Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Science News

এক লক্ষ কোটি গাছ বসালেই ফিরে পাওয়া যাবে ১০০ বছর আগেকার ফুরফুরে বাতাস!

মাথায় রাখতে হবে, গাছ লাগালেই বাঁচবেন। না হলে যে হারে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে ফুলে-ফেঁপে ওঠা সমুদ্রের জলেই তলিয়ে যেতে হবে আমাদের।

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৯ ১২:৫৯
Share: Save:

গাছ লাগাতে হবে অন্তত এক লক্ষ কোটি। খুব তড়িঘড়ি। তবেই আমার, আপনার শ্বাসের বাতাসের বিষ কমবে। আমাদের বায়ুমণ্ডল হয়ে উঠবে ১০০ বছর আগেকার মতো।

মাথায় রাখতে হবে, গাছ লাগালেই বাঁচবেন। না হলে যে হারে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে, তাতে ফুলে-ফেঁপে ওঠা সমুদ্রের জলেই তলিয়ে যেতে হবে আমাদের। কারণ, উষ্ণায়নের জেরে বরফ গলছে অস্বাভাবিক দ্রুত হারে। আর বিশ্বজোড়া শিল্পায়নের দৌলতে বাতাস ভয়ঙ্কর ভাবে বিষিয়ে উঠছে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড-সহ নানা ধরনের গ্রিন হাউস গ্যাসে। যা তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবীর।

সুইৎজারল্যান্ডের জুরিখে সুইস ফেডারাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (ইটিএইচ জুরিখ) হালের একটি গবেষণা এই কথা জানিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ।

এক লক্ষ কোটি গাছ বসানোর কথা ভাবলেই তো আমার, আপনার মাথায় প্রশ্নটা আসে, অত জায়গা কি মিলবে পৃথিবীতে?

গাছ বসাতে জমির অভাব হবে না, জানাল গবেষণা

একেই তো ধরিত্রী আমাদের তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থলের। গাছ পোঁতার জমি তো জলের নিরিখে খুব সামান্যই। তার উপর তো শুধুই চারা গাছ পুঁতলে হবে না। সেই সব গাছ বেড়ে উঠলে, তাদের ডালপালাকে মেলে ধরার সুযোগ দিতে হবে। তাদেরও ছড়িয়ে বেড়ে ওঠার, বেঁচে থাকার সুযোগ দিতে হবে। সেই জায়গাটা কী ভাবে পাওয়া যাবে পৃথিবীতে?

আরও পড়ুন- সূর্যের রহস্যভেদ, আন্দিজের পাহাড়চূড়ায় উড়ল বাঙালির বিজয়পতাকা!

ওই গবেষণা হিসাব কষে দেখিয়েছে, যদি আমার, আপনার সদিচ্ছা আর আন্তরিকতা থাকে দ্রুত এক লক্ষ কোটি গাছ বসিয়ে ফেলার, তা হলে, অন্তত জায়গার অভাবে সেই সব গাছের বেড়ে উঠতে ও বেঁচে থাকতে কোনওই অসুবিধা হবে না।

কমে যাবে বায়ুমণ্ডলের ২৫ শতাংশ কার্বন

পৃথিবীর স্থলভাগের যতটা নিয়েছে শহর আর মফস্‌সলগুলি, চাষাবাদের জন্য সেই জমিতে যতটা ভাগ বসানো হয়েছে, তাকে হিসাবের বাইরে রেখেও গবেষকরা দেখিয়েছেন, গাছ বসানোর জন্য ৩৫ লক্ষ বর্গ মাইল বা ৯০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা পড়ে রয়েছে পৃথিবীতে। জায়গাটা মোটেই কম নয় কিন্তু।

বিষিয়ে যাচ্ছে বাতাস। -ফাইল ছবি।

গবেষণা এও জানিয়েছে, প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ফলে বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণে কার্বন জমা হয়েছে, এক লক্ষ কোটি গাছ খুব তড়িঘড়ি বসিয়ে ফেলা সম্ভব হলে তার ২৫ শতাংশই বায়ুমণ্ডল থেকে সরে যাবে। বায়ুমণ্ডল হয়ে যাবে ১০০ বছর আগেকার মতো।

কী ভাবে সম্ভব?

গাছ তার রান্নাবান্নার (বিজ্ঞানের পরিভাষায়, সালোকসংশ্লেষ) জন্য জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করে দু’টি জিনিসকে। এক, সূর্যালোক। আর দুই, কার্বন ডাই-অক্সাইড। ফলে, যত বেশি গাছ বসানো সম্ভব হবে, তাদের রান্নাবান্নার প্রয়োজনে গাছ তত বেশি করে কার্বন চাই-অক্সাইড টেনে নেবে বায়ুমণ্ডল থেকে। তাতে বাতাসে কার্বনের পরিমাণ কমবে উল্লেখযোগ্য ভাবে। যে কার্বনটা জমা থাকবে গাছের পাতা, কাণ্ড, শাখাপ্রশাখায়। গাছের বেড়ে ওঠার প্রয়োজনে তা কাজে লাগবে। সেটাই তো প্রকৃতির নিয়ম।

বায়ুমণ্ডল থেকে উবে যাবে ২০, ৫০০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন!

গবেষণা জানিয়েছে, শিল্পবিপ্লবের পর থেকে এখনও পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলে জমা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টন বা ৩০ হাজার কোটি মেট্রিক টন কার্বন। আর এক লক্ষ কোটি গাছ প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠলে, তা বায়ুমণ্ডল থেকে টেনে নেবে ২০, ৫০০ কোটি মেট্রিক টন বা ২২ হাজার ৫০০ কোটি টন কার্বন।

আরও পড়ুন- মুঠো মুঠো সোনা, প্ল্যাটিনাম ছড়িয়ে পড়ছে মহাকাশে! ঘটকালি করছে ব্ল্যাক হোল​

ফলে, শিল্পবিপ্লবের পর থেকে এখনও পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলে যতটা পরিমাণে কার্বন জমা হয়েছে, এক লক্ষ কোটি গাছ প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠার পর তার দুই-তৃতীয়াংশ কার্বনই টেনে নেবে নিজেদের শরীরে। তাই বাতাসে বিষ কমবে নিশ্চিত ভাবেই।

এক লক্ষ কোটি গাছ বসানো হবে কোথায় কোথায়?

গবেষণা তাও জানিয়ে‌ছে। এক‌েবারে মানচিত্র দিয়ে বলে দিয়েছে, কোথায় কোথায় বসানো যাবে সেই এক লক্ষ কোটি গাছ। আর তারা বায়ুমণ্ডল থেকে কতটা কার্বন টেনে নিয়ে নিজেদের শরীরে ভরে রাখতে পারবে।

ফাইল ছবি

গবেষকরা দেখিয়েছেন, সেই এক লক্ষ কোটি গাছের একটি বড় অংশ বসানোর জন্য পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি জায়গা পড়ে রয়েছে রাশিয়ায়। ৫ লক্ষ ৮৩ হাজার বর্গ মাইল বা ১৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। গাছ বসানোর জমির নিরিখে তার পরেই রয়েছে আমেরিকা। রয়েছে ৩ লক্ষ ৯৭ হাজার ৭০০ বর্গ মাইল বা ১০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। তার পর রয়েছে কানাডা (৩ লক্ষ ২ হাজার ৭০০ বর্গ মাইল বা ৭ লক্ষ ৮৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার), অস্ট্রেলিয়া (২ লক্ষ ২৩ হাজার ৯০০ বর্গ মাইল বা ৫ লক্ষ ৭৮ হাজার ৯০০ বর্গ কিলোমিটার), ব্রাজিল (১ লক্ষ ৯১ হাজার ৯০০ বর্গ মাইল বা ৪ লক্ষ ৯৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার) ও চিন (১ লক্ষ ৫৫ হাজার ২০০ বর্গ মাইল বা ৪ লক্ষ ২ হাজার বর্গ কিলোমিটার)। ওই পরিমাণ জায়গা আদতে গোটা আমেরিকার চেহারা।

বনাঞ্চল বাড়বে তিন গুণ!

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই এক লক্ষ কোটি গাছ বসানোর ফলে, পৃথিবীর বনাঞ্চল বেড়ে যাবে তিন গুণ। তবে তা শহরের এলাকায় ভাগ বসাবে না। কেড়ে নেবে না চাষাবাদের জমিও।

ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-এর রিপোর্টও জানাচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা যাতে আরও ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ২.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটেরও বেশি না বেড়ে যায়, তার জন্য আরও ৩৮ লক্ষ বর্গ মাইল বা ১ কোটি বর্গ কিলোমিটার জমিতে বনাঞ্চল গড়ে তুলতে হবে। অন্তত।

যদিও প্রশ্ন রয়েছে...

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এর পরেও সমস্যা থাকবে। কারণ, সব চারাগাছই বৃক্ষে পরিণত হবে না। তার আগেই শুকিয়ে যাবে। আর যেগুলি বাঁচবে, তাদের অনেকেই হারিয়ে যাবে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে। তাদের জায়গায় নতুন নতুন গাছের চারা পুঁতলে তাদেরও বেড় েওঠার সময় দিতে হবে। আর তত দিনে আরও বেশি শিল্পায়নের জন্য বায়ুমণ্ডলে জমা হবে আরও কার্বন। ফলে, সমস্যার শেষটা কোথায়, তা নিয়ে কিন্তু বড়সড় প্রশ্ন একটা থেকেই যাচ্ছে!

অন্য বিষয়গুলি:

Swiss Federal Institute of Technology, Zurich (ETH Zurich) Climate Change Plantations বৃক্ষরোপণ জলবায়ু পরিবর্তন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy