কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
কাশ্মীরে ঘন ঘন জঙ্গি কার্যকলাপ উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছে নিরাপত্তা বাহিনীর। এই আবহেই বৃহস্পতিবার জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে পর্যালোচনা বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৈঠকে ‘সন্ত্রাসমুক্ত জম্মু ও কাশ্মীর’ গড়ার উপর জোর দিয়েছেন তিনি। তবে উপত্যকাকে সন্ত্রাসমুক্ত করার লক্ষ্যে পথের কাঁটা হয়ে উঠেছে একের পর এক জঙ্গি কার্যকলাপ। পাশাপাশি, উপত্যকায় নাশকতা ছড়ানোর প্রচলিত ছক ভেঙে নতুন পথ খুঁজে বার করতে শুরু করেছে জঙ্গিরা। সেই বিষয়টিও উদ্বেগে রাখছে বাহিনীকে।
জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের পর এই প্রথম নিরপত্তা বিষয়ক পর্যালোচনা বৈঠকে বসলেন শাহ। শেষ বার এই বৈঠক হয়েছিল গত বছরের জুনে। সম্প্রতি কাশ্মীরে জঙ্গিদের পর পর হামলার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। কখনও নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা হয়েছে, কখনও আবার নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। রেহাই পাননি ভিন্ রাজ্য থেকে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকেরাও। কাশ্মীরের পর্যটনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র শ্রীনগরেও সম্প্রতি জঙ্গি হামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার উচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) প্রধান, রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র) প্রধান, চিফ অফ আর্মি স্টাফ, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের ডিজি এবং সিএপিএফের কর্তারা। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্রসচিব, জম্মু ও কাশ্মীরের লেফ্টেন্যান্ট গভর্নর এবং মুখ্যসচিবও ছিলেন বৈঠকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বৈঠকে ‘সন্ত্রাসমুক্ত জম্মু ও কাশ্মীর’ গড়ার ডাক দিয়েছেন শাহ। উপত্যকায় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের ফলে সন্ত্রাসবাদ অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। অতীতের তুলনায় জঙ্গি অনুপ্রবেশ এবং নাশকতার ঘটনাও বর্তমানে অনেকটা কমেছে বলে মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
২০১৯ সালে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত করা হয়। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সরকারি পরিসংখ্যান তুলে জানিয়েছে ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরে ১৪২ জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। এ বছরে এখনও পর্যন্ত সংখ্যাটি ৪৫। তবে উদ্বেগ বৃদ্ধি হয়েছে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর জঙ্গিদের হামলাকে কেন্দ্র করে। ২০১৯ সালে পাঁচ জন মারা গিয়েছিলেন। এ বছরে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৪ জন সাধারণ মানুষের।
পাশাপাশি, কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধি হওয়ার কারণে জঙ্গি সংগঠনগুলিও নিজেদের ছক বদলে ফেলছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার ফলে এখন জঙ্গি সংগঠনে নতুন নিয়োগের জন্য সরাসরি যোগাযোগ করা বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় তাই সরাসরি যোগাযোগের বদলে, সমাজমাধ্যম ব্যবহার করছে তারা। আধিকারিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে পিটিআইয়ের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটস্অ্যাপ, এক্স, টেলিগ্রামের মতো সমাজমাধ্যম ব্যবহার করছে সংগঠনগুলি। পরিচয় গোপন রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে ভুয়ো প্রোফাইল। ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন)-ও ব্যবহার করা হচ্ছে।
পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণরেখার ও পার থেকে জঙ্গি অনুপ্রবেশের আশঙ্কা ঘিরেও উদ্বেগ রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রকে উদ্ধৃত করে সম্প্রতি পিটিআই জানিয়েছিল, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে তুলাইল, গুরেজ়, মাচিল এবং গুলমার্গ হয়ে একাধিক অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। সে ক্ষেত্রে কাশ্মীর উপত্যকায় স্থানীয় তরুণেরা যাতে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে কাশ্মীর পুলিশ এবং ভারতীয় সেনা। তবে কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল ‘সুপ্ত আতঙ্ক’। জঙ্গিরা এক বার অনুপ্রবেশ করলে, প্রথমে তারা সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে থাকে।
কাশ্মীরের জঙ্গিরা বর্তমানে নিজেদের এলাকাও বদলাতে শুরু করেছে। উপত্যকার যে অঞ্চলগুলিতে খুব বেশি জঙ্গি কার্যকলাপ দেখা যেত না, সেই অঞ্চলগুলিতেও সাম্প্রতিক কালে নাশকতার ঘটনা ঘটছে। কাশ্মীরে এত দিন রাজৌরি এবং পুঞ্চে বেশিরভাগ জঙ্গি কার্যকলাপ সীমিত ছিল। বর্তমানে সীমান্তবর্তী এই দুই জেলায় নাশকতা কিছুটা কমেছে। তবে ডোডা, রেইসি, কিস্তওয়ার, কাঠুয়া, উধমপুর এবং জম্মুতে নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছে জঙ্গিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy