ইশান ওঙ। ছবি- টুইটারের সৌজন্যে।
পৃথিবীর কাঁধের বিষের বোঝাটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাল্কা করে দেওয়ার বাজি ধরেছেন তিনি। যাতে বাতাসে থাকা বিষ কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বাতাস থেকে টেনে বার করে নেওয়া যায়। নিখরচায়। এক লক্ষ কোটি গাছ বসিয়ে। বিশ্বজুড়ে।
বাতাস থেকে টেনে বার করে নেওয়া বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে সঞ্চয় করে মানুষের উপকারে লাগানোর পথেও হাঁটতে শুরু করেছেন। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রাবৃদ্ধির রথের রশিতে লাগাম পরাতে। যাতে আজ থেকে ৩০ বছর পর ২০৫০-এ পৌঁছে আমাদের আর হা-হুতাশ করতে না হয়। এই গ্রহের গড় তাপমাত্রা যাতে প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে না যায়। যার জেরে এই শতাব্দীর শেষে পৌঁছে রসাতলে না যায় পৃথিবী। এ সবই চান তিনি।
তিনি আর কেউ নন। আমেরিকার অনলাইন সংবাদসংস্থা ‘রেডিট’-এর প্রাক্তন চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার ঈশান ওং। রেডিট-এ যাওয়ার আগে যিনি উচ্চপদে কাজ করেছেন ফেসবুক, পেপ্যাল-এর মতো সংস্থাগুলিতেও। সেই ঈশান লক্ষ কোটি গাছ বসানোর জন্য ইতিমধ্যেই খুলে ফেলেছেন একটি সংস্থা। যার নাম ‘টেরাফরমেশন’।
চার বছর ধরে পরিবেশ ও জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণাপত্র পড়ে আর তাঁর হাতে গড়া সংস্থার নিজস্ব গবেষণায় যিনি এই তথ্য পেয়ে গিয়েছেন যে বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে সবচেয়ে সহজে, একেবারেই নিখরচায় টেনে বার করে আনতে পারে একমাত্র গাছই। সব ধরনের ছোট, বড়, মাঝারি আকারের গাছ। নিজেদের সালোকসংশ্লেষের জন্য।
ঈশান তত দিনে এও জেনে ফেলেছেন, বাতাসে এখন যে বিষের বোঝা রয়েছে তা যদি আর কিছুটা বাড়েও, তা হলেও আর ৩০ বছরের মধ্যে সেই বিষ বাতাস থেকে টেনে বার করে নিয়ে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রাবৃদ্ধিকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে একমাত্র তখনই নিখরচায় বেঁধে রাখা যায় যদি বিশ্বজুড়ে বসানো যায় অন্তত এক লক্ষ কোটি গাছ। এই হিসাবও কষে ফেলেছেন ঈশান যে, দেশে দেশে সেই এক লক্ষ কোটি গাছ বসানোর জন্য প্রয়োজন হবে ৩০০ কোটি একর পতিত বা অব্যবহৃত জমি। গোটা উত্তর আমেরিকার আয়তনের চেয়েও যা বেশি।
২০১৭-য় রেডিট থেকে অবসর নেওয়ার কথা ভাবছিলেন ঈশান। ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন হাউইয়ের দ্বীপে। কিন্তু এত গরম যে সমুদ্রসৈকতটা আর কিছুতেই ভাল লাগছিল না তাঁর। তখনই মনে মনে ঠিক করে ফেলেন, উষ্ণায়ন আর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যই যখন এই সব, তখন যে ভাবেই হোক তা রুখতে হবে। তার পর বিস্তর বই আর গবেষণাপত্র পড়ে ঈশান বুঝে যান, গাছই একমাত্র নিখরচায় সবচেয়ে তাড়াতাড়ি এই সমস্যা থেকে বার করে আনতে পারে সভ্যতাকে।
বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই নেমে পড়েন যজ্ঞে। খুলে ফেলেন তাঁর সংস্থা টেরাফরমেশন। রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)’-এর রিপোর্ট বলছে, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রাবৃদ্ধিকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে হলে বাতাস থেকে টেনে বার করে আনতে হবে ৭৩ হাজার কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস।
আইপিসিসি-র রিপোর্টে এ-ও জানানো হয়, বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসকে টেনে বার করে নেওয়ার জন্য এখন যে প্রচুর ব্যয়সাপেক্ষ প্রযুক্তিগুলি চালু রয়েছে বিশ্বজুড়ে তা বছরে মাত্র ৪ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বাতাস থেকে টেনে বার করে আনতে পারে। অথচ পৃথিবীতে এখনও যত গাছ রয়েছে তারা সকলে মিলে বছরে বাতাস থেকে টেনে বার করে আনতে পারে ৭৬০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস। যা আমেরিকার সারা বছরে বাতাসে জমা করা কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণের চেয়ে বেশি। এই ভাবেই ঈশানের সংস্থা হিসাব কষে দেখেছে, এক লক্ষ কোটি গাছ বসালেই সেটা সম্ভব হবে।
তবে দেশে দেশে গিয়ে গাছ বসাবে না ঈশানের সংস্থা। টেরাফরমেশন-এর চিফ ফরেস্ট্রি অফিসার জিল ওয়াগনার বলেছেন, ‘‘আমাদের ক্লায়ান্ট বিভিন্ন দেশের সরকার। জমির মালিকরা। আর পরিবেশবিদ ও পরিবেশ আন্দোলনকারী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন। আমরা জাহাজে চাপিয়ে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য বীজ ব্যাঙ্ক দিচ্ছি। নার্সারি কিট্স দিচ্ছি। গাছ লাগানো ও সংরক্ষণের জন্য অর্থসাহায্য দেব। দেব আইনি পরামর্শ, গবেষণাগারের জন্য জরুরি সফটওয়্যার। দেব প্রয়োজনীয় সব রকমের প্রশিক্ষণও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy