আর ১০টা বছর... তার পর? গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু’ বলে আর কারও কথাই মেনে নিতে হবে না। বলতে হবে না অমুক গবেষণাপত্র দাবি করেছে। অথবা ‘রাষ্ট্রপুঞ্জের ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)’ জানিয়েছে, উদ্বেগজনক হারে বাতাসে বিষের বোঝা বেড়ে চলেছে। প্রতি মুহূর্তে। এখনই যার রাশ টেনে ধরতে না পারলে সমূহ বিপদ সভ্যতার। এ বার আপনি নিজেই দেখে নিতে পারবেন প্রতি সেকেন্ডে কী হারে আমরা বিষিয়ে তুলছি শ্বাসের বাতাস। আইপিসিসি-র একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া রিপোর্টে প্রকাশিত যাবতীয় তথ্যের ভিত্তিতে বানানো হয়েছে জলবায়ু ঘড়ি। যার তত্ত্বাবধানে ছিল ‘ইউনেস্কো’-র পৃষ্ঠপোষকতায় চলা আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল কার্বন প্রোজেক্ট’। যার অন্যতম তদারক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড মেটিরিওলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও)’।
দেখে নিন সেই ঘড়ি কী কী বলছে
জেনে নিতে পারবেন প্রাক্-শিল্পযুগের চেয়ে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা কম করে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে আর ঠিক কত বছর, কত মাস কত ঘণ্টা, কত মিনিট, কত সেকেন্ডের মধ্যে।
তাপমাত্রাবৃদ্ধিকে যে সীমার মধ্যে বেঁধে রাখতে না পারলে আর ৬০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে পৃথিবী রসাতলে যাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনে থাকা আইপিসিসি, জেনে নিতে পারবেন, পৃথিবীর সেই তাপমাত্রায় পৌঁছে যেতে আর খুব বেশি দেরি নেই। মাত্রই দশটা বছরের সামান্য বেশি কিছু সময়। ঠিকঠাক হিসাবে, ১০ বছর ৫ মাস। এই মুহূর্ত থেকে হিসাব কষলে ২০৩২ সালের মার্চের মধ্যেই।
এ-ও জেনে নিতে পারবেন এই সময়ে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ঠিক কতটা বেড়ে রয়েছে প্রাক্-শিল্পযুগের (১৮৫০ থেকে ১৯০০ সাল) চেয়ে। এই জলবায়ু ঘড়িই (এই লিঙ্কে ক্লিক করুন) প্রতি মুহূর্তে জানিয়ে যাবে বাতাসে কী হারে আমরা বাড়িয়ে চলেছি বিষের বোঝা।
তিন দশক নয়, আর মাত্র দশটা বছর!
উষ্ণায়নের দরুন কী ভাবে জলবায়ু দ্রুত বদলে যাচ্ছে, বদলে যাবে, ৩০ বছরের মধ্যে আর তার কী কী ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে সভ্যতার উপর, কী কী ভাবে অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে উঠতে পারে আমাদের এবং সেই দুঃস্বপ্নের ভবিষ্যতকে রুখতে আমাদের কী কী করণীয়, তা সবিস্তারে জানিয়ে আইপিসিসি-র একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া রিপোর্ট (ষষ্ঠ অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট) প্রকাশিত হয় গত অগস্টে। যার পরবর্তী পর্যায়টি প্রকাশিত হবে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে।
সেই রিপোর্টে জানানো সাম্প্রতিক যাবতীয় তথ্যের ভিত্তিতে বানানো হয়েছে এই জলবায়ু ঘড়িটি। গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্টের এগ্জিকিউটিভ বোর্ডের সদস্য জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অরুণ চট্টোপাধ্যায় ‘আনন্দবাজার অনলাইন’-এর হাতে তুলে দিয়েছেন সেই জলবায়ু ঘড়ি, যা দেখলে বাতাসে বিষের বোঝা প্রতি সেকেন্ডে বাড়ার হাতেগরম তথ্য পাওয়া যাবে। জানা যাবে, প্রাক্-শিল্পযুগের চেয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রাবৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস চড়ে যাবে আর ঠিক কত দিনের মধ্যে।
অরুণের কথায়, ‘‘মানুষের দোষে বাতাসে বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের বোঝা উত্তরোত্তর বাড়ছে, জানি। শিল্প, কল-কারখানার উগরে দেওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইড ফি-বছর বাতাসে বিষের বোঝা বাড়িয়ে চলেছে তা-ও অজ্ঞাত নয়। কিন্তু এ কথা এত দিন সকলের জানা ছিল না, প্রতি বছর প্রতি মাসে প্রতি দিন প্রতি ঘণ্টায় প্রতি মিনিটে প্রতি সেকেন্ডে কী পরিমাণ বিষের বোঝায় অবসন্ন হয়ে পড়ছে আমাদের শ্বাসের বাতাস। যা পৃথিবীর গায়ের জ্বর বাড়িয়ে দিচ্ছে ক্রমশই। পৃথিবীকে উষ্ণ থেকে উষ্ণতর করে তুলছে। যার ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে দ্রুত। বিশাল বিশাল হিমবাহগুলি গলে যাচ্ছে। এই জলবায়ু ঘড়ি এ বার সেই সব তথ্যই সাধারণ মানুষকে জানিয়ে যাবে।’’
নভেম্বর পর্যন্ত তাপমাত্রা বেড়েছে ১.২৪ ডিগ্রি!
অরুণ এ-ও জানিয়েছেন, এই জলবায়ু ঘড়ির উদ্দেশ্য শুধুই সভ্যতার সামনে বিপদ-বার্তা পৌঁছে দেওয়া নয়। সেই বিপদ এড়ানোর জন্য যা যা করণীয় সেগুলি করে ফেলার জন্য আমাদের হাতে আর ঠিক কতটা সময় রয়েছে, সে সম্পর্কে রাষ্ট্রপ্রধানদেরও অবহিত করা। তাঁদের হুঁশিয়ার করা।
অরুণ বলেছেন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর বাতাসে বিষের বোঝা বাড়ছিল উত্তরোত্তর। তবে কোভিড সংক্রমণ রুখতে দীর্ঘ দিন ধরে দেশে দেশে লকডাউন চলায়, শিল্প, কল-কারখানা দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় ২০১৯-এর শেষ থেকে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সেই বিষের বোঝা কিছুটা হাল্কা হয়েছিল। কিন্তু তার পর সভ্যতা ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই সেই বোঝা আবার বাড়তে শুরু করে দিয়েছে। তার ফলে এই মাসে (নভেম্বর, ২০২১) পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রাক্-শিল্পযুগের চেয়ে বেড়ে ১.২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গিয়েছে। এটা বোঝার জন্য ১৮৫০ সাল থেকে পৃথিবীর তাপমাত্রা মাপার যে সূচক রয়েছে সেই গ্লোবাল ওয়ার্মিং ইনডেক্স-এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
এ বছর ফের উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বাতাসের বিষ
দেখা গিয়েছে শিল্প, কল-কারখানা ফের খুলে যাওয়ার জন্য ২০২০ সালের চেয়ে এ বছর বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড-সহ বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনের মাত্রা ৪.৯ শতাংশ বাড়তে চলেছে। যা ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৫.৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের তথ্য জানিয়েছে, এখনই যদি সেই নির্গমন নিয়ন্ত্রণে আনার কোনও ব্যবস্থা দেশগুলি না নেয়, তা হলে ফি-বছর পৃথিবীর বাতাসে অন্তত ২০ কোটি টন করে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের বোঝা বাড়াবে শিল্প, কল-কারখানাগুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy