রাশিয়া, বেলারুশের বিজ্ঞানীদের বয়কট করল সার্ন। ছবি- রয়টার্স।
রাখবে, না কি ভাঙবে সম্পর্ক? এই নিয়ে এখনও দোটানায় আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’। রুশ গবেষণা সংস্থা ‘রসকসমস’-এর প্রধানের সম্পর্কচ্ছেদের একতরফা ঘোষণার পরেও।
বিজ্ঞানে বিশ্বের অন্য শীর্ষ সংস্থা ‘সার্ন’ কিন্তু সেই দোটানায় থাকল না। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরপরই তার তীব্র নিন্দা করেছিল সার্ন। সার্ন-এর কাউন্সিলের বৈঠকে রুশ ফেডারেশন (রাশিয়া) ও ফেডারেশন অব বেলারুশ (বেলারুশ)-এর বিরুদ্ধে রীতিমতো কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত গৃহীত হল সর্বসম্মতিতেই।
সার্ন-এর তরফে শুক্রবার জানানো হয়েছে, ওই সব পদক্ষেপের মাধ্যমে রাশিয়া ও বেলারুশের বিজ্ঞানীদের গবেষণা বা কোনও প্রকল্পকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্বীকৃতি দেওয়া বন্ধ রাখবে বিশ্বে কণাপদার্থবিজ্ঞান গবেষণার শীর্ষ সংস্থা সার্ন। তাঁদের সঙ্গে কোনও রকম সহযোগিতাই করা হবে না। যার অর্থ, বয়কট করা হবে রাশিয়া ও বেলারুশের বিজ্ঞানীদের, তাঁদের যাবতীয় গবেষণাকে।
জেনিভার অদূরে ফ্রান্স ও সুইৎজারল্যান্ডের সীমান্তে মাটির ১৬৫ থেকে ৫৭৫ ফুট নীচে ভূগর্ভস্থ সদর দফতর সার্ন-এর। সেখানেই ২৭ কিলোমিটার পরিধি নিয়ে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম বৃত্তাকার কণা ত্বরায়ক যন্ত্র ‘লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার' (এলএইচসি)। এই যন্ত্রেই প্রথম ঈশ্বরকণা (গড পার্টিক্ল) বা ‘বোসন’ (যার নামকরণের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নাম)-এর আবিষ্কার হয়েছিল ১০ বছর আগে, ২০১২ সালে। তার আগে-পরেও বহু অবিশ্বাস্য আবিষ্কারের সাক্ষী সার্ন। যা আধুনিক বিজ্ঞানের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
ইউক্রেনের সাম্প্রতিক ঘটনাকে ‘রাশিয়ার হানাদারি’ বলে নিন্দা করেছে সার্ন। প্রতিবাদে ২৩ সদস্য দেশের আন্তর্জাতিক সংস্থা সার্ন-এর কাউন্সিলের বৈঠকে রাশিয়া ও বেলারুশের বিরুদ্ধে তিনটি কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়েছে।
সার্ন জানিয়েছে, গত ৮ মার্চ সংস্থার শীর্ষ কাউন্সিলের ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি সেশন’-এ ওই সব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
বলা হয়েছে—
প্রথমত, রাশিয়া ও বেলারুশের মাটিতে যে সব শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ কমিটিতে সার্ন-এর বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও কর্মীরা রয়েছেন, তাঁদের যাবতীয় কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সুইৎজারল্যান্ড-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাশিয়া ও বেলারুশের শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির শাখা বা দফতরগুলিতে অবস্থানরত সার্ন-এর প্রতিনিধি, বিজ্ঞানীরাও বন্ধ করে দেবেন তাঁদের কাজকর্ম।
দ্বিতীয়ত, রাশিয়া ও বেলারুশের শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সার্ন-এর যে সব যৌথ কর্মসূচি বা প্রকল্প রয়েছে, সেগুলিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখা ও বাতিল করা হবে। ওই সব প্রকল্পে সার্ন-এর সব রকমের সহযোগিতা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তৃতীয়ত, রাশিয়া ও বেলারুশের শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির বিজ্ঞানী, গবেষকদের যে নানা ধরনের বৃত্তি ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হত তা আর দেওয়া হবে না। তাঁদের গবেষণাপত্রগুলিকে যে ভাবে সার্ন বিশ্বের দরবারে তুলে ধরত তা আর করবে না।
এ-ও জানানো হয়েছে, জেনিভায় সংস্থার সদর দফতরে সার্ন-এর সঙ্গে রাশিয়া ও বেলারুশের বিজ্ঞানীদের যৌথ গবেষণার জন্য যে প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেই ‘জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ' (জেআইএনআর)-এর সার্ন-এর সদস্য অন্য দেশগুলির বিজ্ঞানীরা তাঁদের কাজকর্ম, গবেষণা বন্ধ করে দেবেন।
সার্ন জানিয়েছে, এই সবক’টি পদক্ষেপই সিদ্ধান্ত ঘোষণার মুহূর্ত থেকেই কার্যকর হবে। আগামী জুনে ইউক্রেন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রাশিয়া ও বেলারুশের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ করা হতে পারে বলেও সার্ন-এর তরফে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
রুশ আগ্রাসনে যে ‘অবর্ণনীয় অত্যাচার আর মর্মান্তিক হত্যালীলা চলছে’, তার প্রতিবাদে সার্ন দ্ব্যর্থহীন ভাবে ‘ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর’-ও ঘোষণা করেছে শুক্রবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy