Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Science

মহাকাশে এই প্রথম খোঁজ মিলল ‘প্রবলেম চাইল্ড’-এর

এক ভীষণ, ভয়ঙ্কর ‘প্রবলেম চাইল্ডে’র হদিশ মিলল মহাকাশে! মহাকাশে এমন একটি তারা বা নক্ষত্রের হদিশ পাওয়া গেল এই প্রথম, যে তারই ‘সন্তান’ একটি গ্রহের ভয়ে সদা সর্বদা থরহরিকম্প হয়ে থাকে!

সুজয় চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১০:১৩
Share: Save:

এক ভীষণ, ভয়ঙ্কর ‘প্রবলেম চাইল্ডে’র হদিশ মিলল মহাকাশে!

মহাকাশে এমন একটি তারা বা নক্ষত্রের হদিশ পাওয়া গেল এই প্রথম, যে তারই ‘সন্তান’ একটি গ্রহের ভয়ে সদা সর্বদা থরহরিকম্প হয়ে থাকে! আমাদের সূর্যের মতোই সেই থরহরিকম্প তারাটিও আসলে একটি ‘সূর্য’ই, তার সৌরমণ্ডলে। কিন্তু তার চার পাশে (কক্ষপথে) পাক মারছে যে ভিনগ্রহটি, তারা বনবন করে ঘুরে চলার তালে-ছন্দে ভয়ে থরথর করে কাঁপছে তার ‘জন্মদাতা’ তারা ‘এইচএটি বা হ্যাট-পি-২’। আর তার ভয়ঙ্কর বাউন্ডুলে ‘প্রবলেম চাইল্ড’ ভিনগ্রহটির নাম- ‘এইচএটি বা হ্যাট-পি-২বি’।


এই সেই ‘প্রবলেম চাইল্ড’ (বাঁ দিকে, বেগুনি রং)। শিল্পীর কল্পনায় (নীচে)



বৃহস্পতির চেয়ে চেহারায় কতটা বড় এই ‘প্রবলেম চাইল্ড’ (ডান দিকে)

মহাকাশের এই ‘প্রবলেম চাইল্ড’ বিশ্বের তাবড় তাবড় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ব্রহ্মাণ্ডে যতগুলি সৌরমণ্ডলের খোঁজ পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা, তাদের সবক’টিতেই দেখা গিয়েছে, আমাদের সূর্যের মতো তাদের তারা বা নক্ষত্রগুলিই দারুণ দাপটে ‘সংসার’ করছে বাধ্য, ভদ্র-সভ্য ‘সন্তানসন্ততি’ গ্রহ, উপগ্রহদের নিয়ে। সব সৌর-সংসারেই তাই আপাত ভাবে রয়েছে শান্তি, সুস্থিতি। কিন্তু, এই প্রথম এমন কোনও সৌরমণ্ডলের হদিশ মিলল, যেখানে কোনও তারা বা নক্ষত্রকে সামলাতে হচ্ছে এক ‘প্রবলেম চাইল্ড’কে! এই সাড়াজাগানো আবিষ্কারটি করেছেন ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) আর্থ, অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস বিভাগের এক গবেষকদল। যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক্টরাল ছাত্র জুলিয়েন দ্য উইট। গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘প্ল্যানেট-ইনডিউসড স্টেলার পালসেশন্স ইন হ্যাট-পি-টু’জ এক্সেন্ট্রিক সিস্টেম’। যা একেবারে হালে ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান-জার্নাল ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ।


ঘুরছে সেই ‘প্রবলেম চাইল্ডে’ (সাদা দাগ), ‘কাঁপছে’ ‘জন্মদাতা’ তারা (সাদা ছটা)। নীচে- মহাকাশে যেখানে সেই ‘অশান্তির সংসার’ (সবুজ দাগ)

কোন মুলুকে রয়েছে সেই মহাকাশের ‘প্রবলেম চাইল্ড’?


(বাঁ দিক থেকে) জ্যোতির্বিজ্ঞানী
জুলিয়েন দ্য উইট, গ্যাব্রিয়েলা মার্কোস ও জানুস পেটকাওস্কি

ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) আর্থ, অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস বিভাগের গবেষক জুলিয়েন দ্য উইট টেলিফোনে আনন্দবাজারের এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘‘পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০ আলোকবর্ষ দূরত্বে রয়েছে ওই সৌরমণ্ডলটি। তার নক্ষত্রটির নাম- ‘এইচএটি বা হ্যাট-পি-২’। সেই তারাটিকে ঘিরে পাক মারছে আমাদের বৃহস্পতির চেয়েও কম করে ৮ গুণ ভারী একটি ভিনগ্রহ (এক্সোপ্ল্যানেট)। এখনও পর্যন্ত যতগুলি প্রচণ্ড ভারী ভিনগ্রহের হদিশ মিলেছে, এই ‘প্রবলেম চাইল্ড’ তাদের অন্যতম। আমাদের বৃহস্পতির মতোই ওই গ্রহটি আপাদমস্তক গ্যাসে ভরা (গ্যাস জায়েন্ট)। তার নাম- ‘এইচএটি বা হ্যাট-পি-২বি’। আর এই গ্রহটি ভীষণ রকমের পাগলাটে। নিজের কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে তার তারাটিকে পাক মারতে গিয়ে কোনও সময় সেই ভিনগ্রহটি হুট করে চলে আসছে তার নক্ষত্র ‘এইচএটি বা হ্যাট-পি-২’-র কাছে। আবার তার পরেই সাঁ করে আপন খেয়ালে চলে যাচ্ছে তার নক্ষত্র থেকে অনেক অনেক দূরে। আমরা এটাকেই বলি, গ্রহদের ‘এক্সেন্ট্রিক অরবিট’। নাসার স্পিৎজার স্পেস ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ ঘণ্টা ধরে নজর রেখে রেখে মহাকাশে এই প্রথম কোনও ‘প্রবলেম চাইল্ডে’র হদিশ পেল। ওই নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতাও বাড়া-কমা করছে ৮৭ মিনিট অন্তর। তার গ্রহটি তাকে পাক মারে যে ছন্দে, যে গতিতে, ঠিক সেই তালে, সেই ছন্দে!’’

মহাকাশের এই ‘প্রবলেম চাইল্ড’ কতটা সমস্যা তৈরি করছে জানেন?

আনন্দবাজারের পাঠানো প্রশ্নের জবাবে ম্যাসাটুসেটস থেকে ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) আর্থ, অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর গ্যাব্রিয়েলা মার্কোস ই-মেলে লিখেছেন, ‘‘এত ভারী এই ভিনগ্রহটি, আমাদের মনে হচ্ছে, যে কোনও সময়ে সে ঠেলে সরিয়েও দিতে পারে তার ‘জন্মদাতা’ তারা বা নক্ষত্রটিকে। এর আগে আমরা কখনও দেখিনি কোনও ভিনগ্রহের ভয়ে থরথর করে কাঁপছে তার ‘জন্মদাতা’ নক্ষত্র। ‘এইচএটি বা হ্যাট-পি-২বি’ নামের ভিনগ্রহটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের এত দিনের যাবতীয় ধ্যানধারণাই বদলে দিল। এর কক্ষপথটিও অদ্ভুত ভুতুড়ে। এই হয়তো নিজের তারাটির প্রায় গায়ের ওপরে এসে প্রায় হামলে পড়েছে আর তাই তার তাপমাত্রা হু হু করে যাচ্ছে বেড়ে। আবার হুট করে চলে যাচ্ছে অনেক অনেক দূরে। ফলে বরফের মতো তার (ভিনগ্রহ) গা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন- অ্যাসপিরিনেই কাবু হতে পারে ক্যানসার! পথ দেখালেন ২ ভারতীয়

আনন্দবাজারের পাঠানো প্রশ্নের জবাবে ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) আর্থ, অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জানুস পেটকাওস্কি ই-মেলে লিখেছেন, ‘‘আমরা খুবই রহস্যের মধ্যে রয়েছি। হতে পারে ওই ভিনগ্রহটি এত ভারী যে তার অত্যন্ত জোরালো অভিকর্ষ বলই ওই রকম ভাবে থরথর করে কাঁপাচ্ছে তার তারা বা নক্ষত্রটিকে।’’

মহাকাশের এই ‘প্রবলেম চাইল্ড’ আপাতত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের রীতিমতো ভড়কে দিয়েছে!

ছবি সৌজন্যে: নাসা।

অন্য বিষয়গুলি:

HAT-P-2 Exoplanets NASA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy