নতুন ডেরায় খোসমেজাজে (বাঁ দিকে) ডন ও বন্ধ। শুক্রবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
নতুন ঘর পেল বন্ড এবং ডন। মার্বেল পাথর বসানো মেঝে, দেওয়ালে টাইলস। প্রতিটি ঘরে দু’টি করে আলো, নতুন ফ্যানও বসেছে।
শুক্রবার নতুন সাজে ঘরটির উদ্বোধনও হয়েছে। নতুন সাজ যে পছন্দ হয়েছে তা ঘরে ঢুকে লেজ নাড়িয়ে বুঝিয়েও দিয়েছে আরপিএফের দুই প্রশিক্ষিত কুকুর বন্ড এবং ডন। তাদের উপরেই নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশনে বিস্ফোরক খোঁজার দায়িত্ব। প্রতিদিন দিল্লি এবং অসমগামী রাজধানী এক্সপ্রেসগুলি স্টেশনে ঢোকার আগে গোটা প্ল্যাটফর্ম শুঁকতে হয় ওদের। ট্রেনের কামরাতেও তল্লাশির দায়িত্ব ওদের। দার্জিলিং মেল এবং পদাতিক এক্সপ্রেসও এনজেপি থেকে ছাড়ার আগে পুরো প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেনের প্রতিটি কামরায় কয়েকবার তল্লাশি চালাতে হয়। আরপিএফের একাংশ অফিসারদের দাবি, দিনভর এত কাজের ঝক্কি পোহাতে হলেও, দু’ই কুকুরের থাকার ঘরের পরিস্থিতি বর্তমানে মোটেই ভাল ছিল না। ফেটে যাওয়া মেঝে, নোনা ধরা দেওয়ালের ঘরে থাকতে হয় ওদের। সে কারণেই ঘর সংস্কারের পরিকল্পনা করে আরপিএফ। এ দিন সংস্কার হওয়া ডগ স্কোয়াডের ঘরের উদ্বোধন করেছেন উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের আরপিএফের বরীষ্ঠ নিরাপত্তা কমিশনার মহম্মদ শাকিব। এনজেপিতে প্রশিক্ষিত কুকুরের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। নিরাপত্তা কমিশনার জানিয়েছেন, চোরাই জিনিস উদ্ধারে প্রশিক্ষিত ‘ট্রেকার’ কুকুরও এনজেপিতে আনা হবে।
শাকিব বলেন, ‘‘নিরাপত্তার দিক থেকে প্রশিক্ষিত কুকুরের ভূমিকা কম ভাবলে হবে না। বিস্ফোরক কোথায় রাখা আছে গন্ধ শুঁকেই বলে দিতে পারে। অনেক যন্ত্র যা পারে না, তা প্রশিক্ষিত কুকুররা করে দেখাতে পারে। তাই পরিকাঠামো বাড়াতে নজর দেওয়া হয়েছে।’’
এ দিন নিরাপত্তা কমিশনার সংস্কার করা ডগ স্কোয়াডের ভবন ফিতে কেটে উদ্বোধন করেন। বন্ড এবং ডন দুই কুকুর রীতি মেনে নিরাপত্তা কমিশনারকে অভিবাদন জানান। ‘স্যালুট’ করার হুকুম শুনেই মুখ মাটিতে নামিয়ে অভিবাদন জানায় তারা। এ দিন উদ্বোধনের পরে স্কোয়াডের ভবন পরিদর্শন করেছেন নিরাপত্তা কমিশনার। ডন এবং বন্ডের জন্য পাশাপাশি দু’টি ঘর। ১২ ফুট বাই ১০ ফুটের এক একটি ঘর। ঘরের মেঝেতে মার্বেল পাথর বসানো হয়েছে। দেওয়ালের নীচ থেকে অর্ধেকাংশ জুড়ে টাইলসও বসানো হয়েছে। প্রতিটি ঘরে দু’টি করে টিউব লাইট বসানো রয়েছে, সিলিং ফ্যানও রয়েছে। কমিশনারের কথায়, ‘‘ডন এবং বন্ডের মূল প্রশিক্ষণ হয়েছে দিল্লিতে। প্রতি ৬ মাস অন্তর প্রশিক্ষণও হয়। ওদের স্বাস্থ্য, স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতিও নজর রাখা হয়।’’
আরপিএফের প্রশিক্ষিত কুকুরদের ‘নির্দিষ্ট ‘পদ মর্যাদা’ না পেলেও, ট্রেনে কোথাও নিয়ে যেতে হলে তাদের জন্য বাতানুকুল প্রথম শ্রেণির কামরা বরাদ্দ থাকে। যা একজন ইন্সপেক্টরও পেয়ে থাকেন। বেশ কিছুদিন আগেও সকালে দুধ, দুপুর-রাতের খাবারের মাংস দেওয়া হতো। তবে আরপিএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি পশু চিকিৎসকদের পরামর্শে বন্ড এবং ডনকে প্যাকেটজাত কুকুরের খাদ্য খাওয়ানো হচ্ছে। প্রতি মাস কুকুর পিছু ৮ হাজার ২৯০ টাকা বরাদ্দ করা হয়। সেই টাকা দিয়েই খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এ দিন দু’ই কুকুরের মহড়াও নিয়েছেন নিরাপত্তা কমিশনার। টবের মাটির নীচে, পেছনে, দরজার খাঁজে গ্রেনেড, আরডিএক্সে, টিএনটি সব বিভিন্ন বিস্ফোরকের নমুণা লুকিয়ে রাখার নির্দেশ দেন তিনি। লুকোনো হলে বন্ড এবং ডনকে একেক করে ডাকা হয়। বিভিন্ন এলাকার গন্ধ শুকে বিস্ফোরক লুকোনোর জায়গায় গিয়ে বসে পড়েছে তারা।
আরপিএফ অফিসাররা জানিয়েছেন, কোথাও বিস্ফোরক খুঁজে পেলে সেখানেই বসে পড়ে প্রশিক্ষিত কুকুর। দীর্ঘ সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মরত দুই প্রশিক্ষিত কুকুর এ দিনের মহড়ার পরে নিরাপত্তা কমিশনারের বাহবাও কুড়িয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy