নাসার রোভার মঙ্গলে নামানোর মূল কাণ্ডারী স্বাতী মোহন। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
১৬ বছর বয়সটাই বদলে দিয়েছিল তাঁর জীবনের গতিপথ। তার আগে স্বপ্ন দেখতেন শিশু চিকিৎসক হওয়ার। বাবা চিকিৎসক বলে। কিন্তু ১৬ বছর বয়সে হলিউডের ফিল্ম ‘স্টার ট্রেক’-ই তাঁর সব চিন্তাভাবনা বদলে দিয়েছিল। মহাকাশই হয়ে উঠেছিল এক ও একমাত্র ভাবনা।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে এ কথা জানিয়েছেন সদ্য মঙ্গলে নামা নাসার রোভার ‘পারসিভের্যান্স’-এর ‘গাইডেন্স, নেভিগেশন অ্যান্ড কন্ট্রোলস অপারেশন্স (জিএনঅ্যান্ডসি)’-এর প্রধান স্বাতী মোহন। বেঙ্গালুরুতে জন্মের এক বছর পরেই যিনি মা, বাবার সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন আমেরিকায়। কিন্তু ৩-৪ বছর অন্তরই আসেন বেঙ্গালুরুর বাড়িতে।
স্বাতীর কথায়, ‘‘গাইডেন্স, নেভিগেশন আর কন্ট্রোলই যে কোনও মহাকাশযানের চোখ ও কান।’’ গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে পাসাডেনা থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে স্বাতী ঠিক এই কথাটাই বলেছিলেন ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’-কে। মঙ্গলে সফল অবতরণের জন্য স্বাতী-সহ নাসার গোটা টিমকে অভিনন্দন জানাতে বৃহস্পতিবার ভিডিয়ো কনফারেন্সে হাজির হয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
গত ৩০ জুলাই লাল গ্রহে পাড়ি জমানোর পর থেকেই মহাকাশে কোন পথ ধরে এগিয়ে যাবে নাসার মহাকাশযান, কোন পথ তুলনায় বেশি নিরাপদ, কম জটিল, লাগবে কিছুটা কম সময় সেই পথ বেছে বেছে রোভারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল দায়িত্ব ছিল স্বাতীরই কাঁধে। সাড়ে ৬ মাসে সেই গাইডেন্স আর নেভিগেশনের কাজে সফল বলেই নিরাপদে লাল গ্রহের দূরের কক্ষপথে ঢুকে যেতে পেরেছিল নাসার মহাকাশযান। তার পর আরও কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছিল স্বাতীকে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত দু’টোয় (ভারতীয় সময়)। লাল গ্রহের বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ার ৭ মিনিটের মধ্যে নিরাপদে মঙ্গলের বুকে পা ছুঁইয়েছিল নাসার রোভার।
ওই ৭ মিনিটই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। যে কোনও মুহূর্তে ঘটে যেতে পারত বিপদ। যেহেতু মঙ্গল থেকে পৃথিবীতে বার্তা পৌঁছতে লাগে ১১ মিনিট সময়, তাই কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরিতে বসে আর কিছুই করার থাকত না স্বাতীর। তাই দারুণ টেনশনে ছিলেন স্বাতী।
‘‘মঙ্গলের খাড়াই পাহাড়ে ধাক্কা লেগে ভেঙে পড়বে না তো নাসার রোভার? আটকে যাবে না তো খুব উঁচু উঁচু পাহাড়গুলির খাঁজে? যার জন্য ২৭০ কোটি ডলার খরচ হয়েছে, সেই স্বপ্নটা ভেঙে যাবে না তো চুরচুর করে?’’, বলেছিলেন স্বাতী ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’-কে দেওয়া টেলিফোন সাক্ষাৎকারে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনকেও বৃহস্পতিবার স্বাতী বলেছেন, ‘‘খুব নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম। অবতরণের দিনকয়েক আগে থেকে। পারসিভের্যান্স প্রকল্পের গোড়া থেকে জড়িত রয়েছি। এই প্রকল্পের সব কর্মীই এখন যেন একটি পরিবার। তাই সফল হতে পারব কি না, তা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলাম।’’
সফল অবতরণের পর জেপিএল-এ প্রথম স্বাতীর কণ্ঠস্বরই সকলকে জানিয়েছিল ‘ল্যান্ডেড সেফলি’। তার পরেই শুরু হয়েছিল সকলের উল্লাস।
আমেরিকার প্রেসিডেন্টকেও স্বাতী জানিয়েছেন এখনও ভারতের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তিন-চার বছর অন্তর যান বেঙ্গালুরুতে। মা, বাবা প্রতি বছরই যান কয়েক মাসের জন্য। জানিয়েছেন তাঁর শ্বশুরবাড়িও বেঙ্গালুরুতেই।
বেঙ্গালুরুতে জন্মের এক বছর পরেই মা, বাবার সঙ্গে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিলেন স্বাতী। আজ থেকে ৩৫ বছর আগে। ১৯৮৬-তে। তার পর বেড়ে ওঠা, পড়াশোনার পুরোটাই আমেরিকায়। বড় হয়েছেন উত্তর ভার্জিনিয়া ও ওয়াশিংটন ডিসি-তে। মেকানিক্যাল ও অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব সায়েন্স (বিএস) করার পর স্বাতী অ্যারোনটিক্স ও অ্যাস্ট্রোনটিক্সে মাস্টার্স অব সায়েন্স (এমএস) করেন ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে। সেখান থেকেই পিএইচডি।
এর আগে শনিতে পাঠানো নাসার মহাকাশযান ‘ক্যাসিনি’ এবং চাঁদে পাঠানো যান ‘গ্রেল’-এর অভিযানেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন স্বাতী।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘‘অতিমারির পরিস্থিতিতে যখন আমজনতা ক্রমশ আমেরিকায় আস্থা হারিয়ে ফেলছিলেন বিজ্ঞানীদের উপর, তখন মঙ্গলে নাসার রোভারের এই সফল অবতরণ আবার আমেরিকার বিজ্ঞান সাধনাকে মর্যাদা ফিরিয়ে দিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy