মঙ্গলে সেই ভয়ঙ্কর ধুলোর ঝড়। ছবি সৌজন্যে: নাসা
ভয়ঙ্কর ঝড় উঠেছিল মঙ্গলে। ধুলোর উদ্দাম ঝড়। সেই তুলকালাম ঝড়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল ‘লাল গ্রহ’। উথালপাতাল করে দেওয়া ধুলোর ঝড় গোটা মঙ্গল গ্রহটাকেই ঢেকে ফেলেছিল। প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল নাসার পাঠানো রোভার ‘অপরচুনিটি’র। তার সবক’টি যন্ত্রকে বিগড়ে দিয়ে চির দিনের মতোই ‘অপরচুনিটি’-কে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল। গত বছর। বিজ্ঞানীদের ধারণা, কয়েকশো কোটি বছর আগে ধুলোর এমন ভয়ঙ্কর ঝড়ের জন্যই লাল গ্রহের সবটুকু জল উবে গিয়েছিল মহাকাশে।
গত এক দশক বা তারও কিছু বেশি সময়ে ধুলোর এতটা উদ্দাম ঝড়ে আর তোলপাড় হয়নি লাল গ্রহ। এমন ভয়ঙ্কর ধুলোর ঝড় মঙ্গলে হয়েছিল ১১ বছর আগে। ২০০৭-এ। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই কথা জানিয়েছে।
তবে কেন এক দশকে এক বার করে এই ভয়ঙ্কর ধুলোর ঝড় ওঠে লাল গ্রহে, তা নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এখনও ধোঁয়াশায়। কারণ, এমন ভয়ঙ্কর ধুলোর ঝড়ের হদিশ মঙ্গলে বিশেষ মেলেনি বলে তাদের নিয়ে তেমন ভাবে গবেষণার সুযোগই পাননি বিজ্ঞানীরা।
ভয়ঙ্কর ধুলোর ঝড়ে উত্তাল মঙ্গল। ছবি সৌজন্যে: নাসা
সেই সময় মঙ্গলের পিঠ থেকে উঠে আসা ধুলো তৈরি করেছিল ঘন জমাট বাঁধা বিশাল বিশাল মেঘ। মেঘগুলি মঙ্গলের পিঠের ধুলো নিয়ে উঠে গিয়েছিল এমনকী, ৮০ কিলোমিটারেরও বেশি। অত্যন্ত উঁচু স্তম্ভের মতো। মেঘগুলির মধ্যে ছিল প্রচুর জলীয় বাস্পের কণা। মেঘগুলি যত উপরে উঠেছে, সূর্যের আলো আর মহাজাগতিক রশ্মি-সহ নানা ধরনের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ মেঘের ভিতরে থাকা জলীয় বাষ্পের কণাগুলিকে তত বেশি করে ভেঙে দিয়েছে। উবে গিয়েছে জলের বিন্দুগুলি।
আরও পড়ুন- চাঁদকে নাচতে দেখেছেন কখনও? একটা নয়, দু-দুটো চাঁদ নাচানাচি করছে নেপচুনে!
আরও পড়ুন- বিজ্ঞানে কেন নোবেল নেই বাঙালির ঘরে?
নাসার গবেষকদের দাবি, কয়েকশো কোটি বছর আগে হয়তো এই ভাবেই মঙ্গলের বুক থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল তার জলের ভাণ্ডার। মঙ্গলে ধুলোর ঝড় হয় আকছারই। তবে অত বড় ধরনের ধুলোর ঝড় হয় কালেভদ্রে। এক দশক বা তার কিছু বেশি সময়ে বড়জোর এক বার। সেই ভয়ঙ্কর ঝড়টাই হয়েছিল গত বছর। ওই সময় নাসার বেশ কয়েকটি মহাকাশযান ছিল মঙ্গলের আশপাশে। তারা সেই ঝড়ের ছবি পাঠিয়েছিল। সেগুলির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়েছে হালের দু’টি গবেষণাপত্র।
মঙ্গলে ধুলোর মেঘের স্তম্ভ (হলুদ, সাদা রং) আর যে মেঘে রয়েছে জলীয় বাস্পের কণা (নীল, সাদা রং)। ছবি সৌজন্যে: নাসা
গবেষণা জানিয়েছে, সেই ঘন জমাট বাঁধা ধুলোর মেঘের উঁচু উঁচু স্তম্ভগুলি তৈরি হয়েছিল মঙ্গলের পিঠের সেই জায়গায় যেখানে খুব ধুলো উড়ছে। আমাদের রোড আইল্যান্ড যতটা জায়গা জুড়ে রয়েছে, লাল গ্রহের পিঠে সেইটুকু জায়গা থেকেই উঠে আসা ধুলোয় তৈরি হয়েছিল মেঘের সেই উঁচু উঁচু স্তম্ভগুলি। গত বছর গোটা মঙ্গল জুড়ে যখন চলছে ভয়ঙ্কর ধুলোর ঝড় তখন সেই মেঘের স্তম্ভগুলি লাল গ্রহের পিঠ থেকে উঠে গিয়েছিল কম করে ৫০ মাইল বা ৮০ কিলোমিটার। নেভাডা রয়েছে যতটা জায়গা জুড়ে সেই সময় মঙ্গলের ধুলোর মেঘগুলিও ছিল ঠিক ততটা জায়গায়। পরে যখন সেই ধুলোর মেঘের স্তম্ভগুলি ভাঙতে শুরু করে, তখন তা মঙ্গলের পিঠ থেকে কিছুটা উপরে (৩৫ মাইল বা ৫৬ কিলোমিটার) ধুলোর একটা পুরু স্তর তৈরি করেছিল। গোটা আমেরিকা যতটা জায়গা জুড়ে মঙ্গলের উপর ধুলোর পুরু স্তর ছড়িয়ে পড়েছিল সেই ততটা এলাকা জুড়েই।
মূল গবেষক ভার্জিনিয়ার হ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাস হিভেন্স বলেছেন, ‘‘মঙ্গলে প্রতি বছরই ধুলোর মেঘের স্তম্ভ তৈরি হয়। লাল গ্রহের বিভিন্ন প্রান্তে তা তৈরি হয়। কিন্তু এক থেকে দেড় দিনের মধ্যেই সেই স্তম্ভগুলি ভেঙে পড়ে। কিন্তু গত বছর ঘটেছিল অভূতপূর্ব ঘটনা। ধুলোর মেঘের স্তম্ভগুলি কিছুতেই ভাঙতে চাইছিল না। উঁচু উঁচু স্তম্ভগুলি টিঁকে ছিল তিন থেকে সাড়ে তিন সপ্তাহ। আর সেগুলি শুধুই কোনও একটি এলাকায় নয়, গোটা মঙ্গল গ্রহটাকেই ঢেকে দিয়েছিল।’’
বিজ্ঞানীদের ধারণা, এমন ভয়ঙ্কর ধুলোর ঝড়ের জন্যই কয়েকশো কোটি বছর আগে মঙ্গলের জলের ভাঁড়ার উবে গিয়েছিল মহাকাশে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy