—প্রতীকী চিত্র।
দু’টি বুদবুদ যেন। অবিকল এক—তবে একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে কী ‘ভ্যানিশ’। এমন অস্থায়ী যা, সেগুলির জায়গা বদল কতটা অসম্ভব হতে পারে! সেই অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টায় ‘ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ’ বা ‘সার্ন’-এর বিজ্ঞানীরা। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরেই ‘অ্যান্টিম্যাটার’ পরিবহণের দুরূহ কাজ হতে চলেছে। উদ্দেশ্য, অ্যান্টিম্যাটার সংক্রান্ত গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
কী এই অ্যান্টিম্যাটার?
ভাবুন কোনও হিন্দি সিনেমার প্লট—যমজ দুই ভাই, অবিকল এক চেহারা। তবে এক জন ‘হিরো’ আর অন্য জন ‘ভিলেন’। ‘ম্যাটার’ বা কণা ও অ্যান্টিম্যাটারও তাই। যমজ তারা, ফারাক শুধু ধর্মে। পজ়িটিভ চার্জের প্রোটনের অ্যান্টিম্যাটার, ‘অ্যান্টিপ্রোটন’ নেগেটিভ তড়িৎধর্মী। আবার, নেগেটিভ চার্জের ইলেকট্রনের অ্যান্টিম্যাটার, ‘পজ়িট্রনের’ চার্জ পজিটিভ। ব্রহ্মাণ্ডে ম্যাটারের ছড়াছড়িতে অ্যান্টিম্যাটার প্রায় দুঃস্থিত। কণার ছোঁয়া লেগেছে কী লাগেনি, বিস্ফোরণে দুই-ই বিলীন। পড়ে থাকে শক্তি বা এনার্জি। ব্রহ্মাণ্ডের জন্মও যেমন এক ‘বিগ ব্যাং’ বা মহাবিস্ফোরণের ফল। তখন চারদিকে ম্যাটার-অ্যান্টিম্যাটারের ছড়াছড়ি। কারও ছোঁয়াছুঁয়িতে বাধা নেই। তার পরেও কী ভাবে সব অ্যান্টিম্যাটার উবে গিয়ে পড়ে রইল ম্যাটার, তা এখনও ধাঁধাই।
‘নেচার’ পত্রিকার প্রতিবেদন জানাচ্ছে, অ্যান্টিম্যাটারকে পথে নামানোর পরিকল্পনা দু’টি প্রকল্পের উপর দাঁড়িয়ে—‘পিইউএমএ’ ও ‘বেস-স্টেপ’। বিশ্বে অ্যান্টিম্যাটার সংরক্ষণের একমাত্র জায়গা, সার্নের জ়েনিভার গবেষণাগার থেকে তা নিয়ে যাওয়া হবে কয়েক ঘণ্টার দূরত্বের সার্নেরই অন্য কেন্দ্রগুলিতে। ‘পিইউএমএ’-তে অন্য দুঃস্থিত কণা নিয়ে কাজ হয় এমন কেন্দ্রে প্রায় ১০০ কোটি অ্যান্টিপ্রোটন নিয়ে গিয়ে তার নিউক্লিয় গঠনের কাটাছেঁড়া চলবে। আর, ‘বেস-স্টেপ’ প্রকল্পে চলবে অ্যান্টিপ্রোটনের সূক্ষ্ম গঠনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। অল্প দূরত্বের যাত্রা সফলহলে অ্যান্টিপ্রোটন পাড়ি দিতে পারে সুদূর জার্মানিতেও।
এই উদ্যোগের সাফল্য অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে, ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন নিউ ইয়র্কের ব্রুকহাভেন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির পদার্থবিদ জেমস ডানলপ। একই মত ‘পিইউএমএ’ প্রকল্পের মাথা, জার্মানির পদার্থবিদ আলেকজান্দ্রে ওবার্টেলির। তিনি জানান, গাড়িতে চাপানোর আগে ‘ট্র্যাপ’ করা অ্যান্টিম্যাটারকে বিশেষ চুম্বকের পাত্রে ঠান্ডা পরিবেশে থিতিয়ে রাখা হবে। অতিপরিবাহী চুম্বক অ্যান্টিম্যাটারকে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখবে। সঙ্গে থাকা জেনারেটর যেমন চুম্বককে শক্তি জোগাবে, বজায় রাখবে মাইনাস ২৬৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অতিশীতল পরিবেশও। বিকল্প ‘কুল্যান্ট’ হিসাবে থাকবে হিলিয়াম।
তবে মূল চ্যালেঞ্জটা হল অ্যান্টিম্যাটারের চারপাশে উচ্চ বায়ুচাপহীন অবস্থা বজায় রাখা। না হলে কণার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটলেই বিপদ। সেই ঝুঁকি কাটাতে অ্যান্টিম্যাটার তৈরির সময় থেকে গাড়িতে পরিবহণের সময়ে ঝাঁকুনি-নিরোধক ব্যবস্থা তৈরি, সবই মাথায় রাখতে হচ্ছে গবেষক-দলকে। “কাজটা অসম্ভব নয়, তবে সহজও নয়। সফল হলে বিগ ব্যাং আর রহস্য থাকবে না”, বলছেন ডানলপ।
২০০০ সালে ড্যান ব্রাউনের থ্রিলার ‘এঞ্জেলস অ্যান্ড ডিমনস’-এ ছিল, সন্ত্রাসীরা বিস্ফোরক তৈরির জন্য ‘সার্ন’ থেকেই অ্যান্টিম্যাটার চুরি করে পালায়। তেমন কিছু ঘটলে? ওবার্টেলির আশ্বাস, চুরির বিষয় বলা মুশকিল। তবে গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে সব অ্যান্টিম্যাটারেরও যদি বিস্ফোরণ ঘটে, তারপ্রভাব হবে টেবিল থেকে একটা পেনসিল পড়ার মতো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy