আইসার কলকাতা। -নিজস্ব চিত্র।
আমার, আপনার মতো সাধারণ মানুষের জন্যও এ বার খুলে দেওয়া হল দেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের গবেষণাগার। যাতে সেখানকার সব গুপ্তরহস্য আমরা অন্তত চাক্ষুষ করতে পারি। শুরুটা হল কলেজপড়ুয়া, অন্য কলেজের অধ্যাপক, গবেষকদের নিয়ে। এর পর খুলে দেওয়া হবে স্কুলের ছাত্রছাত্রী, আমজনতার জন্যও।
দেখা গেল, গবেষণাগারে বসে কী ভাবে বিজ্ঞানীরা পড়তে পারেন সূর্যের ‘মন’। কিছুটা অন্তত বোঝা গেল, পূর্ণগ্রাস ছাড়া সূর্যের যে বায়ুমণ্ডল বা করোনাকে কোনও দিন আমাদের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়, তার অন্দরের ঘটনাবলীর পূর্বাভাস কী ভাবে কোটি কোটি মাইল দূরের এই গবেষণাগার থেকেই করতে পারেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গেল, সাগর, মহাসাগরের অন্দরের অণুজীবদের নিয়ে গবেষণা কী ভাবে এগচ্ছে, কী ভাবে হয় ভূবিজ্ঞান বা গণিতের গবেষণা অথবা রসায়নশাস্ত্রের জটিল গবেষণাগুলি। জানা গেল, ভূকম্পনের সঠিক পূর্বাভাসের জন্য গবেষণা কোন কোন পথ ধরে এগচ্ছে।
কলকাতার অনতিদূরে মোহনপুরে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার কলকাতা)’-এর প্রাঙ্গণে বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ভাবে কলেজপড়ুয়াদের জন্য খুলে দেওয়া হল দেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের গবেষণাগারগুলি। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নশাস্ত্র, জীববিজ্ঞান, গণিত ও ভূবিজ্ঞানের। ‘ওপেন ডে’। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত ৪ ঘণ্টার জন্য। যা আগামী দিনে আরও হবে, এমনকি, স্কুলপড়ুয়া বা বিজ্ঞানের নাম শুনলেই ভয়ে সিঁটিয়ে যান যাঁরা, তাঁদের জন্যও।
তার মানে, ‘হীরক রাজার দেশে’র বিজ্ঞানীর গবেষণাগারে যে বজ্র আঁটুনি ছিল, আইসার কলকাতা এ বার সেটা খুলে ফেলার পথে এগল।
গবেষণাগারের গুপ্তরহস্যের সন্ধানে...
পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণাগারগুলিতে যেমন ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞান, বিশ্বতত্ত্ব, মহাকর্ষীয় বল, কণাবিজ্ঞান, কোয়ান্টাম ফিল্ড থিয়োরি, কনডেন্সড ম্যাটার, অপটিক্স, নন-লিনিয়ার ডাইনামিক্সের মতো বিষয়, তেমনই স্পেকট্রোস্কোপি, লাইট-ট্রিগারড কেমিস্ট্রি, সুগার কেমিস্ট্রি, জৈব ও অজৈব রয়াসন, তাত্ত্বিক রসায়ন ও পলিমার কেমিস্ট্রির মতো বিষয়গুলি ছিল রসায়নশাস্ত্রের বিভিন্ন গবেষণাগারে। জীববিজ্ঞানের গবেষণাগারগুলিতে ছিল জেনেটিক্স, সেল বায়োলজি, অ্যানাটমি, জিন রেগুলেশন, বায়োকেমিস্ট্রি, অ্যানিমাল বিহেভিয়ার, বোটানি ও বায়ো-ফিজিক্সের মতো বিষয়গুলি।
আরও পড়ুন- পরিচয়ভেদে মস্তিষ্কের নির্দেশে বদলে যায় গলার স্বর, দেখালেন বেহালার ভীষ্মদেব
আরও পড়ুন- যে কোনও পাসওয়ার্ডই ভেঙে ফেলা যায়, নিরাপদ নন আপনি, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
গণিতের বিভিন্ন গবেষণাগারে ছিল গ্রাফ থিয়োরি, টোপোলজি, নাম্বার থিয়োরি, স্ট্যাটিসটিক্স ও বীজগণিতের মতো বিষয়গুলি। আক ভূবিজ্ঞানের গবেষণাগারগুলিতে ছিল সিসমোলজি, পেট্রোলজি, জিওমরফোলজি, স্ট্রাকচারাল জিওলজি, কমপিউটেশনাল জিওলজি ও এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিষয়গুলি।
ওপেন ডে। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম।
‘ওপেন ডে’-র অন্যতম আয়োজক ‘আইসার কলকাতা’র জীববিজ্ঞানের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অনিন্দিতা ভদ্র বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে আমাদের এই উদ্যোগের সময়েই বোঝা গেল, এমনকি, অধ্যাপকরাও জানেন না, ওপেন ডে বলতে ঠিক কী বোঝায়। যাঁরা জানেন, তাঁরাও রাজ্যে এমন অনুষ্ঠান আগে করেছেন বা তার খবরাখবর জানেন, মনে হল না। তবু আমাদের মাত্র সাত দিনের প্রস্তুতিতে এসেছিলেন প্রায় শ’তিনেক কলেজপড়ুয়া, গবেষক ও বিভিন্ন কলেজের অধ্যাপকরা।’’
আয়োজকদের লক্ষ্য ছিল, কলকাতা থেকে একটু দূরে থাকা কলেজগুলির ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আসা। যাঁরা নিজেদের কলেজে তেমন উন্নত মানের গবেষণাগার পান না। তবে অনিন্দিতা জানিয়েছেন, রাজ্যে এই প্রথম এমন আয়োজনের খবর পেয়ে কলকাতার নামজাদা কলেজগুলির বিজ্ঞানপড়ুয়ারাও ছুটে গিয়েছিলেন আইসার-এ।
হেসেখেলে ফিজিক্স। আইসার কলকাতার গবেষণাগারে।
আয়োজকরা জানালেন, এ বার থেকে প্রতি বছরই আয়োজন করা হবে ওপেন ডে। আর সেখানে স্কুলের আসতে বলা হবে স্কুলের ছেলেমেয়েদেরও। বিজ্ঞানের প্রতি আকর্যণ বাড়াতে ও গবেষণার দিকে অল্পবয়সীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতেই এই উদ্যোগ।
আর অনিন্দিতার বক্তব্য, ‘‘সাধারণ মানুষ যে কর দেন, সেই টাকা থেকেই সরকার অর্থবরাদ্দ করেন গবেষণার জন্য। তাই আমজনতার জানার অধিকার রয়েছে, গবেষণাগারের ভিতরে কী কী হয়, আর সেগুলি কী ভাবে হয়।’’
নীরস নয় রসায়ন। আইসার কলকাতার গবেষণাগারে।
তবে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে এক অদ্ভূত অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর, জানালেন অনিন্দিতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সে (আইএসসি)’ পড়াশোনা করেছি। সেখানে অনেক বছর ধরেই এমন অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। সেখানে স্কুলের ছেলেমেয়েরাও আসে। আসেন অনেক সাধারণ মানুষ, রোজকার জীবনে বিজ্ঞানের সঙ্গে যাঁদের কোনও যোগাযোগ নেই, তাঁরাও। কিন্তু রাজ্যে এই প্রথম হওয়ায় দেখলাম, অনেক কলেজ-শিক্ষকও এমন অনুষ্ঠানের নিয়মকানুন জানেন না। তাঁরা ভেবেছিলেন, হয়তো টাকাপয়সা জমা দিয়ে আগেভাগে নাম নথিভুক্ত করিয়ে এই অনুষ্ঠানে আসতে হবে। পরে তাঁরা সব জেনে খুব খুশি হয়েছেন। এসেছেন।’’
আরও পড়ুন- স্মার্টফোনে থুতু ফেলে জানুন ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ কতটা? চমক বেহালার স্থিতধীর
আরও পড়ুন- লাগবে না বডি স্ক্যানার, চালের দানার মতো রাডার বানালেন বঙ্গসন্তান
কলকাতার নামজাদা ও ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও এই উদ্যোগ শুরুর অপেক্ষায় থাকলাম আমরা।
নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy