২৩ অগস্টের আগেই ভারত চাঁদের মাটিতে নেমে পড়বে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। ছবি: টুইটার।
আজ, বৃহস্পতিবার চাঁদের কক্ষপথে শুরু হচ্ছে বিচ্ছেদ পর্ব। বুধবার ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এক্স হ্যান্ডলে জানিয়েছে, আজ, চাঁদের কক্ষপথে মহাকাশযান (প্রপালশন মডিউল) থেকে বিচ্ছিন্ন হবে চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রম। বুধবার চাঁদের কক্ষপথে ফের লাফ দিয়েছে চন্দ্রযান-৩। তার ফলে সে চাঁদের আরও কাছের কক্ষপথে পৌঁছে গিয়েছে। অভিযানের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এটিই ছিল কক্ষপথ পরিবর্তনের শেষ পর্যায়। ইসরো সূত্রের খবর, ল্যান্ডার মডিউল মূল মহাকাশযান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ কিলোমিটার উপরের কক্ষপথে পৌঁছবে এবং সেখান থেকে ধাপে ধাপে তাকে নামানো হবে চাঁদের মাটিতে।
কবে নামবে ভারতের ল্যান্ডার? ইসরোর ঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২৩ অগস্ট সন্ধ্যা পৌনে ছটা নাগাদ। কিন্তু ঘোষিত দিনের আগেই ভারত চাঁদের মাটিতে নেমে পড়বে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। সেই জল্পনা বেড়েছে মূল মহাকাশযান থেকে বিক্রমের বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনায়। কারণ, এই বিচ্ছেদ মানেই অবতরণ পর্বের সূচনা। এবং সাধারণত, বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং অবতরণের মধ্যে এত দিন ব্যবধান রাখা হয় না। ইসরো কর্তাদের একাংশ মেনে নিচ্ছেন যে আজ, বৃহস্পতিবার বিক্রম আলাদা হয়ে গেলে তাকে চাঁদে নামানোর জন্য অনেক দিন সময় হাতে পাওয়া যাবে। মূল মহাকাশযানের তুলনায় বিক্রম আকারে ছোট হওয়ায় তাকে ঘুরপাক খাইয়ে নামানো সোজা।
তবে কি ঘোষিত সময়ের আগে বিক্রমকে চাঁদে নামানো হতে পারে। সরাসরি মন্তব্যে নারাজ ইসরোর কর্তাদের অনেকেই। তাঁদেরই কেউ কেউ বলছেন, ঘোষিত নির্ঘণ্টের আগে যদি অবতরণ করানো হয়, তবে সেই সিদ্ধান্ত সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেই আসবে। কারণ, সেই সিদ্ধান্তের পিছনে রাজনৈতিক কোনও কারণ থাকতে পারে। তবে অনেকেই বলছেন, মহাকাশ গবেষণা দফতর যে হেতু প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই ‘অতি-গুরুত্বপূর্ণ’ সিদ্ধান্ত সাত নম্বর লোককল্যাণ মার্গ (সাবেক সাত নম্বর রেসকোর্স) থেকেই আসবে, তা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না।
স্পষ্ট ভাবে না বলা হলেও মহাকাশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগিতামূলক অভিযানে চোখ রাখলে একটি বিশেষ কারণ উঠে আসতে পারে বলেও মনে করছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীদের অনেকে। তাঁরা বলছেন, বর্তমানে ভারতের চন্দ্রযান-৩ তেমন চাঁদের কক্ষপথে আছে, তেমনই আছে রাশিয়ার লুনা-২৫। ভারত রওনা দিয়েছিল জুলাই মাসে। সেখানে রুশ দূত রওনা দিয়েছে গত ১০ অগস্ট। দু’জনেরই লক্ষ্য চাঁদের দক্ষিণ মেরু। প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত কোনও দেশ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছতে পারেনি। ২০১৯ সালে ভারতের চন্দ্রযান-২ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামতে গিয়েছিল। তবে অভিযান ব্যর্থ হয়।
এ বারও চন্দ্রযান-৩ দক্ষিণ মেরুতে নামবে বলে ঠিক করেছে। একই লক্ষ্য রুশ যানেরও। সেখানেই দুই দেশের ঠান্ডা টক্কর চলছে বলে মনে করছেন অনেকে। রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রশকসমোস-এর তথ্য অনুযায়ী, ২১ অগস্ট তারা চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে একটি গহ্বরে অবতরণ করবে। ভারতীয় চন্দ্রযানের ঘোষিত অবতরণের দিন ২৩ অগস্ট। সে ক্ষেত্রে রাশিয়াই প্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নেমে পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, মহাকাশ অভিযান আন্তর্জাতিক রাজনীতির শরিকও। সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়ন-আমেরিকা ঠান্ডা যুদ্ধের সময় থেকেই তার প্রমাণ মিলেছে। বর্তমানে সেই ঠান্ডা যুদ্ধ না থাকলেও টক্করের চোরাস্রোত অব্যাহত আছে, সে ভারত-রাশিয়া যতই মিত্রদেশ হোক না কেন।
সেই চোরাস্রোতের টানেই বিক্রম নির্ধারিত সময়ের আগেই চাঁদে পৌঁছে যায় কি না, তা এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy