Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Google

Water From Air: ফুটিফাটা মাঠেও বাতাস থেকে টেনে নেওয়া যাবে দিনে ৫ লিটার জল! অভিনব যন্ত্র 'অ্যালফাবেট'-এর

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার’-এ। যন্ত্রটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অ্যাটমস্ফেরিক ওয়াটার হার্ভেস্টার’।

বাতাস থেকে জল শুষে নেওয়ার সেই যন্ত্র। ছবি সৌজন্যে- ‘এক্স- দ্য মুনশট ফ্যাক্টরি’, অ্যালফাবেট।

বাতাস থেকে জল শুষে নেওয়ার সেই যন্ত্র। ছবি সৌজন্যে- ‘এক্স- দ্য মুনশট ফ্যাক্টরি’, অ্যালফাবেট।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২১ ১৩:৫৪
Share: Save:

জলের ভাঁড়ার দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে আরও নীচে নেমে ভূগর্ভস্থ জল তুলে আনার দরকার হবে না। জলে থাকবে না দু’টি বিষ- আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডও। একেবারেই বিশুদ্ধ সেই জল তৈরি করা যাবে বাতাস থেকেই। বাতাসের জলীয় বাষ্প শুষে নিয়ে। তার জন্য খরচ করতে হবে না ছিটেফোঁটা বিদ্যুৎশক্তিও। যন্ত্রটি চলবে সৌরশক্তিতে।

এমনই একটি যন্ত্রের ‘প্রোটোটাইপ’ (ক্ষুদ্র সংস্করণ) উদ্ভাবন করল গুগ্‌ল-এর তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা ‘অ্যালফাবেট’। এ ব্যাপারে গবেষণার দায়িত্বে থাকা অ্যালফাবেট-এর ‘এক্স- দ্য মুনশট ফ্যাক্টরি’-র উদ্ভাবিত সৌরশক্তিচালিত যন্ত্রটি কতটা কার্যকরী হতে পারে, তা দিয়ে বিশ্বের কত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারে আর্সেনিক, ফ্লোরাইড-মুক্ত বিশুদ্ধ পানীয় জল সে ব্যাপারে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার’-এ।

যন্ত্রটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অ্যাটমস্ফেরিক ওয়াটার হার্ভেস্টার (এডব্লিউএইচ)’। আর প্রকল্পটির নাম- ‘হাইড্রেশন টু এভরিওয়ান (এইচটুই)’। গবেষক দলে রয়েছেন গুগল-এর প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানীরাও।

বিশুদ্ধ পানীয় জল পান না ২২০ কোটি মানুষ

রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসাব জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে বিশ্বে প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জন বিশুদ্ধ পানীয় জল পান না। গোটা বিশ্বে বিশুদ্ধ পানীয় জলের চরম অভাব রয়েছে যে সব জায়গায়, সেখানে থাকেন অন্তত ২২০ কোটি মানুষ। যার দুই-তৃতীয়াংশেরই বসবাস আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায়।

নেচার-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, উষ্ণায়নের জেরে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব আরও বাড়বে আর এক কি দেড় দশকের মধ্যে। তার ফলে ৩০০ কোটিরও বেশি মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে বিশুদ্ধ পানীয় জল।

গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন দ্রুত কমিয়ে এনে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তা নিয়ে রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে রবিবার থেকেই স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় শুরু হচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘সিওপি২৬ (কপ-২৬)’ শীর্ষ সম্মেলন। চলবে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত।

তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থলের পৃথিবীতে মূল সমস্যাটা হল, ভূপৃষ্ঠে রয়েছে মাত্র মোট জলের ভাঁড়ারের ০.০০১ শতাংশ। ভূপৃষ্ঠের যতটা নীচ পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হয়েছে, পানীয় জলের সন্ধানে তার চেয়ে আরও নীচে নামা সম্ভব হচ্ছে না সর্বাধুনিক প্রযুক্তিরও অসহায়তা রয়েছে বলে।

বাতাস থেকে জল শুষে নেওয়ার সেই যন্ত্রের বিভিন্ন অংশ। ছবি সৌজন্যে- ‘এক্স- দ্য মুনশট ফ্যাক্টরি’, অ্যালফাবেট।

বাতাস থেকে জল শুষে নেওয়ার সেই যন্ত্রের বিভিন্ন অংশ। ছবি সৌজন্যে- ‘এক্স- দ্য মুনশট ফ্যাক্টরি’, অ্যালফাবেট।

জলীয় বাষ্প শুষে পানীয় জল দিনে ৫ লিটার

নেচার-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, বিশ্বের যে সব এলাকায় এখন বিশুদ্ধ পানীয় জল একরকম পাওয়া যায় না বললেই হয়, সেই সব জায়গাতেও এই নতুন প্রযুক্তির যন্ত্রের মাধ্যমে বাতাস থেকে জলীয় বাষ্প শুষে নিয়ে দিনে ৫ লিটার করে বিশুদ্ধ পানীয় জল তৈরি করা যাবে। যা করা যাবে পুরোপুরি সৌরশক্তি ব্যবহার করেই। ফলে, বিদ্যুৎশক্তির জন্য কোনও খরচও থাকবে না। এই যন্ত্রটির মাধ্যমে বাতাসের জলীয় বাষ্প শুষে নিতে আর তাকে তরল জলে পরিণত করতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘সোলার ফোটোভোল্টেইক সেল’। পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে এই যন্ত্রের মাধ্যমে প্রতি বর্গ মিটার বাতাস থেকে প্রতি ঘণ্টায় ১৫০ মিলিলিটার বিশুদ্ধ পানীয় জল উৎপাদন করা যাচ্ছে।

তবে বিশ্বের যে সব জায়গায় বাতাসের আর্দ্রতার মাত্রা ৩০ শতাংশেরও কম, সেই সব এলাকায় বাতাসের জলীয় বাষ্প থেকে এই পরিমাণ বিশুদ্ধ জল তৈরি করা সম্ভব হবে না বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

গ্রাফিক সৌজন্যে- ‘এক্স- দ্য মুনশট ফ্যাক্টরি’, অ্যালফাবেট।

গ্রাফিক সৌজন্যে- ‘এক্স- দ্য মুনশট ফ্যাক্টরি’, অ্যালফাবেট।

যন্ত্রটি কাজ করবে কী ভাবে?

যন্ত্রটির মোট ৬টি অংশ। এক, সোলার হিটার। দুই, ডেসিক্যান্ট হুইল। তিন, রিসার্কুলেটিং এয়ার ফ্যান। চার, হিট এক্সচেঞ্জার। পাঁচ, কনডেন্সার। এবং ছয়, অ্যাম্বিয়েন্ট এয়ার ফ্যান। (সঙ্গের ছবিতে দেখানো হয়েছে অংশগুলি)

সূর্যালোক দিয়ে প্রথমে গরম করা হবে যন্ত্রের ভিতরে থাকা বাতাস। সেই বাতাসে উষ্ণ ও শীতল, দু’রকম বাতাসই রয়েছে। তার পর যন্ত্রের উষ্ণ বাতাস ডেসিক্যান্ট হুইল দিয়ে শুষে নেবে বাতাসের জলীয় বাষ্প। তাতে যন্ত্রে ঢুকে পড়বে বাইরের উষ্ণ বাতাসও। সেই উষ্ণ বাতাসকে যন্ত্রের মধ্যে থাকা ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে দিয়ে বইয়ে ঠান্ডা করা হবে। তাতেই উষ্ণ বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্প পরিণত হবে তরল জলে। যে জল জমা হবে যন্ত্রের একেবারে নীচের অংশে।

অ্যালফাবেট-এর তরফে জানানো হয়েছে, যাতে এই যন্ত্রটিকে সাধারণ মানুষের নাগালে তাড়াতাড়ি পৌঁছে দেওয়া যায় তার জন্য পরবর্তী গবেষণা শুরু হয়েছে।

ছবি ও গ্রাফিক সৌজন্যে- ‘এক্স- দ্য মুনশট ফ্যাক্টরি’, অ্যালফাবেট।

অন্য বিষয়গুলি:

Google Alphabet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy