Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

মঙ্গলে যেতে বদ্ধ ঘরে ‘চাঁদে পাড়ি’

আজ পর্যন্ত নিজেকে এমন শক্ত পরীক্ষায় ফেলেনি মানুষ। কিন্তু মঙ্গলে যাওয়ার সাধ মেটাতে গেলে এ ছাড়া উপায়ও নেই।

হিউস্টনে নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে ‘হিউম্যান এক্সপেরিমেন্টেশন রিসার্চ অ্যানালগ’-এর নমুনা ক্যাপসুল।

হিউস্টনে নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে ‘হিউম্যান এক্সপেরিমেন্টেশন রিসার্চ অ্যানালগ’-এর নমুনা ক্যাপসুল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৯ ০২:০১
Share: Save:

এক কামরার ছোট্ট একটি ‘ফ্ল্যাট’ যেন। টেনেটুনে পাঁচ-ছশো বর্গফুট। তার মধ্যেই ঠেসেঠুসে রান্না-খাওয়া-শোওয়া ও শৌচের ব্যবস্থা। দরজা আছে। তবে এক বার ঢুকলে নির্দিষ্ট সময়ের আগে বেরোনোর পথ বন্ধ। আর এর মধ্যেই চার থেকে ছ’জন মানুষ। তা-ও দু’-এক রাত নয়। প্রথম পর্যায়ে থাকতে হয়েছে পাক্কা ৪৫ দিন! পরের লক্ষ্য ১২০ দিন। এটা স্রেফ প্রস্তুতি মাত্র। এমন বাসায় কেমন থাকে মানুষ, সেটা দেখে-বুঝে নেওয়া। আসল পরীক্ষা চলবে প্রায় তিন বছর ধরে।

আজ পর্যন্ত নিজেকে এমন শক্ত পরীক্ষায় ফেলেনি মানুষ। কিন্তু মঙ্গলে যাওয়ার সাধ মেটাতে গেলে এ ছাড়া উপায়ও নেই। আর তার জন্যই লাগাতার চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। হাতেকলমে দেখে নেওয়া হচ্ছে মঙ্গল ঘুরে আসার যানে, ছোট্ট বাসায় কেমন থাকবে মহাকাশচারীর শরীর-মনের স্বাস্থ্য। কেমন থাকবে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক ও বোঝাপড়া? সব কাজ সময়ে ও ঠিকঠাক করতে পারবে তো? কল্পবিজ্ঞানের পাতায় বা সেলুলয়েডে বহু বারই উঠে এসেছে এমন অভিজ্ঞতার কথা। মানুষ তারিয়ে তারিয়ে স্বাদ নিয়েছেন। কিন্তু কল্পনায় ভর করে মঙ্গলে পাড়ি দেওয়া যায় না।

বাকি মানুষজনের কাছ থেকে দূরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার ফল জানতে নাসা বছর দুই আগে চার জনকে ‘পাঠিয়েছিল’ নমুনা মঙ্গলযানের ক্যাপসুলে। ৪৫ দিনের জন্য। ভিতর থেকে দেখলে খাঁটি মহাকাশ যাত্রা। যান্ত্রিক কাঁপুনি, শব্দ— সব একেবারে মহাকাশের মতো। ঘুমের সময় কমিয়ে দিয়ে করতে দেওয়া হয়েছিল বেশ কিছু কাজ। ঘুমের ঘাটতির কারণে বেরিয়ে এসে ওই চার জন চোখই খুলতে পারছিলেন না প্রায়।

হিউস্টনে জনসন স্পেস সেন্টারে ‘হেরা (হিউম্যান এক্সপেরিমেন্টেশন রিসার্চ অ্যানালগ)’-তে এই পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে নাসা। অতীতে এমন পরীক্ষা বারবার সমালোচনার মুখে পড়েছে। বলা হয়েছে, আদৌ যথেষ্ট তথ্য মিলছে না ওই সব পরীক্ষায়। এ বার আটঘাট বেধে এগোচ্ছে নাসা। নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নসির কন্ট্রাক্টর জানাচ্ছেন, এখন তাঁদের হাতে রয়েছে অসাধরণ সব তথ্য, আগে যা কখনও পাওয়া যায়নি। তাতেই মঙ্গল অভিযানের ক্ষেত্রে কোন কোন দুর্বলতা রয়েছে, তার ছবিটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

‘বিগ বস’ জাতীয় টিভি রিয়ালিটি শো-এও বদ্ধ এলাকায় থাকতে হয়। কিন্তু মঙ্গলযাত্রার সঙ্গে তার বিপুল তফাত। জীবনের ঝুঁকি তার প্রথম। কাজ প্রচুর। আসতে পারে অনিশ্চিত অজানা পরিস্থিতি। ফলে ঘুমের ঘাটতি অবধারিত। সকলের থাকার জন্য জুটবে ছোট্ট ‘স্টুডিয়ো অ্যাপার্টমেন্ট’-এর মতো একটি ক্যাপসুল মাত্র। থাকার মেয়াদও অনেক দীর্ঘ। নয়া চ্যালেঞ্জ, যোগাযোগের সমস্যা। মঙ্গলে গিয়ে বা ২৫ কোটি মাইল যাওয়া-আসার পথে পৃথিবীতে কন্ট্রোল সেন্টারে কোনও বার্তা পাঠালে ২০ মিনিটের আগে তার জবাব মিলবে না। সাইবার যুগে পৌঁছেও এটা ট্রাঙ্ক কল বুক করে অপেক্ষায় থাকার মতো।

মহাকাশ যাত্রায় এতটা বিলম্বে যোগাযোগের চ্যালেঞ্জ আগে কখনও নেননি নভোশ্চরেরা। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক ভাবে কোনও সাহায্য পাওয়ার আশা ছেড়েই পাড়ি দিতে হবে। মনের উপরে এ এক বড় চাপ। সেই চাপ কতটা, ৪৫ দিন করে তার পরীক্ষা হয়েছে। এ বার পরীক্ষা ১২০ দিনের। ১৫ মার্চ থেকে যা শুরু হবে মস্কোর ‘সিরিয়াস (SIRIUS)’ অ্যানালগে। সেখানে চার জন রুশ ও দু’জন মার্কিন নাগরিক একসঙ্গে থাকবেন। তবে বদ্ধ জীবনটা তাঁদের কাছে হবে কার্যত চাঁদে যাওয়ার মতো। হুবহু সেই রকম অভিজ্ঞতা দেওয়া হবে তাঁদের। ‘যান নামাবেন’ চাঁদেও। এই মায়া-বাস্তবতার পথ পেরিয়েই মঙ্গলে যাওয়ার পাঠ নিচ্ছে মানুষ।

শেষ পর্যন্ত পাঠানো হবে কাদের?

নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লেসলি ডিচার্চ বললেন, ‘‘কার্যত অতিমানবদের। যাদের থাকবে অসাধারণ শারীরিক ক্ষমতা, সঙ্গে ক্ষুরধার বুদ্ধি। অত্যাধুনিক বাছাই ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা চারিত্রক গঠন, প্রবণতা, মূল্যবোধগুলি যাচাই করছি। এর ভিত্তিতে নাসা বেছে নিতে পারবে সম্ভাব্য মঙ্গলযাত্রীদের।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy