনেকের। সাত মাস আগে প্রথম মহিলা দলের স্পেসওয়াকের কথা ছিল। নাসা ঘোষণাও করে দেয়। সেই সময়ে সেই দলে ক্রিস্টিনা কোখের সঙ্গে মহাকাশে হাঁটার কথা ছিল অ্যান ম্যাক্লেনের। কিন্তু মহিলা মহাকাশচারীর পোশাক কম পড়েছিল। এ-ও মেয়ে বলেই মন ভাঙা। নজির গড়ার সুযোগ থেকে বাদ যান অ্যান। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এত দিন নভশ্চরদের পোশাক তৈরি করাই হতো পুরুষদের কথা মাথায় রেখে। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের দেহের তাপমাত্রা বেশি। তাঁদের কথা মাথায় রেখে মহাকাশচারীর পোশাকে বিশেষ ‘ভেন্টিলেশন’ ও ‘কুলিং সিস্টেম’ থাকে। মেয়েদের শরীরের জন্য ওই পোশাক উপযোগী নয়। এ নিয়ে একটি প্রথম সারির মার্কিন পত্রিকার মহিলা সম্পাদক রসিকতা করে বলেছেন, ‘‘আমাদের অফিসও তো এ রকমই (পুরুষ কর্মীদের কথা ভেবে তৈরি)। কিউবিকলে বসে আমি ঠান্ডায় কাঁপি।’’
কিন্তু নাসা-র বতর্মান কিছু পদক্ষেপে মনে করা হচ্ছে, এই ‘বৈষম্যের’ প্রতিকার হয়তো তারাও চায়। ২০২৪ সালে চাঁদে ফের মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে নাসার। এ বারে পৃথিবীর উপগ্রহে প্রথম মহিলা পাঠিয়ে তারা ফের নজির গড়তে চায়। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে সেই পোশাকের আনুষ্ঠানিক প্রকাশও হয়ে গিয়েছে। নাসার অন্যতম কর্তা জিম ব্রাইডেনস্টাইন জানিয়েছেন, মূল লক্ষ্য হচ্ছে মঙ্গল। কিন্তু তার আগে চাঁদে পাঠানো হবে পরবর্তী প্রজন্মের মহাকাশচারী। সফল হলে পাড়ি দেওয়া যাবে আরও দূরে। আর এ সবের সঙ্গেই অন্যতম প্রয়াস, ‘লিঙ্গবৈষম্য’ কাটিয়ে ওঠা। শুধু নারী-পুরুষ নয়, সব ধরনের বিভেদ। নাসা জানাচ্ছে, যে কোনও উচ্চতার, যে কোনও মাপের, যে কোনও লিঙ্গের মানুষ যাতে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন, সে বিষয়টি মাথায় রেখে পোশাক তৈরি করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে নয়া পোশাকটি পরে সামনে আসেন তার আবির্ষ্কতাই— নাসার জনসন স্পেস সেন্টারের স্পেসসুট ইঞ্জিনিয়ার ক্রিস্টিন ডেভিস। ব্রাইডেনস্টাইন জানান, যে কারও শরীরে ‘ফিট’ হয়ে যাবে এই পোশাক। তবে দু’ধরনের পোশাক তৈরি করা হয়েছে। ক্রিস্টিনের পোশাকটি ‘এক্সপ্লোরেশন এক্সট্রাভেহিকুলার মোবিলিটি ইউনিট’-এর। এটি পরে চাঁদের মাটিতে নামা যাবে। দ্বিতীয় পোশাকটি ভিনগ্রহে নামার নয়, এটি পরে যানে চেপে মহাকাশে গিয়ে আবার পৃথিবীতে ফেরা হবে।
ক্রিস্টিনের ‘লিঙ্গ-নিরপেক্ষ’ পোশাকেই অবশ্য নজর ছিল সকলের। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অ্যাপোলো অভিযানের সময়ে যে পোশাক পরেছিলেন মহাকাশচারীরা, তাতে চাঁদের মাটিতে হাঁটতে গিয়ে বেগ পেতে হয়েছিল। কম মাধ্যাকর্ষণে কার্যত ছোট ছোট লাফ দিয়ে এগোতে হয়েছিল, যাকে ‘বানি হপ’ (খরগোশের মতো লাফ দিয়ে চলা) বলে। বিজ্ঞানীদের আশা, এ বারে সেই পথটাও হয়তো আরও ‘মসৃণ’ হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy